ঢাকা, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিঃ

শরীর ও মন

কোলোরেক্টাল ক্যান্সার-এর উপসর্গ ঝুঁকি ও কারণসমূহ

ডা. মোহাম্মদ তানভীর জালাল
১১ নভেম্বর ২০২৪, সোমবার

কোলোরেক্টাল ক্যান্সার হলো মলাশয় এবং মলদ্বারের ক্যান্সার।
কোলোরেক্টাল ক্যান্সার যখন উৎপন্ন হয় তখন মলাশয় এবং মলদ্বারের আস্তরণযুক্ত কোষগুলো নিয়ন্ত্রণের বাইরে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। এই কোষগুলো টিউমার তৈরি করে, যা ক্যান্সার (মেটাস্ট্যাটিক টিউমার) নামে পরিচিত।
কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের উপসর্গসমূহ
প্রাথমিক পর্যায়ে কোলোরেকটাল ক্যান্সার সাধারণত কোনো ধরনের উপসর্গ  দেখায় না।
কলোরেক্টাল ক্যান্সার’র সাধারণ উপসর্গগুলো হলো:
-কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া;
-রেকটাল রক্তপাত বা ক্র্যাম্পিং;
-মলে বা মলের রক্তের ঘন কালো দাগ;
-পেটে অস্বস্তি বা ফোলাভাব;
-ক্লান্তি এবং ক্ষুধা হ্রাস;
-পেলভিক অঞ্চলে ব্যথা;
কলোরেক্টাল ক্যান্সারের ঝুঁকি এবং কারণসমূহ
বয়স: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কোলোরেক্টাল ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
লিঙ্গ: পুরুষদের মধ্যে কলোরেক্টাল ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অত্যধিক থাকে।
পলিপস: কী ধরনের বৃদ্ধিগুলিমলাশয় বা মলদ্বারের ভেতরে প্রাচীরের উপর উপস্থিত থাকে যা ক্যান্সার পূর্ববর্তী লক্ষণ হয়। অ্যাডেনোমা হলো এক ধরনের পলিপ, যা সাধারণত কোলোরেক্টাল ক্যান্সার’র কারণ হয়।
ব্যক্তিগত ইতিহাস: যদি একজন রোগীর আগের থেকেই কোলোরেক্টাল ক্যান্সার থাকে, তাহলে ৬০ বছরের পূর্বে পুনরায় রোগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পরিবার: কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের যদি কোনো পারিবারিক ইতিহাস থেকে থাকে।
খাদ্যবিধি বা ডায়েট: নির্দিষ্ট ধরনের ডায়েটে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট ও কোলেস্টেরল এবং অল্প পরিমাণ ফাইবার থাকে ফলে কোলোরেক্টাল ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
জীবনশৈলী: ধূমপান করা, অ্যালকোহল গ্রহণ এবং অতিরিক্ত ওজন কোলোরেক্টাল ক্যান্সার ঘটাতে পারে।
ডায়াবেটিস: ডায়াবেটিস যুক্ত ব্যক্তিদের কলোরেক্টাল ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অধিক থাকে।
কলোরেক্টাল ক্যান্সারের রোগ নির্ণয়:
সম্পূর্ণ রক্ত ??গণনা (ঈইঈ): এই ধরনের পরীক্ষা রক্তে বিভিন্ন ধরনের কোষ পরিমাপ করতে সাহায্য করে।
লিভার এনজাইম: লিভার কতোটা ভালো কাজ করছে তা পরীক্ষা করার জন্য এই রক্ত ??পরীক্ষা করা হয়।
টিউমার চিহ্নিতকারী: টিউমার মার্কার, কোলোরেক্টাল ক্যান্সার কোষ দ্বারা তৈরি পদার্থের উপস্থিতি পরীক্ষা করার জন্য রক্ত ??পরীক্ষা করা হয়।
ক্যান্সার কোষে উচ্চমাত্রার জিন মিউটেশন, মাইক্রোস্যাটেলাইট অস্থিরতা (গঝও) এবং ক্যান্সার কোষে অমিল মেরামতে (গগজ) কোনো পরিবর্তন আছে কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য গঝও এবং গগজ পরীক্ষা করা হয়।
-সিটি স্ক্যান;
-পেটের আল্ট্রাসাউন্ড;
-এন্ডোরেক্টাল এমআরআই;
-পিইটি সিটি স্ক্যান।
ডায়াগনস্টিক কোলোনোস্কোপি: কোলনোস্কোপি মলদ্বারের মধ্যদিয়ে ঢোকানো প্রান্তে একটি ছোট ভিডিও ক্যামেরাসহ একটি পাতলা, অনমনীয়, হালকা টিউব ব্যবহার করে পুরো কোলন এবং মলদ্বার পরীক্ষা করে।
বায়োপসি: টিস্যু বা টিস্যুর একটি ছোট টুকরো সাধারণত কোলন থেকে সরানো হয় এবং কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের জন্য পরীক্ষা করার জন্য পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়।
