ঢাকা, ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, শনিবার, ১১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪ রজব ১৪৪৬ হিঃ

বিশ্বজমিন

আসাদের পতনের লড়াইয়ে নেপথ্যে থাকা কে এই জোলানি

মানবজমিন ডেস্ক

(১ মাস আগে) ৮ ডিসেম্বর ২০২৪, রবিবার, ৩:২৬ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১২:০৪ পূর্বাহ্ন

mzamin

দীর্ঘ লড়াইয়ের মাধ্যমে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতন ঘটিয়েছে দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামস (এইচটিএস)। সশস্ত্র এই গোষ্ঠীটির নেতৃত্বে ছিলেন এইচটিএসের প্রধান আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি। রোববার বিনা বাধায় সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক দখলের পর আসাদ সরকারের পতনের ঘোষণা দিয়ে বিবৃতি দেয় এইচটিএস নামের গোষ্ঠীটি। এতে বলা হয়, দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন জালিম শাসক বাশার আল-অসাদ। সিরিয়া এখন মুক্ত। এর মধ্য দিয়ে একটি অন্ধকার যুগের সমাপ্তি হলো। আর সূচনা হলো একটি নতুন যুগের। দুই যুগের বেশি সময় ধরে সিরিয়াকে লৌহমুষ্টিতে শাসন করা আসাদের এমন করুণ পতনে গোটা বিশ্বই যেন হতবাক হয়ে পড়েছে। কেননা কোনো ধরনের পূর্বাভাস ছাড়াই দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে একটি দেশের শক্তিশালী প্রেসিডেন্টের পতন নিশ্চিত করা নজিরবিহীন ঘটনাই বটে। তবে টানা ২৪ বছর পর আসাদের এমন পতনের পরিপ্রেক্ষিতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন এইচটিএসের নেতৃত্বে থাকা আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি। সকলেই জানতে চাচ্ছে আসাদের পতনের নেতৃত্ব দেয়া নেপথ্যের নায়ক কে এই জোলানি। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে জোলানির অতীত-বর্তমান। কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে ওই নেতার নানা দিক।

আবু মোহাম্মদ আল-জোলানির আসল নাম আহমেদ হুসাইন আল-শারা। ১৯৮২ সালে তিনি সৌদি আরবের রিয়াদে জন্মগ্রহণ করেন। তখন তার বাবা সেখানে পেট্রোলিয়াম প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করতেন। ১৯৮৯ সালে তার পরিবার সিরিয়ায় ফিরে আসে। দামেস্কের অদূরে বসতি স্থাপন করে। দামেস্কে থাকাকালে জোলানি কী করতেন, তা জানা যায় না। ২০০৩ সালে সিরিয়া থেকে ইরাকে এসে তিনি আল-কায়েদায় যোগ দেন। এই বছরই ইরাকে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। তিনি সেখানে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী প্রতিরোধ আন্দোলনে যোগ দেন। তখন থেকে তার নাম ছড়িয়ে পড়ে।

২০০৬ সালে জোলানি যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের হাতে গ্রেপ্তার হন। পাঁচ বছর আটক থাকেন। গণতন্ত্রের দাবিতে ২০১১ সালে সিরিয়ায় শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভ দমনে বাশার আল-আসাদ সহিংসতার পথ বেছে নেন। এর জেরে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। ২০১১ সালে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের সময় জোলানি ছাড়া পান। এরপর তার নেতৃত্বে সিরিয়ায় আল-কায়েদার শাখা প্রতিষ্ঠা করা হয়, যা আল-নুসরা ফ্রন্ট নামে পরিচিত। সশস্ত্র গোষ্ঠীটি সিরিয়ার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে, বিশেষত ইদলিবে শক্তিশালী হতে থাকে।

প্রথম দিকের কয়েক বছর জোলানি আবু বকর আল-বাগদাদির সঙ্গে কাজ করেন। বাগদাদি ছিলেন ইরাকের ইসলামিক স্টেটের (আইএস) প্রধান। এই সশস্ত্র গোষ্ঠী পরে আইএসআইএল (আইএসআইএস) নাম ধারণ করে। ২০১৩ সালের এপ্রিলে বাগদাদি আকস্মিকভাবে আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দেন। সিরিয়ায় নিজেদের তৎপরতা বৃদ্ধিতে কাজ শুরু করেন। একটা পর্যায়ে আইএসআইএল আল-নুসরা ফ্রন্টকে বেশ ভালোভাবে নিজেদের সঙ্গে একীভূত করে ফেলে। তখনই আইএসআইএলের জন্ম হয়।

