খেলা
‘বিপিএল শেষ হলেই বাঁচি’, ফিক্সিং গুঞ্জনে অস্বস্তিতে ক্রিকেটাররা
স্পোর্টস রিপোর্টার
২৬ জানুয়ারি ২০২৫, রবিবার
‘এখন একটা বড় ওয়াইড হলেই ভয় লাগে, কেউ না আবার আমাকে নিয়ে সন্দেহ করে’- বলছিলেন এবারের বিপিএল খেলা এক স্পিনার। চলতি বিপিএলে ফিক্সিংয়ের গুঞ্জন নিয়ে ক্রিকেটাররাই আছেন অস্বস্তিতে। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল) প্রথম দুই আসর কলঙ্কিত হয়েছিল ফিক্সিং কাণ্ডে। এতে এক বছর বন্ধও থাকে আসরটি। এরপর নানা বিতর্ক সঙ্গী হলেও ধারাবাহিকভাবে বিপিএল আয়োজন করেছে বিসিবি। এই কয় আসরে ফিক্সিং নিয়ে তেমন জোড়ালো গুঞ্জন শোনা যায়নি। তবে এবার যেন সন্দেহের ডালপালা মেলেছে। প্রতিদিনই এ নিয়ে সংবাদ হচ্ছে। আর এতে অস্বস্তিতে পড়েছেন ক্রিকেটাররা। বিশ্বজুড়ে এখন ফ্র্যাঞ্জাইজি ক্রিকেটের দাপট। নতুন করে টি-টেন টুর্নামেন্টও হচ্ছে কয়েক বছর ধরে। এ আসরগুলোতে স্পট ফিক্সিংয়ের গুঞ্জন থাকে, অনেক সময় ধরাও পড়েন ক্রিকেটার থেকে কোচ এমনকি দলের মালিকরাও। বিপিএলেও প্রথম দুই আসরে ফিক্সিং কাণ্ডে কলঙ্কিত হয়। মোহাম্মদ আশরাফুলের মতো ক্রিকেটার নিষিদ্ধ হন স্পট ফিক্সিংয়ে দায়ে।
এরপর গেলো কয়েক আসরেও গুঞ্জন ছিল, তবে এবারের মতো এত জোরালো নয়। এত সন্দেহজনক ঘটনাও ছিল না। একজন স্পিনার টানা ৪টা ওয়াইড দিচ্ছেন, তার মধ্যে ২টা আবার পাশের উইকেটে গিয়ে পড়েছে এমন ঘটনাও দেখা যায়নি। আবার এক পেসার টানা কয়েক ম্যাচে নিজের প্রথম ওভারে ১৬ থেকে ২০ রান দিচ্ছেন নিয়মিত, ওয়াইড করছেন পাশের উইকেটে! সবমিলিয়ে পত্রিকার পাতায় এখন বিপিএলে ফিক্সিংয়ের গুঞ্জনই জায়গা দখল করছে। এর মধ্যে কয়েকজন ক্রিকেটারকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে, যদিও বিসিবি’র দুর্নীতিবিরোধী ইউনিট এ বিষয়ে কিছু জানাতে অপরাগতা প্রকাশ করে। তবে অনেক ক্রিকেটারই এখন আতশ কাচের নিচে, এ বিষয়ে নিশ্চিত করেছে বেশ কয়েকটি সূত্র। একই সূত্র জানায়, জাতীয় দলের একজন ক্রিকেটার নাকি প্রস্তাব পেয়েছেন ফিক্সিংয়ের। সেটা জানানোর পর তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, আলাদা হোটেলেও ছিলেন দু’দিন। বাইরে যখন ফিক্সিং গুঞ্জনে ভরপুর তখন ক্রিকেটারদের মানসিক অবস্থা কেমন, সেটা জানতে যোগাযোগ করা হয় কয়েকজন ক্রিকেটারের সঙ্গে। এ নিয়ে শুরুতে কেউই কথা বলতে চাননি, পরে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন কথা বলেন। একজন স্পিনার বলেন, ‘কী বলবো, প্রমান ছাড়া কিছু বললে তো আমিও সন্দেহের তালিকায় পড়ে যাবো। আর চোখের সামনে এত বড় বড় ওয়াইড হলেও সন্দেহ জাগে। কিন্তু প্রমাণ তো নেই। ফলে চুপ করে দেখা ছাড়া আর কী করার।’
আরেক দলের এক ব্যাটার বলেন, ‘আমার ভালো লাগছিল বাজে বল পাচ্ছিলাম কিন্তু সেটা যখন টানা পাচ্ছিলাম তখন কিছুটা সংশয় হয়। তবে এ নিয়ে ভাবিনি, কিছুটা অস্বস্তি তো হয়ই এমন সময়।’ আরেক ক্রিকেটার বলেন এত ফিক্সিংয়ের গুঞ্জন প্রভাব ফেলছে স্বাভাবিক খেলাতেও। তিনি বলেন, ‘এখন তো আমরাই উলটো ভয়ে আছি। দেখা গেলো একটা বড় ওয়াইড হলো বা এক ওভারে বেশি রান দিয়ে ফেললাম তখন তো আমাকে নিয়েই গুঞ্জন শুরু হয়ে যাবে। কিন্তু যারা টানা করছে তাদের জন্য বাকিরাও এখন অস্বস্তিতে। সবমিলিয়ে এখন টুর্নামেন্টটা শেষ হলেই বাঁচি।’ এবারের বিপিএলে এখন পর্যন্ত ম্যাচ হয়েছে ৩২টি, যেখানে ক্যাচ পড়েছে প্রায় ৭০টি। এমন ক্যাচও ফেলেছেন ক্রিকেটাররা, যেটা ধরার চেয়ে ফেলাই কঠিন।
অথচ বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ এবার শুরু থেকেই গাইলেন, ‘নতুন বিপিএল’-এর গান। তার সঙ্গে সুর মেলালেন বাকি পরিচালকরাও। অথচ মাঠে দেখা গেলো নতুন বিপিএল নয়, সেই আগের চিত্র। ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক না দেওয়া, ফিক্সিংয়ের গুঞ্জন আগের সবই আছে।