ঢাকা, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, শুক্রবার, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ রজব ১৪৪৬ হিঃ

অনলাইন

ঘটতে পারে ত্রিদেশীয় কূটনৈতিক বিপর্যয়

মালয়েশিয়ায় ২৫১ বাংলাদেশির দুই জাপানিজ কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি

আরিফুল ইসলাম, মালয়েশিয়া

(১ সপ্তাহ আগে) ৯ জানুয়ারি ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১০:০০ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৪:১৮ অপরাহ্ন

mzamin

কাওয়াগুচি ম্যানুফ্যাকচারিং এসডিএন বিএইচডি-তে কর্মরত ২৫১ জন বাংলাদেশি শ্রমিক যারা গত বছর টানা সাত মাস বেতন ছাড়াই কাজ করেছেন, তারা এবার ওয়াশিংটন ডিসির আদালতে দুটি নামকরা জাপানি কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

ফ্রি মালয়েশিয়া টুডে জানিয়েছে, বাংলাদেশি এসব শ্রমিকরা অভিযোগ করছেন যে, এই কোম্পানিগুলো তাদের শোষণ, অমানবিক আচরণ এবং বেতন না দেয়ার মাধ্যমে তাদের প্রতি অন্যায় করেছে। এই বিষয়ে শ্রমিকদের সহায়তা করছেন স্বাধীন অভিবাসী শ্রমিক অধিকার কর্মী অ্যান্ডি হল।

এ বিষয়ে অ্যান্ডি হল জানিয়েছেন, শ্রমিকরা ইতোমধ্যে ক্ষতিপূরণ আদায়, আর্থিক সুবিধা এবং কোম্পানিগুলোকে ক্ষমা চাওয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আইনজীবী টেরেন্স পি. কলিংসওয়ার্থকে নিয়োগ করেছেন। তবে কোম্পানিগুলোর নাম এখনও গোপন রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে ফ্রি মালয়েশিয়া টুডে। 

তবে মানবজমিনের অনুসন্ধানে ৩টি কোম্পানির নাম উঠে এসেছে। এর মধ্যে দুটি জাপানিজ কোম্পনি হচ্ছে, সনি এবং প্যানাসনিক।

অ্যান্ডি হল ফ্রি মালয়েশিয়া টুডেকে আরো জানিয়েছে, কোম্পানিগুলো প্রতিটি শ্রমিককে মাত্র ২০ হাজার রিঙ্গিত দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল, যা শ্রমিকদের নিয়োগের সময় নেয়া ঋণ এবং খরচ মেটানোর জন্যও যথেষ্ট নয়। তিনি আরও বলেন, “অনেক শ্রমিক এখনও ঋণগ্রস্ত এবং ঋণের জন্য দাসত্বের ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়াও কোম্পানিগুলো তাদের পুনঃনিয়োগ বা খাদ্য ও চিকিৎসার জন্য কোনো সহায়তা দেয়নি।”

ফ্রি মালয়েশিয়া টুডে আরো জানিয়েছে, শ্রমিকদের দাবি অনুযায়ী, কোম্পানিগুলো তাদের ন্যায্য বেতন পরিশোধে গড়িমসি করছে। গত ১৮ ডিসেম্বর শ্রমিক ট্রাইব্যুনালের এক চুক্তি অনুযায়ী, কাওয়াগুচি ২০২৫ সালের নভেম্বরের মধ্যে বকেয়া বেতন পরিশোধ করতে সম্মত হয়েছিল, তবে এটি আদৌ কার্যকর হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

এদিকে পত্রিকাটি দাবি করেছে, গত ২৭ ডিসেম্বর শ্রমিকরা কলিংসওয়ার্থের মাধ্যমে টোকিওর অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থায় (ওইসিডি) দুটি কোম্পানির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করেন। এ বিষয়ে হল বলেন, “এই কোম্পানিগুলো গঠনমূলকভাবে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, ফলে আমরা বাধ্য হয়ে আদালতে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মামলাটি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই দায়ের করা হবে।”

