ঢাকা, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, শুক্রবার, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ রজব ১৪৪৬ হিঃ

শরীর ও মন

ফাংগাল একনে বা ব্রণ ত্বকের বিব্রতকর অবস্থা

অধ্যাপক ডা. এস এম বখতিয়ার কামাল
১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, বুধবার

ফাংগাল একনে: ফাংগাল একনে বলতে যা বুঝি তার প্রকৃত নাম হচ্ছে ম্যালাসেজিয়া ফলিকিউলিটিস। আমাদের ত্বকে ম্যালাসেজিয়া ইস্টের মাত্রা বেড়ে যাওয়া কিংবা ইমব্যালেন্সের কারণে ফাংগাল একনে হয়ে থাকে। সাধারণ একনের মতো এই একনেগুলো শুধুমাত্র মুখেই হয় না। এ ধরনের একনেগুলো কপালে, বুকে  কিংবা পিঠেও দেখা যায়। ছোট ছোট দানাযুক্ত এই একনেগুলো সাধারণ একনের মতো একটি বা দুটি বড় হয়ে ওঠে না। ত্বকের নির্দিষ্ট একটি জায়গা এর বিস্তার ঘটে।
কেন ত্বকে ফাংগাল একনে হয়: সাধারণ একনের মতো ত্বকের অতিরিক্ত সেবাম প্রোডাকশনের ফলে পোর ক্লগড হওয়া থেকে ফাংগাল একনের সৃষ্টি হয় না। সাধারণ একনে হওয়ার পেছনে থাকে ব্যাকটেরিয়া এবং ফাংগাল একনে হওয়ার পেছনে দায়ী হচ্ছে ফাংগাস। আমাদের ত্বক থেকে উৎপন্ন হওয়া তেল কিংবা আমাদের ত্বকের যত্নে ব্যবহৃত কোনো প্রোডাক্টের অতিরিক্ত তেল থেকে ফাংগাস খাদ্যগ্রহণ করে এবং ত্বকে ছড়িয়ে যায়। আমাদের ত্বকে ম্যালাসিজিয়া ইস্ট (এক ধরনের ফাংগাস) এর মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে ফাংগাল একনে হয়ে থাকে।
এ ছাড়া এর পেছনে আরও কিছু কারণ থাকতে পারে। যেমন-
আবহাওয়ার প্রভাব: উষ্ণ এবং আর্দ্র অঞ্চলে ত্বকের ইস্টের ব্যালেন্স দ্রুত নষ্ট হয়। একারণে এই জাতীয় আবহাওয়ার অঞ্চলে ফাংগাল একনে বেশি দেখা দেয়।
ওষুধের প্রভাব: দীর্ঘ সময় ধরে অ্যান্টি বায়োটিকস সেবনের ফলে কিংবা ত্বকে ব্যবহারের ফলে ফাংগাল একনে বেড়ে যেতে পারে।
সঠিক স্কিনকেয়ার প্রোডাক্টসের অভাবে: আমাদের ত্বকের ইস্টগুলো আমাদের ত্বক থেকে যে তেল উৎপন্ন হয় তার ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকে। আমাদের স্কিন কেয়ার রুটিনে যদি তেলযুক্ত কোনো প্রোডাক্ট ব্যবহার করি তাহলে এই ইস্ট ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায় এবং ত্বকে ফাংগাল একনের দ্রুত ছড়িয়ে যায়।
খাদ্যাভ্যাসের কারণে: আমাদের খাদ্যাভ্যাসও ত্বকে ফাংগাল হওয়ার পেছনে দায়ী। আমাদের খাবারে চিনির পরিমাণ বেশি হলে ফাংগাল একনে বেড়ে যায়। কেননা, ইস্টের দ্রুত বৃদ্ধির পেছনে চিনি অনেক বেশি দায়ী। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাবে: উষ্ণ এবং আর্দ্রতার প্রভাবে ফাংগাল একনে দেখা দেয়। ওয়ার্ক আউট কিংবা জিম থেকে এসে  ভেজা কাপড় পরে থাকলে কিংবা গরমে ঘামার কারণে ওই জামা পরে থাকলে ফাংগাল একনের উপদ্রব বেড়ে যায়।
ছোঁয়াচে প্রভাবে: ফাংগাল একনে আছে এমন কারও সংস্পর্শে আসলে ফাংগাল একনে হতে পারে। ফাংগাল একনে আছে এমন কারও তোয়ালে, জামা কিংবা রুমাল ব্যবহারে এটি ছড়িয়ে যেতে পারে।
ফাংগাল একনের লক্ষণ: আমাদের ত্বকের তৈলাক্ত স্থানগুলোতে এই ফাংগাল একনে  বেশি দেখা যায়। যেমন- আমাদের কপালের টি-জোনে। নাকের দু’পাশে, থুতনিতে এবং পিঠে ফাংগাল একনে হয়ে থাকে।
-ত্বকে ফাংগাল একনে হলে ইচিং বা চুলকানোর সমস্যা দেখা দেয়।
-বাম্প বা একনেগুলো একই আকারের হয়ে থাকে।
-উষ্ণ আবহাওয়ায় ফাংগাল একনে দ্রুত ছড়িয়ে যায়।
-মুখে হওয়া ছাড়াও বুকে, পিঠে কিংবা পেছনের অংশে এই একনে হয়ে থাকে।
-মাথায় খুশকি থাকলে ফাংগাল একনে হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে।
প্রতিরোধ 
১. অ্যান্টি ড্যানড্রাফ শ্যাম্পুর ব্যবহার: অ্যান্টি ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু ফাংগাল একনের ট্রিটমেন্ট হিসেবে  খুবই কার্যকরী। এ ধরনের শ্যাম্পুতে আছে অ্যান্টি-ফাংগাল উপাদান, যা ত্বকের এই একনেগুলোকে কমাতে সাহায্য করে।
২. ত্বককে এক্সফোলিয়েট করা: ত্বককে নিয়মিত এক্সফোলিয়েট করলে ত্বকের ডেডসেল এবং ত্বকে জমে থাকা অতিরিক্ত তেল এবং ময়লা ত্বকের ইস্টকে কন্ট্র্রোল করতে সাহায্য করে। তাই ফাংগাল একনে ছড়ানো কমাতে ত্বককে এক্সফোলিয়েট করা জরুরি।
৩. ফেইস ওয়াইপস এবং বডি ওয়াইপসের ব্যবহার: আমরা বাসার বাইরে থাকলে গরম কিংবা ঘামের প্রবণতা বেড়ে যায়। আর সেখান থেকে একনে হওয়ার প্রবণতাও বেড়ে যায়। তাই ফাংগাল একনের সমস্যা থেকে বাঁচতে ব্যাগে স্যালিসাইলিক এসিড যুক্ত ফেইস ওয়াইপস ব্যবহার করতে পারেন। আর যাদের শরীরের পেছনে কিংবা বডিতে  ফাংগাল একনে আছে তাদের পক্ষে জিম কিংবা ওয়ার্ক আউটের পর শরীর ভেজা রাখা উচিত নয়। সেক্ষেত্রে বডি ওয়াইপ ব্যবহার করতে পারেন। বডি ওয়াইপ ব্যবহারে ত্বকের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় একনে ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা কমে যায়।
৪. সঠিক প্রোডাক্ট সিলেকশন করা: ত্বকে ফাংগাল একনে থাকলে স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টে স্যালিসাইলিক এসিড যুক্ত প্রোডাক্ট এড করতে হবে। এই উপাদানটি একনে প্রতিরোধে দারুণ কার্যকরী।
৫. অয়েল-ফ্রি ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা: স্কিনে তেলযুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার করা ফাংগাল একনেপ্রবণ ত্বকের জন্য  ক্ষতিকর। কারণ এখান থেকেই একনে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই ত্বকে ফাংগাল একনের সমস্যা থাকলে ময়েশ্চারাইজার হিসেবে অয়েল-ফ্রি ময়েশ্চাইজার ব্যবহার করতে হবে। এ ছাড়া মেকআপ প্রোডাক্টস সিলেক্ট করার সময়েও অয়েল-ফ্রি প্রোডাক্ট বেছে নিতে হবে।
পরিচর্যা: ফাংগাল একনে থেকে পরিত্রাণ পেতে প্রাকৃতিক কিছু উপায় আপনি ট্রাই করতে পারেন। যেমন- প্রতিদিনকার খাদ্যতালিকায় দই রাখতে পারেন। দইয়ে আছে ল্যাকটিক এসিড, যা দেহে ইস্টের উৎপাদনকে কমাতে সাহায্য করে।
এ ধরনের একনের জন্য ত্বকে মধু ব্যবহার করতে পারেন। মধুতে ত্বকের অ্যান্টি মাইক্রবিয়াল প্রপার্টি, যা একনে  নিরাময়ে কাজ করে।
ফাংগাল একনে নিরাময়ে আরেকটি উপকারী উপাদান হচ্ছে টি-ট্রি অয়েল। ফাংগাল একনে যুক্ত এরিয়াতে পানির সঙ্গে টি-ট্রি অয়েল মিশিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিতে পারেন। টি-ট্রি অয়েলে আছে এমন উপাদান যা ত্বকের ইরিটেশনকে কমাতে সাহায্য করে।
সপ্তাহে অন্তত ১ দিন অ্যান্টি ফাংগাল বডিওয়াশ ব্যবহার করতে হবে। প্রতিদিন গোসল করতে হবে এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।
বর্জনীয়: ত্বকে অয়েল বেজড প্রোডাক্ট ব্যবহার করা যাবে না।
ইস্ট আছে এমন খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। অতিরিক্ত তেলযুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না।
ত্বকের একনেপ্রবণ অংশ মোছার জন্য আলাদা টিস্যু কিংবা কাপড় ব্যবহার করতে হবে।
টাইট কাপড় পরা যাবে না। বিশেষ করে সিনথেটিক কাপড়, যা ত্বকে আটকে থেকে ত্বকে শ্বাস নিতে দেয় না।
ঘাম কিংবা ভিজে থাকা কাপড় যত দ্রুত সম্ভব পাল্টানো উচিত এবং ধোয়া ছাড়া ব্যবহার করা উচিত না।


লেখক: চর্ম, যৌন ও অ্যালার্জি রোগ বিশেষজ্ঞ (সাবেক) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
কামাল হেয়ার অ্যান্ড স্কিন সেন্টার, ফার্মগেট, ঢাকা। প্রয়োজনে: ০১৭১১-৪৪০৫৫৮

শরীর ও মন থেকে আরও পড়ুন

শরীর ও মন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status