শেষের পাতা
‘জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বের কথা শুনে বিএনপি’র কর্মী হিসেবে গর্ব অনুভব করি’
স্টাফ রিপোর্টার
২০ জানুয়ারি ২০২৫, সোমবার
সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বের কথা শুনে বিএনপি’র একজন কর্মী হিসেবে গর্ব অনুভব করেন বলে জানিয়েছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা প্রত্যেকেই একেকজন রাজনৈতিক কর্মী, রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমরা গর্ব অনুভব করি। আমরা গর্ব অনুভব করি, আজকে আলোচনায় শুনছিলাম- শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যখন দেশ পরিচালনা করেছেন, উনার নেতৃত্বে দেশ এবং জাতি কী কী অর্জন করেছিলেন। এই কথাগুলো যখন আমরা বলি, বিএনপি’র একজন কর্মী হিসেবে প্রত্যেকটি কর্মী গর্ব অনুভব করি।
গতকাল রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের মিলনায়তনে বিএনপি’র উদ্যোগে ‘মহান স্বাধীনতার ঘোষক, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে’ এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় জিয়াউর রহমানকে নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। ডকুমেন্টারি তৈরি করেছেন তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন।
সভায় মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদের একটি বক্তব্যে তার নির্বাচনী এলাকায় মোটরসাইকেল শোডাউনের কথা উল্লেখ করে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ৫ তারিখের পর থেকে এ রকম মানুষগুলো আস্তে আস্তে ভিড় করা শুরু করেছে। বিএনপি’র প্রত্যেকটি কর্মী বিগত ১৬ বছর অত্যাচারিত ও নির্যাতিত হয়েছেন। জেলের ভেতরে হাতকড়া অবস্থায় কীভাবে মারা গেছেন। এই ঘটনা ও দৃশ্যগুলো নিশ্চয় আপনারা ভুলে যাননি। যদি ভুলে গিয়ে না থাকেন তাহলে কেন এই মানুষগুলোকে আমরা আমাদের আশেপাশে ভিড় করতে দেবো?
তিনি বলেন, ওই যে মোটরসাইকেল বহর, আপনারা বিগত ১৬ থেকে ১৭ বছর অনেক ধরনের নির্যাতিত হয়েছেন। বিএনপি’র ৬০ লাখ নেতাকর্মীর নামে বিভিন্ন মিথ্যা ও গায়েবি মামলা। শুধুমাত্র জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে বিএনপি’র প্রায় ৫০০ নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন। বহু হাজার নেতাকর্মী বিভিন্নভাবে জখম হয়েছেন। আমরা কি ওই মোটরসাইকেল বহরে যারা, তাদেরকে সুবিধা দেয়ার জন্য এই অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেছি? অবশ্যই নয়।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তারেক রহমান বলেন, কারা (সরকার) চলে আসবে আমরা জানি না! কিন্তু আর যাই হোক সেটা আপনাদের (বিএনপি’র নেতাকর্মী) কারও জন্য ভালো হবে না। আমাদের কারও জন্য ভালো হবে না। আমি আপনাদের প্রতি অনুরোধ করবো, আপনারা ওই মোটরসাইকেলরাদের ভিড় করতে দেবেন না। দয়া করে আপনারা কোনো বিভ্রান্তকর কাজ করা থেকে বিরত থাকুন। সবাই বলেন, একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি’র সর্বোচ্চ সম্ভাবনা আছে সরকার গঠন করার। আমি আপনাদের কাছে একটি প্রশ্ন রাখতে চাই, ওই মোটরসাইকেলরাদের নিজ স্বার্থ উদ্ধারের জন্য কিংবা আমাদের কিছু নেতাকর্মীদের বিভ্রান্তের জন্য যদি এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়, এখানে অন্য কেউ সরকার গঠন করলে তাহলে কি আপনি মনে করেন, আপনি খুব ভালো থাকতে পারবেন? আপনি কি মনে করেন- আমি এবং আপনি ভালো থাকতে পারবো। বাংলাদেশে যদি ১ কোটি বিএনপি’র নেতাকর্মী থাকে। আমি এক কোটি মানুষকেই বলছি। আপনারা কি ভালো থাকতে পারবেন?