জোলানি এ পরিবর্তন প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখেন। এ অবস্থায় ২০১৪ সালে আল-জাজিরাকে প্রথমবারের মতো টেলিভিশন সাক্ষাৎকার দেন জোলানি। এতে তিনি বলেছিলেন, তার গোষ্ঠী ‘ইসলামিক আইনের’ যে ব্যাখ্যা দেবে, সিরিয়া সেই অনুযায়ী শাসিত হবে। তবে কয়েক বছর পর জোলানির মধ্যে পরিবর্তন আসে। তিনি আল-কায়েদার মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোয় ‘বিশ্বব্যাপী খেলাফত’ প্রতিষ্ঠার প্রকল্প থেকে সরে আসেন। এমন কিছুর পরিবর্তে সিরিয়া সীমান্তের ভেতরে নিজের গোষ্ঠীর তৎপরতা সীমাবদ্ধ করেন জোলানি। তার এ পরিবর্তনকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। তারা মনে করেন, এর মধ্য দিয়ে জোলানির গোষ্ঠীটি বহুজাতিক বা আন্তদেশীয় গোষ্ঠীর বদলে একটি জাতীয় গোষ্ঠী হিসেবে আবির্ভূত হয়।

২০১৬ সালের জুলাইয়ে বাশার সরকার আলেপ্পোর নিয়ন্ত্রণ নেয়। তখন বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো ইদলিবের দিকে চলে যায়। সিরিয়ার এ অঞ্চল তখনো বিদ্রোহীদের দখলে। ২০১৬ সালে জোলানি প্রকাশ্যে আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করার ঘোষণা দেন। পাশাপাশি আল-নুসরা বিলুপ্ত করেন। গঠন করেন নতুন সংগঠন জাভাত ফাতেহ আল-শাম। ২০১৭ সালের শুরুর দিকে আলেপ্পো থেকে হাজার হাজার যোদ্ধা ইদলিবে পালিয়ে আসেন। এ সময়ে বিদ্রোহীদের ছোট ছোট অনেক গোষ্ঠী ও নিজের জাভাত ফাতেহ আল-শাম নিয়ে এইচটিএস গঠন করেন জোলানি। এইচটিএসের ঘোষিত লক্ষ্যই ছিল বাশার আল-আসাদের স্বৈরাচারী শাসন থেকে সিরিয়াকে মুক্ত করা। এইচটিএস আজ এই লক্ষ্য অর্জনের ঘোষণা দিল।

এইচটিএসের অন্য লক্ষ্যের মধ্যে আছে সিরিয়া থেকে ‘ইরানের সব সশস্ত্র গোষ্ঠীকে বিতাড়িত করা’। নিজেদের দেওয়া ‘ইসলামি আইনের’ ব্যাখ্যা অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করা। পর্যবেক্ষকদের মতে, বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ‘সবচেয়ে কার্যকর’ ভূমিকা পালন করেছে এইচটিএস ও এর প্রধান জোলানি।

 

পাঠকের মতামত

আলহামদুলিল্লাহ, বাংলাদেশের মত সিরিয়াও শয়তান মুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে সিরিয়া থেকে নেওয়া উচিত। দুনিয়ার দুই নম্বর সুপার পাওয়ার রাশিয়ার সরাসরি ব্যাকিং থাকার পরও বাশার আল আসাদ বাঁচতে পারেনি। ভারতকেতো আমরা নস্যি তুল্য মনে করি। তার পা চেটে ক্ষমতায় যাওয়া বা থাকার যে প্রবণতা তা থেকে অবশ্যই আমাদেরকে বের হয়ে আসতে হবে।২০২৪ সাল প্রমাণ করেছে জনগণই শক্তির প্রকৃত উৎস, বিদেশী শক্তি বা প্রয়াত বাপ দাদারা কেহ ক্ষমতার উৎস না। চলমান ঘটনা প্রবাহ থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর শিক্ষা নিবে ইহাই জনগণের প্রত্যাশা।

নাজিম আহমেদ
৮ ডিসেম্বর ২০২৪, রবিবার, ৬:৩৪ অপরাহ্ন

বিশ্বজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

Hamdard

বিশ্বজমিন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status