খেলা
দুই কোচের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন
শৃঙ্খলা ফেরাতে চান বাটলার, কাবরেরা চান সুযোগ কাজে লাগাতে
স্পোর্টস রিপোর্টার
১৮ জানুয়ারি ২০২৫, শনিবার
গত বছর ৩১শে ডিসেম্বর চুক্তি শেষ হয়েছে বাংলাদেশ নারী এবং পুরুষ ফুটবল দলের দুই কোচের। আর দু’জনের সঙ্গেই চুক্তি নবায়ন করেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। পুরুষ ফুটবল দলের কোচ হাভিয়ের কাবরেরার সঙ্গে ২০২৬ সালের ৩০শে এপ্রিল পর্যন্ত চুক্তি নবায়ন করা হয়েছে। এছাড়া সাফ জয়ী কোচ পিটার বাটলারের সঙ্গে ২০২৬ সালের ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত চুক্তি নবায়ন করেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। চুক্তি নবায়ন করে দলে শৃঙ্খলা ফেরানোর কথা বলেছেন বাটলার। আর কাবরেরা চাইছেন সুযোগ কাজে লাগাতে। কাবরেরার চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকেই নানা গুঞ্জনের শুরু হয়। তার থাকা নিয়ে তৈরি হয় অনিশ্চয়তা। নতুন কোচের প্রোফাইল বাফুফে যাচাই-বাছাই করে দেখছে, এমন খবরও চাউর হয়। বেশ কয়েকজন কোচের সঙ্গে আলাপ করার কথাও জানিয়েছিলেন বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল। মোহামেডানের সাবেক কোচ শন লেনের কথাও শোনা যাচ্ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত তৃতীয় দফা কাবরোর সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করে বাফুফে। বর্তমানে ছুটিতে আছেন কাবরেরা। ভারতের সঙ্গে এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বের ম্যাচ দিয়ে তৃতীয় দফা কাজ শুরু করবেন এই স্প্যানিশ কোচ। এরিমধ্যে একটি কর্ম পরিকল্পনা ঠিক করেছেন এই স্প্যানিশ কোচ। জানাগেছে এই মাসের শেষের দিকে ঢাকা ফিরবেন তিনি। লীগের প্রথম লেগের শেষদিকে কিছু ম্যাচ মাঠে বসে দেখার পরিকল্পনা আছে তার। শিষ্যদের খেলা দেখেই ভারত ম্যাচের দল দেবেন কাবরেরা। তার অধীনেই প্রথম বারের মতো লাল সবুজের জার্সিতে দেখা যাবে হামজা চৌধুরীকে। ভারত ম্যাচের আগে সৌদি আরবে ২০ দিনের ক্যাম্প করবে বাংলাদেশ। সেখান থেকে সরাসরি ভারত যাওয়ার কথা তপু-সোহেলদের। ভারত ম্যাচের পরিকল্পনা নিয়ে কাবরেরা মানবজমিনকে বলেন, ‘এরইমধ্যে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আমরা সৌদি আরবে ২০ দিনের কন্ডিশনিং ক্যাম্প করবো। আশা করছি সেখানে হামজাকেও পাওয়া যাবে। সৌদি থেকেই আমাদের ভারত যাওয়ার পরিকল্পনা আছে।’ শিলংয়ে আগামী ২৫শে মার্চ ভারতের সঙ্গে এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বের অ্যাওয়ে ম্যাচটি খেলবে বাংলাদেশ। নতুন চুক্তি নিয়ে কাবরেরা বলেন, ‘আসলে আমি খুবই আগ্রহী ছিলাম। ছেলেদের সঙ্গে কাজ করে ভালো লেগেছে। এছাড়া নতুন প্রেসিডেন্টও খুব আন্তরিক। আশা করি এবার বাংলাদেশকে ভালো কিছুই দিতে পারবো আমি।’ প্রথম দুই মেয়াদের কথা উল্লেখ করে কাবরেরা বলেন, ‘প্রথমবার আমি যখন বাংলাদেশে আসি, তখন বুঝতে বুঝতে সময় চলে যায়। তবে দ্বিতীয় মেয়াদে আমি চেষ্টা করেছি। ১৯ বছর পর সাফ ফুটবলের সেমিফাইনাল খেলেছি। বেশকিছু ভালো রেজাল্ট আছে আমাদের।’