গত বছর, বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকরা পোর্ট ক্লাং কারখানার বাইরে একটি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করেন। এরপর ১৮ ডিসেম্বর কাওয়াগুচি তাদের বকেয়া বেতন পরিশোধে রাজি হয় এবং পুত্রজায়ার জেটিকে (শ্রম অফিস) তাদের অন্য প্রতিষ্ঠানে চাকরি খুঁজে দেয়ার আশ্বাস দেয়। কিন্তু শ্রমিকদের দাবি, তারা ন্যায্য ক্ষতিপূরণ ও একটি সুষ্ঠু সমাধান না পাওয়া পর্যন্ত আইনি লড়াই চালিয়ে যাবেন।

যদিও বাংলাদেশ হাইকমিশন, কুয়ালালামপুর গত ৩০ ডিসেম্বর ভুক্তভোগী এসব শ্রমিকদের প্রতি গৃহীত পদক্ষেপের বিষয়ে আন অফিসিয়াল এক নোটের মাধ্যমে দৈনিক মানবজমিনের মালয়েশিয়া প্রতিনিধিকে জানিয়েছিলেন; গত ৩০ ডিসেম্বর ১৬০ জন কর্মীকে মোট ৭টি ভিন্ন ভিন্ন নতুন কোম্পানির অধীনে হাইকমিশনের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে ডিপার্টমেন্ট অব লেবারের মাধ্যমে নিয়োগকর্তা পরিবর্তনপূর্বক হস্তান্তর করেছেন। বাকি কর্মীদেরকেও আগামী দুদিনের মধ্যে হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে জানালেও আজও এর কোনো আপডেট পাওয়া সম্ভব হয়নি।

নতুন কোম্পানিতে হস্তান্তরকৃত ১৬০ জন কর্মীর মধ্যে ছিলো, কেওয়াইবি-ইউএমডব্লিউ মালয়েশিয়া এসডিএন. বিএইচডি. কোম্পানিতে ১০ জন, যার রেজিস্ট্রেশন নম্বর (১০৩১৫১-ডব্লিউ), স্যারিয়াকাত পের্নিগণ কেমাজুয়ান ইন্টা. এসডিএন. বিএইচডি. কোম্পানিতে ৪৫ জন, যার রেজিস্ট্রেশন নম্বর (১৭৭৬৯৮-এক্স), উইন উইন ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ এসডিএন. বিএইচডি. কোম্পানিতে ২০ জন, যার রেজিস্ট্রেশন নম্বর (৬৬২৪৯২-ইউ), ইকো-শপ মার্কেটিং এসডিএন. বিএইচডি. কোম্পানিতে ৪১ জন, যার রেজিস্ট্রেশন নম্বর (৭৩৪০৫৫-এম), সিইভিএ লজিস্টিক এসডিএন. বিএইচডি. কোম্পানিতে ১৭ জন, যার রেজিস্ট্রেশন নম্বর (৪২১৫০২-ইউ), দেসারু দামাই বিচ রিসোর্ট এসডিএন. বিএইচডি. কোম্পানিতে ১০ জন, যার রেজিস্ট্রেশন নম্বর (৭৮০৯৮৩-এ), এবং বোহ টি, ক্যামেরুন হাই ল্যান্ড কোম্পানিতে ১৭ জন কর্মীকে স্থানান্তর (নিয়োগকর্তা) করা হয়েছে।

বাংলাদেশ হাই কমিশন সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও গুরুত্ব দিয়ে পুরো বিষয়টি তদারকি ও ডিপার্টমেন্ট অব লেবারের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করলেও নামকরা জাপানিজ দুটি কোম্পানির বিরুদ্ধে কেন মামলা করছে আর মালয়েশিয়ায় থেকে এ ধরনের মামলা হলে কূটনৈতিক ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব পড়বে কি না? মালেশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনে জানতে চাইলে তার কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

তবে ফ্রি মালয়েশিয়া টুডে গত ৩১ ডিসেম্বর তাদের আরেক সংবাদে জানিয়েছে, ভুক্তভোগী এসব কর্মীদের মধ্যে ১৮ জন কর্মী বাংলাদেশে ফিরতে ফ্লাইটের অপেক্ষায় পোর্ট ক্লাংয়ের একটি হোস্টেলে অবস্থান করছেন।

অনলাইন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

অনলাইন সর্বাধিক পঠিত

১০

সহযোগীদের খবর/ হাসিনাকে রেখেই এগোবে ভারত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status