দেশ বিদেশ
সিলেট জেলা বারের নির্বাচনের ফলাফলে সন্তুষ্ট আওয়ামী লীগ
স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
১৯ জানুয়ারি ২০২৫, রবিবারজেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে কে হারলো, কে জিতলো এ নিয়ে আলোচনা সিলেটে। আওয়ামী লীগের নেতারা ফলাফলে সন্তুষ্ট। কারণ সিলেট জেলা বারের এবারের নির্বাচনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে জয়ী হওয়া দু’জনই হচ্ছেন আওয়ামীপন্থি আইনজীবী। ফলে নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে উচ্ছ্বাস আওয়ামী লীগে। আর এটি প্রকাশ পেয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। একইসঙ্গে নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে বিএনপি’র মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। দলের নেতাকর্মীরা নানাভাবে সমালোচনায় বিদ্ধ করছেন দলের সিনিয়র নেতাদের। সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয়। গণনা শেষে শুক্রবার সকালে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। ফলাফলে দেখা গেছে, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক একাধিকবারের সভাপতি ও বিএনপি নেতা এটিএম ফয়েজ আওয়ামীপন্থি আইনজীবী সরওয়ার আহমদ চৌধুরী আব্দালের কাছে পরাজিত হয়েছেন। একইসঙ্গে সাধারণ সম্পাদক পদেও আইনজীবী ফোরামের সমর্থিত প্রার্থী মসরুর চৌধুরী শওকত পরাজিত হয়েছেন জোবায়ের বখত জুবেরের কাছে। ফলাফল ঘোষণার পর ভারতে অবস্থান করা সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন খান তার ফেসবুক আইডিতে নবনির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অভিনন্দন জানিয়েছেন। নাসির উদ্দিন খান নিজেও একজন আইনজীবী। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ, যুবলীগ সহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা তাদের শুভেচ্ছা জানান। অন্যদিকে, ফলাফল ঘোষণার পর বিএনপি’র নেতাদের সমালোচনা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন বিএনপি’র নেতাকর্মীরা। জেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের আহ্বায়ক আব্দুল আহাদ খান জামাল ফেসবুকে স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেছেন, ‘তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে নোংরা গ্রুপিং ও সিলেট জেলা বিএনপি’র শীর্ষ নেতৃত্বের আঁতাদের বিষয়টি। জেলা বিএনপি’র শীর্ষ পদে থেকেও কারা খুনি হাসিনার দোসরদের পক্ষে ভোট চেয়েছেন এবং ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন আদালত পাড়ায় তা দিবালোকের মতো স্পষ্ট। এদের মুখোশ উন্মোচন করে দলের সঙ্গে বিশ্বাস ঘাতকতাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।’ বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা জানিয়েছেন, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির এবারের নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মনোনীত সভাপতি প্রার্থী ছিলেন সাবেক পিপি নুরুল হক ও সাধারণ সম্পাদক পদে ছিলেন মসরুর চৌধুরী শওকত। কিন্তু সাবেক সভাপতি ও বিএনপি নেতা এটিএম ফয়েজ নির্বাচন থেকে সরে না যাওয়া জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতারা শেষ পর্যন্ত প্রবীণ আইনজীবী এডভোকেট নুরুল হককে নির্বাচন থেকে সরিয়ে নেন। এতে করে এটিএম ফয়েজকে নিয়ে ফোরাম আইনজীবীদের একাংশের ভেতরে ক্ষোভ ছিল। সাধারণ সম্পাদক নিয়ে তাদের মধ্যে কোনো মতবিরোধ ছিল না। তবে কেন এই ফলাফল? এ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে আইনজীবীদের মধ্যে। এজন্য তারা কয়েক মাসের আগে পাবলিক প্রসিকিউটর কেন্দ্রিক বিরোধকে সামনে আনছেন। তবে কয়েকজন প্রবীণ আইনজীবী জানান, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন কখনোই দলীয় মোড়কে হয় না। যেকোনো দল সমর্থন দিলে ফলাফল হয় উল্টো। ফলে জাতীয়বাদী আইনজীবী ফোরামের নেতারা কৌশলী ভূমিকায় গিয়েও সাধারণ সম্পাদক পদে শেষ পর্যন্ত জয় নিতে পারেননি। অন্যদিকে, প্রায় সময় বিরোধী মতের আইনজীবীরাও জয়লাভ করেন। যেমন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে বিএনপি নেতা হয়েও তিনবার জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন এটিএম ফয়েজ। তারা জানান, এবার নির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রতি সব মতের আইনজীবীদের সহানুভূতি কাজ করেছে। এর আগে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি পদে তিনবার প্রার্থী হলেও জয়ী হতে পারেননি এডভোকেট আব্দাল। চতুর্থবারের মতো প্রার্থী হয়ে তিনি জয়লাভ করেন। একইভাবে সাধারণ সম্পাদক পদে এডভোকেট জুবায়ের দুইবার প্রার্থী হয়েছিলেন। তিনবারের সময় এসে তিনি জয়লাভ করেন। ফলে সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতিতে দলীয় বিবেচনায় ভোট অতীত থেকেও হচ্ছে না। যারা দলের আমেজকে কাজে লাগাতে চায় বরং তারা সব সময় পরাজিত হয়েছে।
সিলেট জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক বদরুল আহমদ চৌধুরী গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানায়, পিপি কেন্দ্রিক সমস্যার কারণে সভাপতি পদে ভোটে হেরফের হয়েছে। কিন্তু আমরা সাধারণ সম্পাদক পদে জয়ের জন্য আশাবাদী ছিলাম। কেন এমন ফলাফল হলো এ নিয়ে ভাবছি। সমস্যা কোথায় সেটি খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। ভবিষ্যতে যাতে আর কোনো সমস্যা না হয় সে ব্যাপারে আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে। সিলেট জেলা বিএনপি’র যুগ্ম সম্পাদক এডভোকেট হাসান পাটওয়ারী রিপন জানান, নির্বাচনে সমন্বয়হীনতার অভাব ছিল। অনেক প্রার্থীই কথা শোনেননি। দিনশেষে ফলাফল যা হওয়ার তাই হয়েছে। এতে আমরা বিচলিত নই। বরং এবারের ফলাফল থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা আগামী জয়ের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবো।