বাংলারজমিন
ব্রহ্মপুত্র থেকে বছরে ৮ কোটি টাকার বালু লুট
চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
১২ জানুয়ারি ২০২৫, রবিবারকুড়িগ্রামের চিলমারীর ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে অবৈধভাবে চলছে বালু লুটের মহোৎসব। বছরে প্রায় ৮ কোটি টাকার বালি লুট করছে বালুখেকো সিন্ডিকেট। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বছরের পর বছর থেকে বালি লুটের মহোৎসব চলার সঙ্গে বেড়েই চলছে অবৈধ ড্রেজারের সংখ্যা। নিয়মনীতিকে তোয়াক্কা না করেই ব্রহ্মপুত্রের চিলমারীর প্রায় শতাধিক পয়েন্টে অবৈধ ড্রেজারের মাধ্যমে বালি উত্তোলনের ফলে নদীর দিক পরিবর্তন হয়ে একাধিক স্রোত তৈরি হয়ে গ্রামের পর গ্রামসহ হাজার হাজার একর জমি চলে যাচ্ছে নদীগর্ভে। প্রশাসনের নাকের ডগায় বছরের পর বছর থেকে বালি লুটের মহাউৎসব চললেও অজ্ঞাত কারণে প্রশাসন দেখেও যেন দেখছে না। মাঝে-মধ্যে লোক দেখানো অভিযান চালিয়ে দায়িত্ব সেরে নিচ্ছেন দায়িত্বরতরা। সেই সুযোগে বালুখেকোরা লুটে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকার বালি, অজ্ঞাত কারণে সঠিক পদক্ষেপ নিচ্ছে না প্রশাসন। কতিপয় বালি ব্যবসায়ীরা চিলমারীর স্থানীয় উন্নয়নের নামে বালি উত্তোলনের কথা বললেও বছরে লাখ লাখ ঘনফুট বা সিএফটি বালি চিলমারীর বাইরে বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। জানা গেছে, উপজেলার মধ্যদিয়ে বয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র থেকে বছরের পর বছর ধরে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের উৎসব শুরু করেন একটি বালিখেকো সিন্ডিকেট। পরে একটিতে তৎকালীন সরকারের আমলে নামধারী দলীয় নেতারা জড়িয়ে পড়ে এবং ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে চালায় উত্তোলনের উৎসব। ধীরে ধীরে ২/১টি ড্রেজার থেকে প্রায় অর্ধশতাধিক ড্রেজার নেমে পড়ে ব্রহ্মপুত্রের বুকে আর বালি উত্তোলন ও বিক্রির মহাউৎসব শুরু হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কিছুদিন বন্ধ থাকার পর পূর্বের বালু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মিলে আর একটি মহল নেমে পড়েছে এবং বিভিন্ন ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে আবারো অবৈধভাবে বালু উত্তোলনসহ চালিয়ে যাচ্ছে বালু ব্যবসা। প্রায় অর্ধশতাধিক ড্রেজার ব্রহ্মপুত্রের বুকে চালায় তাণ্ডব। সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন পয়েন্টে শ্যালো মেশিন ছাড়াও ব্রহ্মপুত্রের বুকের বিভিন্ন স্থানে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছে কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি। ফকিরেরহাট এলাকার মনজু বলেন, একে তো অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আর সঙ্গে নদী ভাঙন রোধে রাখা ব্লোক দিয়ে বালুখেকোরা নিজেদের ব্যবসার জন্য রাস্তা বানাইছে আর বাঁধের সড়কও শেষ করছে। আমি ৯৯৯ ফোন করি কিন্তু কোনো ফল না পেয়ে চিলমারী থানায় জানালেও কিছুই হয়নি। বরং বালু ব্যবসায়ীদের হুমকিতে ভয়ে আছি। সূত্র মোতাবেক প্রতি মাসে প্রায় ৫০ থেকে ৮০ লক্ষ টাকার বালি বিক্রি হয় চিলমারী বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে আর প্রতি ঘনফুট বা সিএফটি বালি বিক্রি হচ্ছে ৮ থেকে ১০ টাকা, যদিও তা তুলতে সিএফটি প্রতি ২ থেকে ৪ টাকা খরচ পড়ছে। প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার বালু বিক্রি হলেও সরকারের রাজস্ব ভাণ্ডার একেবারেই শূন্য থাকছে। এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, জোড়গাছ থেকে ফকিরেরহাট পর্যন্ত প্রায় অর্ধশতাধিক বিভিন্ন পয়েন্টে বালু বিক্রির সঙ্গে মাছুদ, ইবরাহিম, রবিন, হারুন, বাবলু, আ. কাদের, মিন্টু, সুজাসহ অনেকের নাম জানা গেলেও এর নেপথ্যে বালু উত্তোলনে নেতৃত্ব কিছু প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক ব্যক্তি জড়িত আছেন বলে জানা যায়। চিলমারী ইউনিয়নের বাসিন্দারা জানান, ড্রেজারের মাধ্যমে বালি উত্তোলন করায় গত বছর বর্ষার সময় শত শত বাড়িঘরসহ হাজার হাজার একর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে, অভিযোগ করেও লাভ হয়নি। বালু বিক্রির সঙ্গে দলীয় কেউ জড়িত নেই জানিয়ে উপজেলা বিএনপি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু হানিফা জানান, একটি মহল বিএনপি’র সুনাম নষ্ট করতে বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে। কথা হলে চিলমারী বন্দর থানার ওসি আইসি ইমতিয়াজ কবির জানান, আমাদের লোকবল কম এবং যানবাহন না থাকায় সব স্থানে অভিযান দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সবুজ কুমার বসাক বলেন, বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং আমরা বালুমহালের জন্য চেষ্টা চলছে, আশাকরি তা দ্রুত বাস্তবায়ন হবে।