খেলা
ব্যাটারদের কাছে ভালো কিছুর আশায় বাংলাদেশ
স্পোর্টস রিপোর্টার
৩০ নভেম্বর ২০২৪, শনিবারদুঃসময় যেন পিছু ছাড়ছে না বাংলাদেশের। ভারত সফরে শুরু, এরপর ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকা, সংযুক্ত আরব আমিরাতে আফগানিস্তান-সবগুলো সিরিজেই হেরেছে টাইগাররা। এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়েও প্রথম টেস্টে বড় ব্যবধানে হার দুঃসময় আরও বাড়িয়েছে মিরাজ-লিটনদের। আজ শুরু হচ্ছে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট। কিংস্টনে রাত ৮টায় শুরু হতে যাওয়া এই ম্যাচ বাংলাদেশের জন্য বাঁচা-মরার লড়াই। সিরিজ বাঁচাতে এই ম্যাচে জয়ের বিকল্প নেই মেহেদী হাসান মিরাজের দলের। আর এই লড়াইয়ে ব্যাটারদেরই চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। প্রথম টেস্টে বল হাতে বাংলাদেশের শুরুটা ভালো হয়। তবে লেজের লড়াইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ চাপ কাটিয়ে ওঠে। ২৬১ রানে ৭ উইকেট হারানো দলটি শেষ পর্যন্ত ৯ উইকেটে ইনিংস ঘোষণা করে ৪৫০ রানে। ৯ নম্বরে নামা কেমার রোচকে নিয়ে ১৪০ রানের জুটি গড়েন ৬ নম্বরে নামা জাস্টিন গ্রেভস। এরপর ব্যাটিংয়ে নেমে পুরোনো রোগে ভোগে বাংলাদেশ।
মুমিনুল হক ও জাকের আলী ছাড়া কেউই উইকেটে থিতু হতে পারেননি। মুমিনুল ৫০ আর জাকের ৫৩ রান করেন। এছাড়া লিটনের ব্যাট থেকে আসে ৪০ রান। ১৮১ রানের লিড পাওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ অবশ্য দ্বিতীয় ইনিংসে বেশিদূর এগোতে পারেনি। তাসকিন আহমেদ একাই ৬ উইকেট নিয়ে ধসিয়ে দেন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। এতে করে অন্তত লড়াই করার সুযোগ হয় বাংলাদেশের। তবে তাসকিনের দুর্দান্ত বোলিংও সেদিন জাগাতে পারেনি বাংলাদেশের ব্যাটারদের। ওপেনিং থেকে শুরু করে মিডল অর্ডার- সবখানেই ব্যর্থতা বজায় ছিল। শেষ পর্যন্ত ২০১ রানে হারে টাইগাররা। নাজমুল হোসেন শান্ত চোটে পড়ায় এই সিরিজে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মেহেদি হাসান মিরাজ। মিডল অর্ডারে একই কারণে নেই অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহীম। দুজনের না থাকা অবশ্যই ভোগাচ্ছে তবে এটাকে বড় করে দেখার সুযোগ নেই। কারণ ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট ও আফগানদের বিপক্ষে ওয়ানডে-দুজনই খেলছেন সবগুলো ম্যাচ কিন্তু বাংলাদেশ ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বের হতে পারেনি। ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মিরাজ ম্যাচ শেষে বলেছিলেন প্রথম ইনিংসে স্বাগতিকদের লেজের লড়াই থামাতে না পারাই বাংলাদেশের হারের অন্যতম কারণ। সেদিন তিনি বলেন, ‘আমরা সত্যিই ভালো বোলিং করেছি। তাসকিন ৬ উইকেট পেয়েছে, কিন্তু ৭ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর তারা জুটি গড়েছে। ম্যাচটা আমরা সেখানেই হেরে গেছি।’ অধিনায়ক যান অধিনায়ক আসেন, ব্যাটারদের নিয়ে বক্তব্য একই থেকে যায়। তবে মিরাজ যেন এবার সেটা স্বাভাবিক করতে চাইলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা এই ম্যাচে ভালো ব্যাটিং করিনি।’ স্কোরকার্ডেও তা পরিষ্কার। ৪৫০ রান মাথায় নিয়ে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৯ উইকেটে ২৬৯ রান তোলার পর ইনিংস ঘোষণা করেছিল বাংলাদেশ। তাসকিনের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তাদের দ্বিতীয় ইনিংসে ১৫২ রানে অলআউট হওয়ার পর জয়ের জন্য ৩৩৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৩২ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। ভালো ব্যাটিং করতে না পারার ভুল স্বীকার করে মিরাজ এরপর যা বলেছেন, তাতে অবাক হতেই হয়, ‘আমরা কিছু ভুল করেছি। কিন্তু সেটা হতেই পারে।’ ফলে সিরিজ বাঁচানোর লড়াইয়ে বাংলাদেশকে তাকিয়ে থাকতে হবে ব্যাটারদের দিকেই। সেদিকে তাকালে অবশ্য আশাবাদী হওয়ার খুব বেশি কারণ দেখা যায় না। দুই ওপেনার রীতিমতো রান খরায় ভুগছেন, ১৩ ইনিংসে ফিফটি নেই কারও। সেক্ষেত্রে একাদশে বদল আসতে পারে, ওপেনিংয়ে ফিরতে পারেন সাদমান। তবে তাকে নিয়েও আশা করার খুব বেশি কিছু নেই। মুমিনুল হক ধারাবাহিক নন, শাহাদাত হোসেন দীপু ফিরলেন কেন আর ফিরেই বা কি করছেন সেটা শুধু নির্বাচকরাই বলতে পারবেন। লিটন দাস তো যেন খামখেয়ালি শিল্পী, এত ভালো ব্যাটার অথচ মাঠে গেলেই যেন সেটা ভুলে যান। ফলে দিনশেষ ভরসা বোলাররাই। তারা অবশ্য দীর্ঘদিন ধরেই নিজেদের কাজটা ঠিকঠাক করে যাচ্ছেন। কিন্ত্ পাশে পাচ্ছেন না ব্যাটারদের। গেলো ম্যাচেই ব্যাটারদের নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন ৬ উইকেট নেওয়া তাসকিন আহমেদ। ‘এটা দুর্ভাগ্যজনক। ব্যাটিং ইউনিটের কাছ থেকে আরেকটু ভালো কিছু আশা করেছিলাম। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ খুব ভালো বোলিংও করেছে। আশা করি, পরেরবার দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারবো আমরা।’