বাংলারজমিন
বান্দরবানে মিবাক্ষ্যং হেডম্যানের অত্যাচারে অতিষ্ঠ স্থানীয়রা
বান্দরবান প্রতিনিধি
২৫ জানুয়ারি ২০২৫, শনিবারগ্রামপ্রধান (কারবারি) হতে চাইলে টাকা নিয়ে আসেন, মদ নিয়ে আসেন, টগবগে দেশি মুরগি নিয়ে আসেন। সবকিছু নিয়ে যাওয়ার পর হেডম্যান মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে গ্রামপ্রধানের দায়িত্ব দেন অপরজনকে। শুধু তাই নয়, মৌজাবাসীদের মধ্যে দল ভাগ করার পাশাপাশি নিজের পক্ষপাত মানুষকে দিয়ে গ্রামগুলোতে বিবাদ তৈরি করে রাখেন। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ পুরো মৌজা বাসিন্দারা। বিভিন্ন গ্রাম থেকে অর্থ লেনদেন, জোরপূর্বকভাবে গাছ কর্তন ও গ্রামবাসিন্দাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডাসহ বিভিন্ন অপকর্মে অভিযোগ উঠেছে ৩৬৮ নম্বর মিবাক্ষ্যং মৌজার হেডম্যান অংসাথুই মারমার বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, হেডম্যান অংসাথুই মারমা দীর্ঘ বছর ধরে গ্রামবাসীদের অত্যাচার করে আসছিলেন। জায়গা দখল, টাকা ঘুষসহ নানা অপকর্ম করে গ্রামবাসীদের মাঝে বিরোধ সৃষ্টি করেছিল। বর্তমানে এসব অপরাধমূলক কার্যকলাপ চলমান রেখেছেন তিনি। এসব বিষয়ে প্রশাসন ও রাজার নিকট অভিযোগ দিলেও কোনো সুরাহা মেলেনি। বরং তাদের ক্ষমতা দেখিয়ে আরও বেশি মৌজাবাসিন্দাদের বর্বরতা অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। জানা গেছে, মৌজা হেডম্যান নিয়োগ হওয়ার পর তিনি গত ১৭ বছর ধরে নিজের মৌজায় ১৩টি গ্রামের সাধারণ মানুষকে জিম্মায় রেখেছেন। অন্যায়, অত্যাচার, মোটা অঙ্কে ঘুষ আদান-প্রদানসহ পাহাড় সমান অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। কিন্তু গ্রামবাসীরা অত্যাচার থেকে মুক্তি পেতে বিভিন্ন স্থানে দ্বারস্থ হলেও পাননি সুরাহা। বরং তাদের খুন, গুম ও অপহরণের ভয় দেখিয়ে আসছেন বহুদিন ধরে। এক পর্যায়ের ১৩টি গ্রাম বিচার পাওয়ার দাবিতে একত্রিত হলেও বোমাং রাজার যোগসাজশে ছাড় পেয়ে যান। গ্রামবাসীরা জানান, দীর্ঘ বছর ধরে হেডম্যানের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন তারা। তার অপকর্মে পাহাড় সমান অভিযোগ থাকলেও মুখ ফুটে বলার সাহস পান না কেউ। এসব বিষয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে জোরপূর্বকভাবে জায়গা দখল, হেডম্যান সনদ আটকে রাখার পাশাপাশি হয়রানি করতেন তিনি। তাছাড়া হেডম্যানের কাছে বাবার ওয়ারিশ সূত্রে গ্রামপ্রধান হতে গেলে মানতে হবে শর্ত। তার কাছে দিতে হবে এক লাখ টাকা, প্রজাদের কোনো বিবাদ সৃষ্টি হলে হেডম্যানের পক্ষে থাকতে হবে সমর্থন ও হেডম্যানে প্রজাদের ওপর অত্যাচার করা হলে প্রতিবাদ করা যাবে না। সেসব শর্ত না মানলে গ্রামবাসীদের মাঝে লাগিয়ে দেন বিবাদের সৃষ্টি। ভুক্তভোগী রুনাজম পাড়া, কামশিং পাড়া ও হরিশচন্দ্র ত্রিপুড়া পাড়া কারবারী হাঁনারাম, সাদিজম ও অংছাই খুমী গ্রামপ্রধান (কারবারি) জানান, অধিকার থেকে তাদের বাবা কারবারি (গ্রামপ্রধান) দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। বাবার মৃত্যুর পর ওয়ারিশ হিসেবে তারাই গ্রামপ্রধান হবেন। কিন্তু মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে অন্যজনকে কারবারি দিয়ে দেন। তারা জানান, হেডম্যান কোনো নোটিশ ছাড়া ইচ্ছেমতো গ্রাম প্রধানদের পাল্টান। এ বিষয়ে হেডম্যান অংসাথুই মারমা মুঠোফোনে বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে সবগুলো মিথ্যা। হেডম্যানের ক্ষমতার অপব্যবহার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি মুঠোফোনটি কেটে দেন। বোমাং রাজার কার্যালয়ের সচিব অংক্যজাই খেয়াং বলেন, হেডম্যানের বিরুদ্ধে এই নিয়ে ভুক্তভোগীরা দু’বার অভিযোগ দিয়েছে। সেসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে সাতদিনের জবাব দেয়ার জন্য নোটিশ দেয়া হয়েছে। জবাব পেলে পুনরায় ভুক্তভোগীদের নিয়ে বিচার বসা হবে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি বলেন, আমার কাছে এলাকাবাসীর পক্ষে থেকে একটা অভিযোগ এসেছে। তদন্ত করে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।