ঢাকা, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, শুক্রবার, ১ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ শাবান ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

পানামা ক্যানেল দখলের হুমকি ট্রাম্পের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান পানামা-চীনের

মানবজমিন ডেস্ক
২৪ জানুয়ারি ২০২৫, শুক্রবারmzamin

পানামা ক্যানেল ও চীনকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প কড়া সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, পানামা ক্যানেল পরিচালনা করছে চীন। আমরা এটা চীনের হাতে তুলে দিই নি। এটা আমরা দিয়েছি পানামার হাতে। আমরা সেটাকে নিয়ে নেবো। ট্রাম্পের এই বক্তব্যকে ঘিরে রাজনৈতিক মহল সরগরম হয়ে উঠেছে। শুধু পানামা ক্যানেলই নয়, গালফ অব মেক্সিকো, গ্রিনল্যান্ড নিয়ে তার বিতর্কিত মন্তব্য ভাবিয়ে তুলেছে সচেতন মহলকে। কিন্তু পানামা ক্যানেল কি আসলেই চীন পরিচালনা করে? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে অনলাইন বিবিসি লিখেছে- ৫১ মাইল পানামা ক্যানেল মধ্য আমেরিকার এই দেশকে আলাদা করেছে। আটলান্টিক এবং প্রশান্ত মহাসাগরকে সংযুক্ত করেছে। প্রতি বছর সংক্ষিপ্ত পথে যাত্রা করতে এই প্রণালী ব্যবহার করে কমপক্ষে ১৪ হাজার জাহাজ। তবে এই ক্যানেল নির্মাণের আগে জাহাজগুলোকে দীর্ঘ পথ ঘুরে দক্ষিণ আমেরিকা অতিক্রম করে তবেই চলাচল করতে হতো। তাতে খরচ পড়তো অনেক বেশি। ২০শে জানুয়ারি উদ্বোধনী বক্তব্যের সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শুধু প্রথমবারই মধ্য আমেরিকার দেশ পানামা এবং আন্তঃমহাসাগর বিষয়ক ক্যানেল নিয়ে মন্তব্য করেছেন এমন নয়। ২৫শে ডিসেম্বর বড়দিনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রাম্প এক পোস্টে বলেছেন, চীনের সেনারা বিস্ময়করভাবে চমৎকারভাবে, কিন্তু অবৈধভাবে পানামা ক্যানেল পরিচালনা করছে। তবে তার এ অভিযোগ দ্রুততার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেছেন পানামা সিটি এবং বেইজিংয়ের কর্মকর্তারা। ওই সময় পানামার প্রেসিডেন্ট হোসে রাউল মুলিনো এমন দাবিকে বাজে কথা বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, পানামা ক্যানেলে একেবারেই চীনা হস্তক্ষেপ নেই। উল্লেখ্য, এই ক্যানেলটিকে জোর প্রয়োগ করে হলেও দখল করার হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। তার অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজগুলো থেকে কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত ফি আদায় করে। পানামা কর্তৃপক্ষ এ অভিযোগও প্রত্যাখ্যান করেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভাষণের পর প্রেসিডেন্ট মুলিনো আবার জোর দিয়ে বলেছেন, পালামা ক্যানেলে বিশ্বের কোনো দেশের উপস্থিতি নেই। কোনো দেশ আমাদের প্রশাসনে হস্তক্ষেপ করে না। বিশ্বে সমুদ্রপথে যে পরিমাণ বাণিজ্য পরিচালনা হয় তার মধ্যে এই কৌশলগত পানিপথে হয় শতকরা প্রায় ৫ ভাগ বাণিজ্য। এই পথ পরিচালনা করে পানামা ক্যানেল অথরিটি। এটি পানামা সরকারের একটি এজেন্সি। এতে চীনের কোনো  সেনাসদস্য নেই। তবে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কর্মকর্তার এমন সব দাবি নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।  

পানামা ক্যানেলের ইতিহাস: ঐতিহাসিকভাবে এই পানিপথ নির্মাণে এবং প্রশাসনিক ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। প্রথমে এই পানিপথ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় ফরাসি সরকার। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এ প্রকল্প তাদের অধিকারে নিয়ে নেয়। ক্যানেলটির নির্মাণ সম্পন্ন হয় ১৯১৪ সালে। ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত এই ক্যানেল যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে থাকে। ওই সময় পানামার সঙ্গে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ও প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার। সেই চুক্তিতে পানামার কাছে আস্তে আস্তে পানিপথটি তুলে দেয়ার কথা বলা হয়। জিমি কার্টারের এই চুক্তিকে ডনাল্ড ট্রাম্প ‘বোকামি’ বলে অভিহিত করেছেন। ১৯৯৯ সাল থেকে পানামা ক্যানেল অথরিটি এই পানিপথের এক্সক্লুসিভ নিয়ন্ত্রণ হাতে পায়। স্বাক্ষরিত চুক্তিতে বলা হয়, এই পানিপথ স্থায়ীভাবে নিরপেক্ষ থাকবে। কিন্তু এই চুক্তির অধীনে এই পানিপথে সামরিক শক্তি ব্যবহার করে যেকোনো হুমকি মোকাবিলার অধিকার রাখে যুক্তরাষ্ট্র। 

কেন এলো চীনের নাম: তবে পানামা ক্যানেল নিয়ন্ত্রণে চীন সরকারের বা সামরিক কোনো উদ্যোগের পক্ষে প্রকাশ্য কোনো তথ্যপ্রমাণ নেই। তবে ওই এলাকায় চীনের বিভিন্ন কোম্পানির উপস্থিতি আছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই ক্যানেল দিয়ে শতকরা ২১.৪ ভাগ কার্গো অতিক্রম করেছে চীনের। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের পর এই ক্যানেল ব্যবহারে দ্বিতীয় অবস্থানে চলে এসেছে চীন। এই ক্যানেল বরাবর আছে ৫টি বন্দর। তার মধ্যে দু’টি বন্দর হলো বালবোয়া এবং ক্রিস্টোবাল। এর অবস্থান প্রশান্ত ও আটলান্টিকের পাশে। ১৯৯৭ সাল থেকে হাচিসন পোর্ট হোল্ডিংসের একটি সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান এটি পরিচালনা করছে। এটি সিকে হাচিসন হোল্ডিংস-হংকংভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। এর মূল মালিকানা হংকংভিত্তিক ব্যবসায়ী লি কা-শিং। বৃটেন সহ ২৪টি দেশে বন্দর অপারেশনে কাজ করে তারা। তবে এই প্রতিষ্ঠানটি চীন রাষ্ট্রের মালিকানাধীন নয়। এ কথা বলেছেন সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের আমেরিকাস প্রোগ্রামের পরিচালক রিয়ান বার্গ। তবে ওয়াশিংটনে এ নিয়ে উদ্বেগ হলো- এই কোম্পানির ওপর কতোটা চাপ প্রয়োগ করতে সক্ষম হবে বেইজিং। 
 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status