চিকিৎসা: নিম্ন্নলিখিত কলোরেক্টাল ক্যান্সার’র সাধারণ চিকিৎসাসমূহ
সার্জারি বা অস্ত্রোপচার
কোলোরেক্টাল ক্যান্সারে হস্তক্ষেপ করার জন্য সাধারণত সার্জারি বা অস্ত্রোপচার প্রথম সারির পছন্দ হিসেবে ধরা হয়, পুষি হতো প্রাথমিক পর্যায়ের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে। টিউমার থেকে সরানো হয় এবং সংলগ্ন লিম্ফ (ক্ষতিকর পদার্থ ফিল্টারকারী) নোডগুলোও সরানো হয়। পিছনের দিকে সাধারণত অন্ত্রটিকে সেলাই করা হয় তবে, কখনো কখনো মলদ্বার সরিয়ে ফেলা হয় এবং মল সংগ্রহের জন্য কোলোস্টোমি ব্যাগ ব্যবহার করা হয়।
কেমোথেরাপি: কেমোথেরাপি হলো ক্যান্সারবিরুদ্ধ ড্রাগ বা ওষুধের ব্যবহার, যার মাধ্যমে খুবই দ্রুত বিভাজিত হওয়া কোষগুলো যা ক্যান্সারের কারণ হয় তার বৃদ্ধিকে ধীরগতিতে অথবা বন্ধ করতে সাহায্য করে।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকা সত্ত্বেও, কেমোথেরাপি ক্যান্সার চিকিৎসার বিকল্প হিসেবে এখনো সর্বাধিক রূপে ব্যবহার করা হয়। রেডিয়েশন (তেজস্ক্রিয়) এবং সার্জারি থেকে ভিন্ন যা কেবল নির্দিষ্ট অবস্থানে থাকা ক্যান্সার কোষগুলো গিরি চিকিৎসা করে সেখানে কেমোথেরাপির ড্রাগস বা ওষুধগুলো শরীরের ভিন্ন ভিন্ন অংশে মেটাস্টেটেড (ছড়িয়ে পড়া) ক্যান্সার কোষগুলোকে মেরে ফেলতে পারে।
রেডিয়েশন থেরাপি: রেডিয়েশন থেরাপি হলো এক ধরনের ক্যান্সার চিকিৎসা যা অতি উচ্চমাত্রার রেডিয়েশন বিম্‌ বা তেজস্ক্রিয় রশ্মি ব্যবহার করে ক্যান্সার কোষগুলোকে হত্যা করতে, টিউমারগুলোকে সংকুচিত করতে ব্যবহার করা হয়। রেডিয়েশন ক্যান্সার কোষগুলোকে মেরে ফেলে তাদের ডিএনএগুলোকে ধ্বংস করার মাধ্যমে। ক্যান্সার কোষগুলোর ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা আর বিভাজিত হতে পারে না এবং তার ফলে মারা যায়। তখন সেগুলো শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই অপসারিত হয়ে যায়।
টার্গেটেড (নির্দিষ্ট) ড্রাগ থেরাপি: টার্গেটের থেরাপি হলো এক ধরনের ক্যান্সার চিকিৎসা যা ড্রাগ বা ক্যান্সারের ওষুধগুলোর ব্যবহার করে। যাই হোক এটি প্রচলিত কেমোথেরাপি থেকে ভিন্ন হয়, চা ড্রাগ বা ওষুধগুলো ব্যবহার করে ক্যান্সার কোষগুলোকে মেরে ফেলে।
টার্গেটেড থেরাপির মাধ্যমে, ক্যান্সারের নির্দিষ্ট জিনগুলো, প্রোটিনগুলো, টিস্যু বা তন্তুগুলোর বহির অংশ যাও ক্যান্সারের বৃদ্ধি এবং বেঁচে থাকতে সাহায্য করে তাকে টার্গেট বা মূল লক্ষ্য করা হয়। টার্গেটেড থেরাপি সাধারণত কেমোথেরাপি এবং অন্যান্য প্রক্রিয়াগুলোর সঙ্গে করা হয়ে থাকে।
ইমিউনোথেরাপি: ইমিউনোথেরাপি (বায়োলজি থেরাপি নামেও যাহা পরিচিত) এক ধরনের নব্য চিকিৎসা পদ্ধতি যেখানে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বুস্ট বা বাড়িয়ে তোলা হয় শরীরকে নিজের থেকে ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করার জন্য। ইমিউনোথেরাপি রোগপ্রতিরোধের ক্ষমতা ব্যবস্থাকে কার্যকরভাবে উন্নতি বা পুনরুদ্ধার করতে শরীরের মাধ্যমে সৃষ্ট বা পরীক্ষাগারে তৈরি পদার্থ ব্যবহার করে।


লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, কলোক্টেরাল, ল্যাপারোস্কপিক ও জেনারেল সার্জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। 
চেম্বার: ১৯, গ্রীন রোড, একে কমপ্লেক্স, লিফ্‌ট-৪, ঢাকা।
যোগাযোগ: ০১৭১২-৯৬৫০০৯।

শরীর ও মন থেকে আরও পড়ুন

   

শরীর ও মন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status