শেষের পাতা
‘রেকসোনাকে হত্যা করে পাপ শেষ করলাম’
আশরাফুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ থেকে
২৭ জুলাই ২০২২, বুধবার
কিশোরগঞ্জে পরকীয়ার জের ধরে ৩ সন্তানের জননী রেকসোনা আক্তার (৩৫) কে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আসামি গ্রেপ্তার ও আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদানসহ ৪৮ ঘণ্টায় চার্জশিট দেয়া হয়েছে। গত সোমবার মামলার একমাত্র আসামি মো. মামুন (৩০) কে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) মো. তরিকুল ইসলাম। এর আগে শনিবার রাতে নিহত গৃহবধূ রেকসোনা আক্তারের স্বামী মো. তাইজুল বাদী হয়ে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় মো. মামুনকে আসামি করে কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় মামলা করেন। মো. মামুন কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের চরশোলাকিয়া এলাকার সোহরাব উদ্দিনের ছেলে ও নিহত গৃহবধূ রেকসোনার স্বামী তাইজুলের ভাগ্নে। শনিবার দুপুরে ঘটনার পর পরই হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা ছুরি ও ক্রিকেট ব্যাটসহ তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অন্যদিকে নিহত রেকসোনা আক্তার জেলা শহরের হারুয়া কলেজ রোড এলাকার একটি বাসায় স্বামী মো. তাইজুল ও ৩ শিশুসন্তানকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন। সোমবার রাতে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার গোলঘরে অনুষ্ঠিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান কিশোরগঞ্জ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আল আমিন হোসাইন।
এ সময় কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মোহাম্মাদ দাউদ ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) মো. তরিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আল আমিন হোসাইন জানান, ২০০৫ সালে তাইজুলের সঙ্গে রেকসোনার বিয়ে হয়েছিল এবং তাদের দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। পেশায় রঙমিস্ত্রী ভাগ্নে মামুন পাশের ক্লাসিক গলির ভাড়া বাসায় থাকার সুবাদে মামা তাইজুলের বাসায় তার অবাধ যাতায়াত ছিল। একপর্যায়ে মামী রেকসোনার সঙ্গে মামুন পরকীয়ার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, মামুন তাদের বলেছে, ‘আমি অবৈধ সম্পর্ক শেষ করতে চেয়েছি। কিন্তু রেকসোনার জন্য পারিনি। আমি অনেক পাপ করেছি। রেকসোনাকে হত্যা করে সেই পাপ শেষ করলাম।’ মামলার তদন্তে নিহত রেকসোনার সঙ্গে আসামি মামুনের পরকীয়ার সম্পর্কের ফলে মামুনের নিজ পরিবারের ভাঙন ও টানাপড়েনের কারণে মামুন পরিকল্পিতভাবে একাই এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে মন্তব্য করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আল আমিন হোসাইন জানান, শনিবার দুপুরে রেকসোনা রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ সময় ভাগ্নে মামুন ঘরে ঢুকে রেকসোনার সঙ্গে ঝগড়া শুরু করে। একপর্যায়ে মামুন ক্রিকেট খেলার ব্যাট দিয়ে রেকসোনাকে আঘাত করে এবং পরে ছুরি দিয়ে তাকে জবাই করে।
এতে ঘটনাস্থলেই রেকসোনার মৃত্যু হয়। ঘটনার পর পরই তড়িৎ অভিযান চালিয়ে পরিহিত প্যান্টে রক্তমাখা অবস্থায় পুলিশ মামুনকে আটক করে। পরদিন রোববার আদালতে পাঠানোর পর বিকালে কিশোরগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাশেদুল আমিনের কাছে মামী হত্যার বিবরণ দিয়ে মামুন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম (বার) এর নিবিড় তদারকিতে পুলিশ নিরবচ্ছিন্নভাবে সুষ্ঠু তদন্তে মামলার ঘটনা সংশ্লিষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ ও জব্দকৃত আলামতসহ তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে দ্রুততম সময় অর্থাৎ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মামলার তদন্তকাজ শেষ করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। দ্রুততম এই সময়ের মধ্যে মামলার আসামি গ্রেপ্তারসহ তদন্তকাজ শেষ করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করায় বাদী মো. তাইজুল সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
পাঠকের মতামত
শুধু মামী নন ভাগ্নে ও সমান ভাবে দোষী ।
এরকমই হওয়া উছিত তবে মামুনকেও একই ভাবে হত্যা করা জরুরী ,এদের কারনে স্বামী স্ত্রীর পবিত্র সম্পর্কটা বিলুপ্ত হওয়ার অবস্থা