এদিকে বিতর্ক ও নানা ঘটনার পর আরও এক বছরের জন্য জাতীয় নারী ফুটবল দলের কোচের দায়িত্ব নিয়েছেন পিটার বাটলার। নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জেতা এই কোচ আগামীতে দলে আরও শৃঙ্খলা আনতে চান। এ মুহূর্তে পরিবারের সঙ্গে ইংল্যান্ডে ছুটি কাটাচ্ছেন তিনি। ঢাকায় ফিরবেন চলতি জানুয়ারির শেষের দিকে। তার অনুপস্থিতিতে অবশ্য কাজ থেমে থাকছে না। এই ইংলিশ কোচ জানিয়েছেন, অনুশীলনের পরিকল্পনা সাজিয়েই তিনি ছুটি কাটাচ্ছেন। কাজে যোগ দিয়ে সাবিনা-মনিকা-মারিয়াদের আরও আগ্রাসী ও পেশাদার ফুটবলার হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করবেন। এ নিয়ে বাটলার বলেন, ‘আমার চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে, পেশাদারিত্বের উন্নতি ও শৃঙ্খলা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে খেলায় রোমাঞ্চ জাগানিয়া স্টাইল তৈরি করা। আরও উন্নতি করা এবং ২০২৪ সাল থেকে যে ঘরানায় আমরা খেলছি, সেটার ধারাবাহিকতা ধরে রাখা।’ আন্তর্জাতিক সার্কিটে বেশ অভিজ্ঞ বাটলার। একাধিক দেশের জাতীয় দলে কাজ করেছেন। শীর্ষ পর্যায়ের সেসব অভিজ্ঞতা এখানে কাজে লাগানোর কথা জানিয়ে বাটলার বলেন, ‘শীর্ষ পর্যায়ের ফুটবলে কাজ যে অভিজ্ঞতা আমার আছে, সেটা কেবল মেয়েদের ক্ষেত্রে কাজে লাগানো নয়, যদি প্রয়োজন পড়ে, তাহলে অনান্য ক্ষেত্রেও দীর্ঘমেয়াদে কাজে লাগাতে চাই আমি।’ অনান্য ক্ষেত্রে অবশ্য বাটলারের আপাতত ভূমিকা রাখার সুযোগ কমই। এলিট একাডেমির দায়িত্ব এরই মধ্যে গোলাম রব্বানী ছোটনের হাতে তুলে দিয়েছে বাফুফে। চুক্তি নবায়ন না হলেও পুরুষ দলের কোচ এখনও হাভিয়ের কাবরেরা, যদিও তার ভবিষ্যৎ নিয়ে আশা-শঙ্কা দুটোই আছে। ২০২৩ সালে বাটলার দায়িত্ব নেন বাফুফের এলিট একাডেমির। গত সেপ্টেম্বরে নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ছয় মাস আগে তার কাঁধে ওঠে নারী ফুটবল দলের ভার। সাফল্যের নিক্তিতে সে ভার তিনি বয়েছেন ভালোভাবেই। অল্প সময়ের মধ্যে দল গুছিয়ে নিয়ে বাংলাদেশকে এনে দেন মেয়েদের সাফের শিরোপা। তবে নেপালে আসর চলাকালেই সিনিয়র খেলোয়াড়দের সঙ্গে তার দ্বন্দ্বের খবর চাউর হয়। অভিযোগ আর পাল্টা অভিযোগে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে দলের পরিবেশ।
অবশ্য বিতর্কের ডামাডোলের মধ্যেই ফাইনালে নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়ে লক্ষ্যপূরণ করে নেয় বাংলাদেশ। ২০২২ সালে বাংলাদেশ প্রথমবার মেয়েদের সাফ শিরোপার স্বাদ পেয়েছিল গোলাম রব্বানী ছোটনের হাত ধরে। ২০২৪ সালে বাটলারের অধীনে দক্ষিণ এশিয়ার মেয়েদের ফুটবল শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট ধরে রাখে দল। ২০২৬ সালে হ্যাটট্রিক শিরোপা জয়ের লক্ষে বাটলারের ওপরই আস্থা রাখছে বাংলাদেশ।