বাংলারজমিন
কুমিল্লা মেডিকেল থেকে ‘অপ্রকৃতিস্থ’ শিশু নিখোঁজ
স্টাফ রিপোর্টার, কুমিল্লা থেকে
১৬ জানুয়ারি ২০২৫, বৃহস্পতিবারকুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করানোর পর খোঁজ মিলছে না ‘অপ্রকৃতিস্থ’ আচরণ করা এক শিশুর। অজ্ঞাত পরিচয়ের ১২ বছর বয়সী শিশুটিকে সোমবার দুপুরে লাকসাম থেকে উদ্ধারের পর রাতে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। কিন্তু মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে তাকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মো. মাসুদ পারভেজ বলেন, কোনো রোগী খুঁজে পাওয়া না গেলে ২৪ ঘণ্টা পর তাকে পলাতক ঘোষণা করি। এর বাইরে আর কিছুই করার নেই। তবে অভিভাবক বা স্বজন কেউ না থাকা অসুস্থ শিশুটির বিশেষায়িত যত্ন না নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এভাবে দায় এড়াতে পারে না বলে মনে করছেন সমাজকর্মীরা। লাকসাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, জলাতঙ্কের মতো অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত শিশুটি লাকসাম জগন্নাথ দিঘির পাড়ে কুকুরের মতো আচরণ করতে দেখা যায়। কুকুরের অনুকরণে হাঁটা ও চলাফেরা করছিল সে। এমনকি খাবার দিলেও হাত-পায়ে ভর দিয়ে চতুষ্পদী প্রাণীর মতোই খাচ্ছিল সে। একইসঙ্গে শব্দচয়নও ছিল কুকুরের মতো। শিশুটির অদ্ভুত আচরণে আতঙ্কিত ছিলেন স্থানীয় ও পথচারীরা। তার এই ধরনের আচরণের ভিডিও ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে লাকসাম উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা নাজিয়া বিনতে আলম শিশুটিকে উদ্ধার করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশুটিকে রেফার করেন তিনি।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নাজিয়া বিনতে আলম বলেন, ছেলেটি জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত নয়। আমরা যখন তাকে পেয়েছিÑ সে কথা বলতে পারেনি। যতটুকু ধারণা করা যাচ্ছে, সে মানসিক নির্যাতনের শিকার। লাকসামে চিকিৎসা সম্ভব নয় বিধায় আমরা তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠাই। পরে সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলা থেকে একজন পুলিশ কর্মকর্তা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন কর্মী শিশুটিকে মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগে এনে ভর্তি করিয়ে দিয়ে যায়।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, মেডিসিন বিভাগে শিশুটিকে প্রাথমিক চিকিৎসা ও খাবার দাবার দেয়ার পরে কিছুটা স্বাভাবিক আচরণ শুরু করলেও স্পষ্টভাবে কথা বলতে পারছিল না। মেডিসিন ওয়ার্ডের পুরুষ বিভাগের নার্সেস ইনচার্জ আইরিন আক্তার বলেন, তাকে ডাক্তাররা দেখে কিছু ওষুধপত্র দেয়ার পর সে স্বাভাবিক আচরণ করে। সে তখন দুই পায়ে হাঁটছিল। চিকিৎসকরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করেছে সে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তবে মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে তাকে আর দেখা যায়নি। স্টাফ অঞ্জলি রানী দাশ জানান, আমি তাকে দেখাশোনা করেছি। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত তাকে দেখেছি। দুপুর ২টার সময়ও একজন স্টাফ তাকে দেখেছে। এরপর শিফট বুঝিয়ে দেয়ার সময় তাকে আর খুঁজে পায়নি। ওয়ার্ডের নার্স ও আয়া থেকে শুরু করে বেশ কয়েকজন সদস্য তন্ন তন্ন করে খুঁজেছেন, কিন্তু কোথাও পাওয়া যায়নি শিশুটির সন্ধান।
তবে আশপাশের ভর্তি রোগীরা জানান, শিশুটিকে ভর্তি করানোর পরে দেয়া হয়নি কোনো বেড। সারারাত শিশুটি ছিল ফ্লোরে। দুপুর পর্যন্ত কেউ তার খোঁজখবরও নেয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেডিসিন ওয়ার্ডের দু’জন চিকিৎসক জানান, শিশুটি দীর্ঘদিন যাবৎ কোনো মানসিক বিপর্যয়ের মধ্যে যাচ্ছিল। এ কারণে সে অস্বাভাবিক আচরণ করে। এ ছাড়া সে বেশ ক্লান্ত এবং দুর্বল ছিল। তাকে জলাতঙ্ক বলে ভর্তি করানো হলেও সে হাসপাতালে ভর্তির পর পানি ও বিস্কুট খেয়ে স্বাভাবিকভাবেই আচরণ করছিল। জলাতঙ্ক আক্রান্ত বলে মনে হয়নি। এই চিকিৎসকরা বলেন, আরও কিছু সময় পর্যবেক্ষণ করা গেলে বোঝা যেত সে কী রোগে আক্রান্ত। তাকে কোনো মানসিক রোগের চিকিৎসক দেখালে বোঝা যেত। কিন্তু হঠাৎ করেই তাকে আর ওয়ার্ডে পাওয়া যায়নি।