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, কোনো কারণে যদি অন্য কেউ সরকার গঠন করে, একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আপনার ভেতরে এতটুকু চিন্তা থাকতে হবে, অন্য কেউ যদি সরকার গঠন করে, সেটা বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেই হোক, আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেই হোক- সেটা কি দেশ এবং জাতির জন্য খুব ভালো হবে? তাই এখনো আমাদের সময় আছে, মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়ান। কারণ দিন শেষে ভোটারের কাছে আপনাকে যেতে হবে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আপনারা যত সহজ ভাবছেন সামনের নির্বাচন এত সহজ নয়। বিএনপি’র তো শাখা-প্রশাখা গ্রাম পর্যন্ত আছে। অন্যদের তো নেই। এত বড়াইয়ের কিছু নেই। তারপরও জনগণ ম্যাটার। জনগণই হচ্ছে আমাদের শক্তি। সুতরাং আমরা যদি আবার একটা ভুল করি, তখন জনগণ কিন্তু আবার একটা কিছু দেখিয়ে দেবেন, তখন কিন্তু পস্তাতে হবে। এখনো সময় আছে, জনগণের পাশে থাকি, জনগণের সঙ্গে থাকি।
সভাপতির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে সংস্কারের কথা বলা হয়। সংস্কার তো জিয়াউর রহমান সাহেব শুরু করেছিলেন। রাজনৈতিক সংস্কারটা ছিল তার সবচেয়ে বড় সংস্কার। যেটা একদলীয় শাসন ব্যবস্থা থেকে বহদলীয় শাসন ব্যবস্থায় তিনি নিয়ে এসেছিলেন।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আজকে দেশের যে অবস্থা, এই অবস্থায় দেশের মানুষের প্রত্যাশা রয়েছে যে শহীদ জিয়াউর রহমানের দল বিএনপি তাদের এই প্রত্যাশাকে বাস্তবায়ন করতে পারবে। আর অনেকে বলতে চান যে, শুধু জুলাই-আগস্টে আন্দোলনে শেখ হাসিনা ফ্যাসিস্টের পতন হয়েছে। এটা সঠিক না। আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করেছি। আমাদের এমন কেউ নেই যারা জেল খাটেনি এবং জুলুম ও নির্যাতনের স্বীকার হননি। কেন তাহলে আমরা ১৬-১৭ বছর আন্দোলন করলাম। আমরা বলবো, এটা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করুন। সুতরাং দীর্ঘ আন্দোলনের ফসল এই অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকার একটু সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে বিদায় নেবে। তাহলে দেশ ও জনগণের জন্য মঙ্গল হবে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, আজকে আমরা সংস্কারের কথা বলছি। সংস্কার চলতে থাকবে। আমরা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে এদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবো। আর আমরা ক্ষমতার জন্য রাজনীতি করিনি। দেশের মানুষের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার রাজনীতি করেছি। সুতরাং আজকে কথা বলার সময় নেই। আমরা আজ শপথ নিচ্ছি, এদেশের মানুষের গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেবো।
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আজকে আমরা সংস্কারের কথা বলি। সংস্কারের মূল নায়ক হচ্ছেন জিয়াউর রহমান। আর রাজনীতিতে সততার বড় কিছু নেই। এটা দিয়েছেন জিয়াউর রহমান। সুতরাং বিএনপি’র কোনো নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যদি কোনো সততা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, তার বিএনপিতে থাকার কোনো অধিকার নেই।
স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, একদিকে আসমান থেকে টপকিয়ে ৫ই আগস্টে ফ্যাসিবাদের পতন হয়। ফ্যাসিবাদের ঐক্য ফাটল আমরা দেখছি। যেটা জাতির জন্য কল্যাণকর হবে না। আমি প্রধান উপদেষ্টাকে বলতে চাই, ঐক্যকে ধরে রাখতে যা কিছু করার করুন। আসুন কী কী সংস্কার দরকার, সেই আলোচনা আমরা করি। বেশি সময় লাগার তো কথা নয়। সুতরাং সংস্কার সংস্কার খেলা যেন না করি।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এসব স্লোগান দিয়ে কিছু হবে। এখানে স্লোগান দিয়ে কোনো কিছু হবে। কিছু হবে। এখন রাজপথে মোকাবিলা করতে এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মোকাবিলা করতে হবে। আর আমরা তিনবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়েছি, কিন্তু এই মহান নেতার কৃতিত্ব আমরা তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছি। আমরা সঠিক ভূমিকা পালন করতে পারি নাই। আর আমরা অবশ্যই একটি নির্বাচিত সরকার দেখতে চাই। এজন্য আমাদের করণীয় শহীদ জিয়ার পথ অনুসরণ করা উচিত।
বিএনপি’র প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক কবি আবদুল হাই শিকদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান, বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
পাঠকের মতামত
যারা আজকে ভারতের চামচামি করে সেগুলো বহিস্কার না করলে মানুষ ভোট দেবে না।