ভারত
পশ্চিমবঙ্গে শত্রু সম্পত্তির বর্তমান হাল
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা
(৩ সপ্তাহ আগে) ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, বুধবার, ৫:৩৭ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:০২ পূর্বাহ্ন
পশ্চিমবঙ্গে শত্রু সম্পত্তির সংখ্যা ৪৩৭৬টি। এর অধিকাংশই পাকিস্তানী নাগরিকত্ব নিয়েছিলেন। পরিসংখ্যানে জানা গেছে, ৪৩২০ জনই পাকিস্তানি নাগরিকত্ব নিয়ে সম্পত্তি ফেলে রেখে চলে গিয়েছিলেন। মাত্র ৫৬টি সম্পত্তি চীনা নাগরিকদের। এই চীনা নাগরিকরা ১৯৬২ সালের ভারত-চীন যুদ্ধের পর ভারত ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। এই সব সম্পত্তিই ভারত সরকার শত্রু সম্পত্তি হিসেবে চিহ্নিত করে কাস্টোডিয়ানদের হাতে দেখভালের দায়িত্ব দিয়েছে। সম্প্রতি ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে। তবে অধিকাংশ সম্পত্তিই পাকিস্তানি নাগরিকদের বলা হলেও তারা আসলে প্রায় সকলেই সম্পত্তির মায়া ত্যাগ করে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে চলে গিয়েছিলেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গিয়েছে।
১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর থেকেই এই ভারত ছেড়ে চলে যাওয়ার প্রবণতা দেখা গিয়েছে। খোদ কলকাতা থেকেই ৯০টি পরিবার পাততাড়ি গুটিয়ে চলে গিয়েছিলেন। এর মধ্যে ৭১টি পরিবারই পাকিস্তানি নাগরিক আর ১৯টি পরিবার চীনা। কলকাতার পশ এলাকা হিসেবে পরিচিত সেক্সপীয়ার সরণীর ৭৮ এ ও বি নম্বারে থাকা দুটি দামি সম্পত্তিও শত্রু সম্পত্তি হিসেবে চিহ্নিত। পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদবাদেই শত্রু সম্পত্তির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এই জেলা থেকে ১৭২৮ জন পকিস্তানী সম্পত্তি ফেলে রেখে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে পাড়ি জমিয়েছিলেন। এছাড়া বীরভূম থেকে ৪২৭, পূর্ব বর্ধমান থেকে ৬২৫ জন, আলিপুর দুয়ার থেকে ১০০ জন, কোচবিহার থেকে ৭১১ জন, হুগলি থেকে ৩৮ জন, জলপাইগুড়ি থেকে ৩৯১ জন, দক্ষিণ ২৪ পরগণা থেকে ২৩ জন , মালদহ থেকে ৫৩ জন, নদীয়া থেকে ৮৮ জন, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে ৩৯ জন, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে ২৪ জন পাকিস্তানী ভারত ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। হাওড়া ও পশ্চিম বর্ধমান থেকে মাত্র একজন করেই দেশান্তরি হয়েছিলেন। পশ্চিমবঙ্গ থেকে চলে যাওয়া এই সব পাকিস্তানীদের মধ্যে অনেকে বাংলাদেশের নামকরা রাজনীতিবিদ, রাষ্ট্রপ্রধান, শিক্ষাবিদও হয়েছিলেন। জানা গেছে, চীনারা মূলত গিয়েছে, কলকাতা(১৯),কালিম্পং(১৭),জলপাইগুড়ি (৫), দার্জিলিং (১৩)এবং আলিপুরদুয়ার (২) থেকে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সুত্রে বলা হয়েছে, গত তিন বছরে কোনও শত্রু সম্পত্তিই বিক্রি করা হয় নি। বরং ৫৩৬ টি শত্রু সম্পত্তি বেদখল হয়ে রয়েছে। তবে এই বেদখল মুক্ত করতে আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। বেশ কিছু এই ধরনের সম্পত্তি ভাড়া বা লিজ দিয়ে গত তিন বছরে সরকার ৬৯.৭২ লক্ষ রুপি আদায় করেছে।
শত্রু সম্পত্তি না বলে দেশের সম্পত্তি বলতে অসুবিধা কোথায়। প্রয়োজন হলে আইন বদলে ফেলুন। দেশ তো ছেড়ে চলে যেতেই পারে। যেমন আমেরিকা কানাডাতে গিয়ে তো এখন সবাই স্থায়ীভাবে বাস করছে। সুতরাং সরকার এসব জায়গায় নতুন করে আবার সন এলাকা ঘোষণা করতে পারে। শত্রু সম্পত্তিটা খারাপ শোনায় না। দেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে তার নিজের সম্পত্তি বিক্রি করতেই পারেন। চলে যাওয়া ব্যক্তি তো দেশেরই নাগরিক ছিল। শত্রু সম্পত্তি হয় কিভাবে।