বাংলারজমিন
তানোরে ফসলি জমির টপ সয়েল যাচ্ছে ইটভাটায়
তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধি
১১ জানুয়ারি ২০২৫, শনিবাররাজশাহীর তানোর উপজেলার বাধাইড় ইউনিয়নের (ইউপি) সীমান্তবর্তী প্রত্যন্ত পল্লী গোয়ালপাড়া তিন ফসলি জমিতে গড়ে উঠেছে কেআরবি ইটভাটা। ফসলি জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি (টপ সয়েল) যাচ্ছে এই ইটভাটায়। খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্টরা। ইট তৈরির মাটির উৎস নিয়ে অঙ্গীকার ভঙ্গ করছেন ভাটা মালিক। ইটভাটা চালুর আগে মালিকরা পরিবেশ অধিদপ্তরে মাটির উৎস নিয়ে একটি অঙ্গীকারনামা দাখিল করেন। কিন্তু পরে এর সিকি ভাগও বাস্তবায়ন করেন না। পতিত জলাভূমির পরিবর্তে ভাটা মালিকরা তিন ফসলি কৃষিজমির ‘টপ সয়েল’ (উপরের মাটি) কেটেই ইট তৈরি করেন। এতে প্রতি বছরই কৃষিজমির পরিমাণ কমছে। ফলে উপজেলায় খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় কৃষি বিশেষজ্ঞরা। এই ইটভাটা কৃষি জমির টপ সয়েলের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। কৃষিজমির টপসয়েল একবার সরে গেলে তা পুনরায় কৃষি উপযোগী করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। এতে খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। আবাদি জমির টপ সয়েল হারানোর ক্ষতিকর প্রভাবটা এখনো দৃশ্যমান হচ্ছে না। তবে ভবিষ্যতের জন্য তা অশনি সংকেত।
স্থানীয়রা জানান, এলাকার কৃষকদের বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে উপজেলার বাধাইড় ইউপির ঝিনাখৈর গোয়ালপাড়া তিন ফসলি কৃষিজমিতে বিশাল আয়তনের ‘কেআরবি’ নামের অবৈধ ইটভাটা গড়ে তুলেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সুন্দরপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য রফিকুল ইসলাম ও একই জেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের হাজী আবুল কালাম আজাদ। জানা গেছে, কৃষিজমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি চলছে। এস্কেভেটর (ভেকু) দিয়ে মাটি কেটে তা পরিবহন করা হচ্ছে ট্রাক্টরের মাধ্যমে। এসব মাটি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে বতসভিটা। একইসঙ্গে নেয়া হচ্ছে ইটভাটায়। সংঘবদ্ধ একটি চক্র কৃষিজমি থেকে মাটি বিক্রির জন্য সাধারণ কৃষকদের আর্থিকসহ নানা প্রলোভন দেখায়। প্রতি ট্রাক্টর মাটি তারা ৩০০ টাকায় কৃষকদের কাছ থেকে কিনে নেয়। আর ইটভাটায় বিক্রি করে এক হাজার থেকে ১২শ’ টাকায়। এভাবে বাড়তি অর্থ আদায় করে নিচ্ছে চক্রের সদস্যরা।
এদিকে কয়লার পরিবর্তে দেদারছে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ইটভাটার সামনে নামমাত্র কয়লা রাখলেও চুল্লিতে প্রধান জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে কাঠ। এতে একদিকে ইটভাটার ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে অপরদিকে উপজেলায় বনভূমির পরিমাণ কমছে। এ নিয়ে উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো তদারকি নেই বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভাটা মালিক হাজি আবুল কালাম আজাদ অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সারা দেশে যেভাবে ইটভাটা চলছে তারাও সেভাবে ইটভাটা চালাচ্ছেন সমস্যা কি?
রাজশাহী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বলেন, অকৃষি অনাবাদি পতিত জলাভূমির মাটি সংগ্রহ করে ইট তৈরি করার অঙ্গীকার করেই ভাটা মালিকরা আমাদের কাছ থেকে ছাড়পত্র নিয়ে যান। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে তারা অঙ্গীকার বাস্তবায়ন না করে কৃষিজমির (টপ সয়েল) উর্বরা মাটি নিয়ে ইট তৈরি করছে। এতে পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। আমরা শিগগিরই মাটির উৎস নিয়ে ভাটা মালিকদের বিরুদ্ধের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবো।