অর্থ-বাণিজ্য
বাংলাদেশে ব্যবসা সম্প্রসারণে আগ্রহী ৬১ শতাংশ জাপানি প্রতিষ্ঠান
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
(১ মাস আগে) ২৭ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ৭:৩০ অপরাহ্ন
বিনিয়োগ সম্প্রসারণে জাপানি উদ্যোক্তাদের আগ্রহের তালিকায় শীর্ষে থাকা দেশগুলোর একটি এখন বাংলাদেশ। বাংলাদেশে বিনিয়োগ থাকা জাপানি প্রতিষ্ঠানের ৬১ শতাংশের বেশি এখানকার ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে চায়। আগামী এক থেকে দুই বছরের মধ্যে বিনিয়োগ সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
‘বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনার সুযোগ এবং প্রতিবন্ধকতা’ শীর্ষক এক জরিপ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলোর এমন অভিমত। মঙ্গলবার ঢাকায় আয়োজিত এক সেমিনারে জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেট্রো) জরিপ প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। হোটেল শেরাটন ঢাকায় ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফআইসিসিআই), জেট্রো, জাপান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশেন ইন ঢাকা (জেসিআইএডি) ও এইচএসবিসি ব্যাংক যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে।
প্রতিবেদনের বিস্তারিত তুলে ধরেন বাংলাদেশে জেট্রোর কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ ইউজি আনন্দ। প্রতিবেদনে বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর পাঁচটি বড় সম্ভাবনা এবং সাতটি প্রতিবন্ধকতার কথা ওঠে এসেছে। এতে বলা হয়, অন্তর্র্বতী সরকারের সংস্কার কার্যক্রমে এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হলে বিদেশি বিনিয়োগ টানার বড় সুযোগ রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সর্বশেষ জরিপে ৬১ দশমিক ২ শতাংশ জাপানি উদ্যোক্তা বাংলাদেশে ব্যবসা সম্প্রসারণে আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। অবশ্য এর আগের জরিপের তুলনায় এ হার ১০ দশমিক ৪ শতাংশীয় পয়েন্ট কম। দুই বছর আগের সে জরিপে এ হার ছিল ৭১ দশমিক ৬ শতাংশ।
জরিপে দেখা গেছে, ৩৫ শতাংশ জাপানি প্রতিষ্ঠান আগের ব্যবসার কোনো ধরনের সংকোচনের কথা চিন্তা করছে না। সাড়ে ৩ শতাংশ কোম্পানি বিনিয়োগ সংকোচন করেছে। তবে কোনো প্রতিষ্ঠানই বাংলাদেশ থেকে অন্য কোনো দেশে বিনিয়োগ সরিয়ে নেয়নি। অন্য যেসব দেশে তাদের বিনিয়োগ রয়েছে, সেখান থেকে কম-বেশি বিনিয়োগ সরিয়ে নিয়েছেন জাপানি উদ্যোক্তারা। বাংলাদেশে বর্তমানে ৩৫০টি জাপানি কোম্পানির বিনিয়োগ রয়েছে। ২০০৮ সালে থেকে প্রতিবছর এ হার বাড়ছে।
জরিপে দেখা গেছে, এ দেশের ব্যবসার পরিবেশ নিয়ে ২৬ দশমিক ২ শতাংশ প্রতিষ্ঠান অসন্তুষ্ট। ৪৪ দশমিক ৬ শতাংশ কিছুটা অসন্তুষ্ট। অন্যদিকে ২৪ দশমিক ৬ শতাংশ প্রতিষ্ঠান খুব সন্তুষ্ট। ৪ দশমিক ৬ শতাংশ মোটামুটি সন্তুষ্ট।
জরিপে জাপানি উদ্যোক্তারা বলেছেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগে অনেক ঝুঁকি যেমন রয়েছে, তেমনি অনেক সুবিধাও রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ৫ সুবিধা হচ্ছে– স্বস্তা শ্রম, জিডিপির প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা, স্থানীয়ভাবে কর্মী নিয়োগের সুবিধা, জমির সহজপ্রাপ্যতা ও সামাজিক স্থিতিশীলতা। এ ছাড়া স্থানীয় পণ্যও সংগ্রহ করা যায় তুলনামূলক সস্তায়। এসব সুবিধায় বাংলাদেশে উৎপাদন ব্যয় জাপানের তুলনায় ৬০ শতাংশ কম।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি প্রধান উপদেষ্টার পররাষ্ট্রবিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, বাংলাদেশ আর সস্তা শ্রমের জন্য বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে চায় না। সস্তা শ্রম আর জটিল বিনিয়োগ পরিবেশের বাস্তবতা থেকে বেরিয়ে আসতে চায় সরকার। এ জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
ঢাকায় জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি বলেন, তিন কারণে খুব দ্রুতই প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। এগুলো হচ্ছে– নির্বাচনের চাপ, এলডিসি থেকে উত্তরণ ও অন্য দেশের বিনিয়োগে আগ্রহ। বাংলাদেশে সংস্কারের এখনই উপযুক্ত সময়।