অনলাইন
বিদেশে টাকা পাচারকারীরা এখন প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে: প্রেস সচিব
স্টাফ রিপোর্টার
(১ সপ্তাহ আগে) ১১ জানুয়ারি ২০২৫, শনিবার, ৬:৫৯ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৩:২১ অপরাহ্ন
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, আওয়ামী লীগের আমলে বিশ্বের ইতিহাসে বড় ধরনের লুটপাট হয়েছে বাংলাদেশে। শেখ হাসিনা দেশে চোরতন্ত্র কায়েম করেছিলেন। বড় বড় কোম্পানিকে তখন অর্থের বিনিময়ে কাজ পাইয়ে দেয়া ছিল তার কাজ। বিদেশে টাকা পাচারকারীরা এখন সেই টাকায় প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। গতকাল বেলা ১২টায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি আয়োজিত ‘জুলাই বিপ্লবে গণমাধ্যমের ভূমিকা ও পরবর্তী প্রত্যাশা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জুলাই বিপ্লবে গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে তিনি বলেন, অনেক গণমাধ্যম আন্দোলনকারীদের ‘জাতির শত্রু’ হিসেবে তুলে ধরেছিল। গণমাধ্যমের ভাষা ব্যবহার করে তখন শাসকদের কাছে বার্তা দেয়া হচ্ছিলো এই আন্দোলনকারীদের দমন করা উচিত। যদি ফ্যাসিস্ট শক্তি জয়ী হতো, তাহলে দুই লাখ মানুষকে জেলে যেতে হতো, আর তখন ন্যারেটিভ হতো যে, কিছু ‘দুর্বৃত্ত’ দেশ জুড়ে অরাজকতা সৃষ্টি করেছে।
জুলাই আন্দোলনে সাংবাদিকদের ভূমিকার কথা স্মরণ করে শফিকুল আলম বলেন, জুলাই আন্দোলনে সাংবাদিকরা সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে যে ভূমিকা পালন করেছে, তা ঐতিহাসিক। এই আন্দোলনে দেশের টিভি, অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়াসহ ও অনেক সিটিজেন সাংবাদিক ভূমিকা রেখেছে। এর বিপরীতে গিয়ে একটা পক্ষ কনসেন্ট তৈরির চেষ্টা করেছে যে, এই আন্দোলনকারী লোকেরা বিটিভিতে আক্রমণ করেছে, মেট্রোরেলে হামলা করেছে। এরা সন্ত্রাসী, দুষ্কৃতকারী, এদের মারো। তারা সন্ত্রাসী, তাদের হত্যা করা জায়েজ।
এসব ছিল মিডিয়ার ভাষা। যারা সাংবাদিকতা করেন বা করেন না, তাদেরও মিডিয়ার ভাষা বুঝতে হবে। মিডিয়া তার ভাষা দিয়ে নির্দেশ করে দেয়, উনি সন্ত্রাসী, উনি দুর্বৃত্ত। অনেক গণমাধ্যম আন্দোলনকারীদের ‘জাতির শত্রু’ হিসেবে তুলে ধরেছিল। গণমাধ্যমের ভাষা ব্যবহার করে তখন শাসকদের কাছে বার্তা দেয়া হচ্ছিলো এই আন্দোলনকারীদের দমন করা উচিত। আন্দোলনে ২ হাজার মানুষ মারা গেছে। যদি ফ্যাসিস্ট শক্তি জয়ী হতো, তাহলে দুই লাখ মানুষকে জেলে যেতে হতো। তাদের রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নেয়া হতো। আর তখন ন্যারেটিভ হতো যে, কিছু ‘দুর্বৃত্ত’ দেশ জুড়ে অরাজকতা সৃষ্টি করেছে। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ আমলে বিশ্বের ইতিহাসে বড় ধরনের লুটপাট হয়েছে বাংলাদেশে। চোরতন্ত্র তৈরি করেছিলেন শেখ হাসিনা। বড় বড় কোম্পানিকে কাজ পাইয়ে দেয়া ছিল তার কাজ। সে সময় বিদেশে টাকা পাচারকারীরা এখন সেই টাকায় প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। তারা প্রতিষ্ঠিত করতে চায় যে, এখানে এখন মৌলবাদী শক্তির উত্থান ঘটেছে, কোনো গণ-অভ্যুত্থান হয়নি। পরাজিত শক্তি আবার আপনাদের জঙ্গি বানাতে চায়।
প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআইবি)-এর মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, ফ্যাসিবাদী শক্তি শুধু মূর্তি বানাইনি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের আন্তর্জাতিক কানেকটিভিটি (সম্পর্ক) এখনো বিদ্যমান রযেছে। অনুরূপভাবে আমরা কিছু ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে পারি, যেগুলো একসময় বড় প্রতিষ্ঠানে রূপ নিবে। প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করতে গেলে আমরা নিজেরা বিলুপ্ত হয়ে যাবো। ফ্যাসিবাদ কোনো প্রতিষ্ঠান নয়, ফ্যাসিবাদ হলো জমিদারি ও কর্তৃত্ব, আমরা সেই জমিদারি ও কর্তৃত্বের অবসান করতে চাই। ফারুক ওয়াসিফ বলেছেন, দেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ফ্যাসিবাদমুক্ত করতে হবে। কীভাবে রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করা যায়, এ ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ থেকে কাজ করতে হবে। কোনোভাবেই ঐক্য ভাঙা যাবে না।
পিআইবি’র মহাপরিচালক বলেন, ১৯৭১ সালে ১২ জন সাংবাদিক শহীদ হন। আর ২০২৪ সালে মাত্র কয়েকদিনে ৫ জন শহীদ হন। আর একটি দিন দীর্ঘ হলে আরেকটি ২৫ মার্চের কালো রাত আসতে পারতো। আরও সাংবাদিকের বুকের রক্ত ঝরতে পারতো। নয় মাসে যদি ১২ জন শহীদ হয়, তাহলে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অনুপাত কোথায় দাঁড়াতো? ফারুক ওয়াসিফ বলেন, এরশাদবিরোধী আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি আন্দোলন করেছে। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ মাঠে নেমেছিল। কিন্তু চব্বিশের আন্দোলনে এরা ভোগবিলাসে ব্যস্ত ছিল। কেউ মারা গেলে তারা শহীদ মিনারে যেতো কিছুক্ষণ নীরবতা পালন করতে। পিআইবি’র মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, শেখ হাসিনা বৃহত্তম জেলখানা, বৃহত্তম গোরস্থান তৈরি করেছিল। এতেই বোঝা যায়, তাদের উদ্দেশ্য কী ছিল। শিক্ষক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী তারা ফ্যাসিবাদের একধরনের সহযোগী ছিল।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ইমরান হুসাইনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম। তিনি বলেন, স্বৈরাচারের ইতিহাস আমরা যা দেখেছি, তা বর্ণনা করতে গেলে কয়েক ঘণ্টা লেগে যাবে। স্বৈরাচার যখন কোনো একটা ছেলেকে পিঠিয়ে মেরে ফেলতো, তখন বলা হতো, ছাত্রদল অথবা শিবির মরেছে।
জবি সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন লিমনের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্বিবদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সাবিনা শারমিন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রইছ উদ্দিন। আরও বক্তব্য রাখেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. আসাদুল ইসলাম, জাস্টিস ফর জুলাই, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক সজিবুর রহমান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও জবি শিক্ষার্থী নূর নবী। এ ছাড়াও অনুষ্ঠানের শুরুতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জবি সাংবাদিক সমিতির সহ-সভাপতি আসাদুল ইসলাম। এ সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মী, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।