দেশ বিদেশ
আলিফ হত্যা মামলা নিয়ে আইনজীবীদের ক্ষোভ
স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে
২ ডিসেম্বর ২০২৪, সোমবারচট্টগ্রাম আদালতের সামনে সনাতন জাগরণ মঞ্চের নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীর সমর্থকরা এডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করেছিলেন। সেই হত্যাকাণ্ডে প্রকাশ্যে উস্কানি দেয়ার অভিযোগ রয়েছে চিন্ময় ও তার সমর্থক আইনজীবীদের বিরুদ্ধে। তবে নিহত আলিফের বাবার দায়ের করা হত্যা মামলায় ওই আইনজীবী ও চিন্ময়ের নাম নেই। আর এই ঘটনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আলিফের সহকর্মী আইনজীবীরা। এক আইনজীবী মানবজমিনকে বলেন, ‘একেবারে মিডিয়ার সামনেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। চিন্ময়ের আইনজীবীরা প্রকাশ্যে ওই হত্যাকাণ্ডে উস্কানি দিয়েছে। তারা বাইরে থেকে সশস্ত্র জঙ্গিদের আদালতে এনে জড়ো করিয়েছিলেন। আর চিন্ময় হ্যান্ড মাইক দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যেতে বলে সমর্থকদের উস্কানি দিয়েছেন। চিন্ময়ের আইনজীবীরাও সংঘর্ষে জড়িয়েছিলেন। কিন্তু এই হত্যা মামলায় তাদের আসামি করা হয়নি। সেটা আসলেই রহস্যজনক। কেন এমনটা হয়েছে সেটা ভালোভাবে খোঁজ নেয়া দরকার। এই খুনিরা বেঁচে গেলে আলিফের আত্মা কষ্ট পাবে। জানা যায়, আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় তিনদিন পর শুক্রবার রাতে তার বাবা জামাল উদ্দিন নগরের কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় ৩১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১০ থেকে ১৫ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় চিন্ময়সহ হত্যাকাণ্ডে উস্কানিদাতা আইনজীবীদের নাম ছিল না। নিহত সাইফুলের সহকর্মী এডভোকেট জোবায়ের বলেন, হত্যা মামলার আসামিদের বিষয়ে কথা হচ্ছে। বিষয়টি আসলেই বলার মতো। তবে শহীদ সাইফুলের বাবা খুব নরম হৃদয়ের মানুষ। উনার কথা হচ্ছে যারা সরাসরি হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল না, তাদের আসামি করা যাবে না। ভিডিও ফুটেজে সাইফুলকে কোপানোর সময় এই আইনজীবীদের দেখা যায়নি। তাই তিনি অভিযুক্ত আইনজীবীসহ চিন্ময়ের নাম রাখেননি। এটা উনার মহানুভবতা বলতে পারেন। এদিকে রোববার দুপুরে আদালত প্রাঙ্গণে নিহত সাইফুল ইসলামের জন্য শোক র্যালি করেছেন তার সহকর্মীরা। সেখানে তারা আলিফ হত্যার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। একইসঙ্গে তারা মামলায় বহিষ্কৃত ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীসহ উস্কানিদাতা আইনজীবীদের নামে মামলা না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এদিকে সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়েরকৃত মোট পাঁচটি মামলায় ৩৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৬ জনকে আলিফের বাবার দায়ের করা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
কোতোয়ালি থানার তদন্ত কর্মকর্তা সৈয়দ ওমর বলেন, সাইফুল হত্যাকাণ্ডের সময় দায়েরকৃত মোট ৫টি মামলায় এ পর্যন্ত ৩৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর গতকাল কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। তবে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। এদিকে আগামীকাল মঙ্গলবার বহিষ্কৃত ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীর জামিন আবেদনের শুনানি হবে। বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মফিজুর রহমান, বলেন, আগামী ৩রা ডিসেম্বর মঙ্গলবার মহানগর দায়রা জজ মো. সাইফুল ইসলামের আদালতে চিন্ময়ের শুনানি হবে। শুনানির এইদিন আগেই ধার্য হয়েছিল। প্রসঙ্গত, গত ২৬শে নভেম্বর রাষ্ট্রদ্রোহের এ মামলায় জামিন নাকচ করে চিন্ময় দাশকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন চট্টগ্রামের ষষ্ঠ মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক কাজী শরীফুল ইসলাম। ওই আদেশের পর আদালত প্রাঙ্গণে প্রিজন ভ্যান ঘিরে বিক্ষোভ করে সনাতনী সম্প্রদায়ের লোকজন। আড়াই ঘণ্টা পর পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে চিন্ময় দাশকে কারাগারে নিয়ে যায়। একপর্যায়ে চিন্ময়ের সমর্থকরা আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে হত্যা করেন।