বাংলারজমিন
সিলেটে সরফের কুকীর্তির বিচার চাইলেন রিনা
স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
২৬ জানুয়ারি ২০২৫, রবিবার
সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার কদমরসুল গ্রামের কবিরাজ সরফ ফকির পিয়াশাহ’র বিরুদ্ধে বহুবিয়ে এবং স্ত্রীদের দিয়ে মিথ্যা মামলা করিয়ে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। শনিবার সিলেট জেলা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এই অভিযোগ আনেন তার প্রাক্তন স্ত্রী রিনা বেগম। সরফ কদমরসুল গ্রামের কালা মিয়ার ছেলে। সংবাদ সম্মেলনে রিনা বেগম লিখিত অভিযোগ পড়ে শোনান রিনা বেগম। তাতে উল্লেখ করেন, কথিত কবিরাজ সরফ ফকির পিয়াশাহ ওরফে ক্রস মোল্লা একজন লম্পট, দুশ্চরিত্রবান, নারীলোভী, বহু বিবাহকারী। শারীরিক চিকিৎসা (কবিরাজি) করার জন্য সরফ ফকির পিয়াশাহ ওরফে ক্রস মোল্লার সন্ধান পেয়ে তার কাছে যান। এই পরিচয়ের সুবাদে তার সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে তাকে বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে ২০১৪ সালে বিয়ে করে। এরপর তার ঔরসজাত ৯ বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। পরবর্তীতে জানতে পারেন তিনি ক্রস মোল্লার ৪র্থ স্ত্রী। বিয়ের পর তার আসল চরিত্র আমার কাছে ধরা পড়তে থাকে। তাকেসহ অন্য স্ত্রীদের চাপে ফেলে সমাজের ভালো মানুষের বিরুদ্ধে মামলা করে পরবর্তীতে টাকার বিনিময়ে আপসে নিষ্পত্তি করা নেশা ও পেশাতে পরিণত হয়েছে। ক্রস মোল্লা কাবিন বহির্ভূতভাবে তাকেসহ ১৪টি বিয়ে করে। লিখিত অভিযোগে রিনা বেগম আরও বলেন, ক্রস মোল্লা তাকে দিয়ে দেহ ব্যবসা করাতে চেষ্টা করে। এ ইস্যুতে নির্যাতন করতে থাকলে ধৈর্যহারা হয়ে ক্রস মোল্লার সংসার ছেড়ে চলে যাই।
পিতা-মাতা, ভাই-বোনহীন অবস্থায় পরের বাড়িতে ঝি-এর কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। পরবর্তীতে ইসমাইল উদ্দিন ওরফে রুবেল আহমদের সঙ্গে পরিচয় থেকে বিয়ে হয়। বর্তমানে ৩ বছরের একটি পুত্র সন্তানও রয়েছে। এই সংসারে সুখে শান্তিতে থাকলেও পিছু ছাড়েনি মামলাবাজ সরফ ফকির পিয়াশাহ ওরফে ক্রস মোল্লা। তার স্ত্রী থাকাবস্থায় শাহপরান (রহ.) থানায় ফুরকান আলী গংদের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ১২ই জানুয়ারি তাকে দিয়ে একটি মামলা দায়ের করতে বাধ্য করায়। ফুরকান আলী গংদের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন আইনে মামলাও দায়ের করায়। এরকম তার অন্য স্ত্রীদের দিয়ে অসংখ্য মিথ্যা মামলা করিয়ে নিরীহ লোকজনকে হয়রানি করে আসছে। যে কেউ তাকে টাকা দিয়ে মামলা করাতে পারে। এজন্য মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে আবার আপসে রফা করে ফেলে। বিগত ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের সময়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের হয়ে বিএনপি’র অসংখ্য নেতাকর্মীর বিরুদ্ধেও তার কাবিন বহির্ভূত স্ত্রীদের মামলা করায়। এসব মামলায় বিএনপি’র অনেক নেতাকর্মী জর্জরিত। ক্রস মোল্লার ফাঁদে অনেকে জেল খেটেছেন, খাটছেন। এটা কেবল সিলেটে নয়, বিভিন্ন জেলায়ও তার মামলার ঘানি টানছেন অনেকে। রিনা বেগম বলেন, ক্রস মোল্লার সংসার ছেড়ে আসায় আক্রোশের বশ্যিভূত হয়ে তার অন্য স্ত্রী গোলাপজানকে দিয়ে বর্তমান স্বামী রুবেল আহমদের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন মামলা করায়। ওই মামলার ৪নং আসামি তার স্বামী।
গত ১২ই জুন হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট থানায় ধর্ষণের অভিযোগে মামলাটি দায়ের করা হয়। বর্তমানে আমার স্বামী রুবেল আহমদ ওই মামলায় হবিগঞ্জ জেলহাজতে আছেন। অথচ ঘটনাস্থল হবিগঞ্জের চুনারুঘাট দেখানো হলেও তার স্বামী রুবেল আহমদ ১০ বছরের মধ্যেও সেখানে যাননি। একই মামলায় জৈন্তাপুরের ১নং নিজপাট ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের সদস্য মামুনুর রশীদকেও ওই মামলায় গ্রেপ্তার করে র্যাব। স্বামীর গ্রেপ্তার সইতে না পেরে ইউপি সদস্য মামুনুর রশীদের স্ত্রী অবুঝ দুই সন্তানের জননী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। পরে মামুনুর রশিদ প্যারোলে এসে স্ত্রীর জানাজায় অংশ নেন। রিনা বেগম কথিত কবিরাজের স্ত্রীদের মধ্যে কয়েকজনের নাম প্রকাশ করেন। তারা হলেন- নাজমীন আক্তার, আয়শা বেগম জেনি, হুসনে আরা, নাজমা বেগম, রিনা বেগম, শাবানা ও গোলাপজান। এ ছাড়াও তাবিজ কবজের ভণ্ডামি করে অসংখ্য নারীদের অসহায়ত্ব নিয়েও ফাঁদে ফেলে কাবিন বহির্ভূত বিয়ে করেছেন ক্রস মোল্লা। অসহায় মহিলাদের ফাঁদে ফেলে কাবিন বহির্ভূতভাবে বিয়ে করে দেহ ব্যবসা করাতে বাধ্য করায়। তাছাড়া কারও সঙ্গে শত্রুতা থাকলে স্ত্রীদের ব্যবহার করে ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়। ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় জড়িতদের রেহাই পেতে সিলেটের পুলিশ কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজিসহ বিভিন্ন দপ্তরে দরখাস্ত দিয়েছেন তিনি।