ঢাকা, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, বুধবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

পোশাক খাত

সুখবরের বিপরীতে শঙ্কা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
১৩ নভেম্বর ২০২৪, বুধবারmzamin

রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পে শ্রমিক অসন্তোষে কারখানা বন্ধসহ নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও অনিশ্চয়তার মধ্যেও রপ্তানি আয়ের ইতিবাচক ধারা ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। গত অক্টোবর মাসে তৈরি পোশাকের রপ্তানি আয় বেড়েছে প্রায় ২৩ শতাংশ। গত আগস্ট মাসের শেষে শুরু হওয়া শ্রমিক অসন্তোষের কারণে পোশাক রপ্তানি নিয়ে বড় শঙ্কা  তৈরি হয়েছিল, যা এখনো চলমান। তবে প্রতিকূলতার মধ্যেও দেশের রপ্তানি আয়ে বড় সুখবর এসেছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যমতে, অক্টোবর মাসে এ খাত ৩৩০ কোটি ডলার মূল্যের রপ্তানি করেছে, আগের অর্থবছরের একই মাসের রপ্তানি আয় ছিল ২৬৮ কোটি ডলারের। এক বছরের ব্যবধানে এ খাতের রপ্তানি আয় বেড়েছে ২২.৮ শতাংশ। 

এদিকে বকেয়া বেতনের দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন শ্রমিকরা। এতে বিভিন্ন শিল্প এলাকায় গত দুই দিনে ৪৪টি কারখানা বন্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে শিল্প পুলিশ। ফলে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন উদ্যোক্তারা। 

শ্রমিক নেতারা বলছেন, গুটিকয়েক অযোগ্য মালিকের জন্য মাশুল গুনতে হচ্ছে পুরো তৈরি পোশাক শিল্পকে। আর অসন্তোষ নিরসনে ভাঙচুরকারী শ্রমিকদের সঙ্গে ইন্ধনদাতাদেরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায় ব্যবসায়ীরা। 
ইপিবি’র ভাইস চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) প্রশাসক আনোয়ার হোসেন বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর শ্রমিক অসন্তোষ থাকলেও অক্টোবর মাসে পোশাক খাতে রপ্তানি বেড়েছে। পোশাক খাতে রপ্তানি গত বছরের তুলনায় এবার অক্টোবরে ৬০০ মিলিয়ন এবং গত চার মাসে (জুলাই থেকে অক্টোবর) ১.৩ বিলিয়ন ডলার বেড়েছে।

ইপিবি’র তথ্য বলছে, সেপ্টেম্বরের ধারাবাহিকতায় টানা দ্বিতীয় মাসে পণ্য রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির মুখ দেখেছে বাংলাদেশ। আগের বছরের অক্টোবরের তুলনায় গত অক্টোবরে শুধু পোশাক খাতের ওপর ভর করে রপ্তানি আয় ২০.৬ শতাংশ বেড়েছে। বিভিন্ন শিল্প এলাকায় শ্রমিক-অস্থিরতায় উৎপাদন ব্যাহত হওয়া সত্ত্বেও এমন অগ্রগতি হয়েছে।
ইপিবি’র তথ্যমতে, অক্টোবরের রপ্তানি আয়ে নিট পোশাক রপ্তানি আয় ১৮৬ কোটি ডলার, আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৫০ কোটি ডলার। আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে আয় বেড়েছে ২৪.৬ শতাংশ। আর ওভেন পোশাকের রপ্তানি হয়েছে ১৪৪ কোটি ডলার, আগের বছরের অক্টোবরের ১২০ কোটি ডলারের চেয়ে তা বেড়েছে ২০.৫৪ শতাংশ।
জানা গেছে, সরকার পরিবর্তনের পর আগস্টের শেষ দিকে সাভার ও আশুলিয়ায় তৈরি পোশাক শিল্পে শুরু হয় শ্রমিক অসন্তোষ। এরপর দফায় দফায় বৈঠকে বসে সরকার, মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিসহ নানা পক্ষ। বেতন-ভাতা পরিশোধে ব্যাংক থেকেও দেয়া হয়েছে বিশেষ ঋণ সুবিধা।

সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মেনে নেয়া হয়েছে শ্রমিকদের ১৮ দফা। তারপরও মেলেনি সুফল। নভেম্বরে এসেও তাই শ্রমিক আন্দোলনে উত্তাল গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন পোশাক কারখানা। মাসের পর মাস চেষ্টার পরও কেন থামানো যাচ্ছে না দেশের প্রধান রপ্তানি খাতের এ অস্থিরতা? 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে জুলাইয়ের মাঝামাঝি সৃষ্ট সংঘাতে উৎপাদন ব্যাহত হয়। এরই ধারাবাহিকতা ৫ই আগস্ট সরকার পতনের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়। এ সময় গাজীপুর ও ঢাকার সাভারে শ্রমিক অসন্তোষের বেশ কয়েকদিন অনেক পোশাক কারখানা বন্ধ থাকে, রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হয়। হুমকির মুখে পড়ে তৈরি পোশাক শিল্প। সেই শ্রমিক অসন্তোষ পুরোপুরি কাটেনি। এখনো অব্যাহত রয়েছে। গত শনিবারও গাজীপুরে বকেয়া বেতনের দাবিতে টিঅ্যান্ডজেড অ্যাপারেলস গ্রুপের পাঁচটি কারখানার পোশাক শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এমন পরিস্থিতিতে পোশাক শিল্পমালিকদের কপালে ভাঁজ পড়ে। ফলে আবারো শ্রমিক অস্থিরতার আশঙ্কা করছেন তারা। 
বিজিএমইএ গত ১৯শে অক্টোবর সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর পোশাক শিল্পে শ্রমিক অসন্তোষের কারণে অন্তত ৪০ কোটি ডলারের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। বর্তমান বিনিময় হার (প্রতি ডলার ১২০ টাকা) হিসাবে টাকার অঙ্কে ওই অর্থের পরিমাণ ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।

আন্দোলনরত শ্রমিকরা বলেন, গত এপ্রিল মাস থেকে কারখানা বন্ধ ছিল। পরে কারখানা খুললেও দুই মাসের বেতন না দিয়ে কর্তৃপক্ষ টালবাহানা শুরু করে। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বারবার বেতন পরিশোধের তারিখ দিলেও কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করেনি। বারবার সময় দেয়ার পরও বেতন পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় শ্রমিকরা এখন আর কারও কথা আর বিশ্বাস করে না।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আন্দোলনকারী শ্রমিকদের সঙ্গে রোববার সকালে লাঠিসোটা হাতে কিছু বহিরাগত যোগ দিয়েছে। শ্রমিকদের অবরোধের জায়গার উভয় পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। 

জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল ইসলাম আমিন বলেন, কম মজুরি হওয়ায় শ্রমিকরা অতি কষ্টে জীবনযাপন করছেন। তবে অনেক গার্মেন্টস মালিক শ্রমিকদের বেতন-ভাতা না দিয়ে পুঁজির বড় অংশ বিদেশে পাচার করে দিচ্ছেন। এর প্রভাব পড়ছে পুরো শ্রম খাতে।

গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, শ্রমিকদের আমরা একাধিকবার বোঝানোর চেষ্টা করেছি, আমাদের অফিসে এসে বসো। কিন্তু তারা নাছোড়বান্দা, মহাসড়ক ছাড়বে না। ফলে এ এলাকার গত দুদিনে ৪৪টি কারখানা ছুটি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। 

খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে পোশাক খাতে বিশৃঙ্খলা থামছেই না। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পোশাক খাতে অস্থিরতা লেগেই আছে। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে পোশাক খাত চরম সংকটে পড়বে। কাজেই পোশাক খাতের অস্থিরতা নিরসনে আশু পদক্ষেপ নেয়া আবশ্যক। তা না হলে একদিকে যেমন বিদেশি বিনিয়োগ বিঘ্নিত হবে, অন্যদিকে পোশাক খাতের ক্রেতারাও মুখ ফিরিয়ে অন্য দেশে চলে যাবে। 

অস্থিরতার মধ্যেও রপ্তানি আয় বাড়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে আমাদের ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এরপরও রপ্তানি আয় বাড়ায় আমরা খুশি। তবে আমাদের অর্ডার কিন্তু কমছে। জানি না আগামী মাসগুলোতে কী হবে। বিকেএমইএ সভাপতি বলেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিরতার মধ্য দিয়ে গিয়েছে। আমাদের হিসাবে জুলাই মাসের মধ্যে এক সপ্তাহেই পোশাক শিল্পে ক্ষতি হয়েছে ১ বিলিয়ন ডলারের উপরে। আর ব্যাংক বন্ধ থাকায় তো রপ্তানির ওপর সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এই অস্থিরতা-অনিশ্চতা না থাকলে রপ্তানি আরও বাড়তো বলে মনে করেন তিনি।

পাঠকের মতামত

The journalist should inquire, why the owners of the factories are failing to pay the salary of the workers. If it is due to the freezing of some bank accounts of some owners then the government should release the accounts, freezing on political ground should be stopped. Government should not disturb the business environment rather should facilitate irrespective of any political affiliation.

M Nabi
১৪ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ৯:১৮ পূর্বাহ্ন

কোম্পানি মালিকেরা শ্রমিকদের বেতন দেয়া বন্ধ রাখে কেন , তাদের তো ব্যাঙ্কে জমানো টাকা থাকেনা , তারা খাবে কিভাবে ??

কাজী মুস্তাফা কামাল
১৩ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ৫:৫২ পূর্বাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status