ঢাকা, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, বুধবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিঃ

বাংলারজমিন

বিদ্যুতের রেট নিয়ে জটিলতা

বিল ডাকাতিয়ায় জলাবদ্ধতা বোরো চাষে অনিশ্চয়তা

সুমন ব্রহ্ম, ডুমুরিয়া (খুলনা) থেকে
১০ নভেম্বর ২০২৪, রবিবারmzamin

চলতি মৌসুমের অতি বৃষ্টিতে ডুমুরিয়া উপজেলার ‘বিল ডাকাতিয়া’সহ সকল বিল জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। গত সেপ্টেম্বর থেকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ প্রশাসনের উদ্যোগে শোলমারী স্লুইস গেটের পলি অপসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়। সেখানে কোনো সাফল্য আসেনি। উপজেলা প্রশাসন আসন্ন মৌসুমে বোরো চাষের আশায় গত অক্টোবর মাসে জরুরি ভিত্তিতে কয়েকটি বিলে সেচ পাম্প বসিয়ে পানি নিষ্কাশনের উদ্যোগ নেয়। সেখানে বিএডিসি’র সঙ্গে খুলনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মধ্যে বিদ্যুতের রেট (দাম) নিয়ে রশি টানাটানি চলে। যে কারণে বিগত ২২ দিনেও বিদ্যুৎ সংযোগ না দেয়ায় সেচ পাম্পগুলো অলস পড়ে রয়েছে।
উপজেলা কৃষি ও মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, অতি বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় উপজেলায় সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত বিল ডাকাতিয়াসহ সংলগ্ন রংপুর, রঘুনাথপুর, রুদাঘরা, খর্ণিয়া, আটলিয়া, মাগুরাঘোনা, গুটুদিয়া ও ডুমুরিয়া সদর ইউনিয়নের ১০ হাজারেরও অধিক চিংড়ি ঘের তলিয়ে (ভেসে) যাওয়ায় কোটি কোটি টাকার মাছের ক্ষতি হয়েছে। ইতিমধ্যে কোটি কোটি টাকার সবজির ক্ষতির পরও আসন্ন বোরো মৌসুমে ৮ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান ও দেড় হাজার হেক্টর জমির সবজি চাষ হুমকির মুখে পড়েছে। 
ডুমুরিয়ার বিল ডাকাতিয়ার তলদেশ নিচু ও বাইরের নদীর তলদেশ উঁচু হয়ে যাওয়ায় সম্পূর্ণ তলানো থাকলেও শোলমারি স্লুইস গেটের মুখ থেকে পলি অপসারণ করলেও আশানুরূপ পানি বের হচ্ছে না। আসন্ন বোরো মৌসুম বাঁচাতে উপজেলা প্রশাসন থেকে বিভিন্ন বিলের স্লুইস গেটের মুখে পলি ও খালের মুখে বাঁধ অপসারণসহ নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। 
জলাবদ্ধ এলাকার মানুষের চাহিদা ও প্রশাসনের চেষ্টায় বিলের পানি নামিয়ে ধান চাষের আশায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) থেকে ২২ দিন আগে কয়েকটি সেচ পাম্প বিতরণ করেছে। তারমধ্যে উপজেলা সদরে গোলনা ফায়ার সার্ভিসের সামনে ২টি, চহেড়া স্লুইস গেটে ৫টি, ষষ্ঠিতলা স্লুইস গেটে ১টি, নরনিয়া স্লুইস গেটে ১টি ও দহকুলা গেটের জন্য ১টি সেচ পাম্প সরবরাহ করে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে সংযোগ প্রদানের অনুরোধ জানান।
বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানের আগে খুলনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি জানায়, পানি নিষ্কাশনের জন্য বিদ্যুতের রেট ৯.৭১ টাকা দিতে হবে। উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে ২০২০ সাল থেকে উপজেলার বিল তাওয়ালিয়া, বিল দহকুলা, বিল বরুণা, বিল মধুগ্রাম, বিল মুজারঘুটাসহ বিভিন্ন বিলে ৩৫টি বৈদ্যুতিক সেচ পাম্প চালু থাকায় ৩ হাজার একর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। সে সকল পাম্পে সেচ/কৃষি খাতের আওতায় বিদ্যুতের প্রতি ইউনিট ৫.২৫ টাকা নেয়া হচ্ছে। চলতি মৌসুমে বোরো ধান চাষের আশায় অন্যান্য বিলগুলোর জল নিষ্কাশনের জন্য সেই বিদ্যুৎ সমিতি মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ বসিয়ে ‘কৃষি’র জন্য সেচের কথা না বলে শুধু পানি নিষ্কাশনের কথা বলে বিদ্যুতের রেট ৯.৭১ টাকা দিতে বলছে। সেই জটিলতায় আটকে আছে ডুমুরিয়ার কৃষক কুল।  
এ প্রসঙ্গে সিংগা বিল কমিটির সম্পাদক বাবুল আকতার সবুর বলেন, আমরা বোরো চাষের জন্য পানি নিষ্কাশন করবো। কিন্তু পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বলছে, না ওটা শুধু জল নিষ্কাশন। তাই ৯.৭১ টাকা রেট। আমাদের সঙ্গে এত বড় বৈষম্য কেন?  
বিএডিসি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জামাল ফারুক বলেন, ডুমুরিয়ার বিলগুলোতে বোরো চাষাবাদ অব্যাহত রাখতে আমরা আরও কয়েকটি বিলে সেচ পাম্প বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে পল্লী বিদ্যুৎকে অনুরোধ করেছি।
খুলনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম প্রকৌশলী কাজী রমজান আলী বলেন, ধানের গোড়ায় পানি দেয়া বা চাষের ক্ষেত্রে সরকার ২০% ভর্তুকি দিয়ে প্রতি ইউনিটের দাম ৫.২৫ টাকা রেখেছে। জলাবদ্ধতা নিরসনের ক্ষেত্রে (এলটিডি-২) বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক নির্ধারিত রেট ৯.৭১ টাকা। ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও বিএডিসি কর্তৃপক্ষ আমাদের জেনারেল ম্যানেজারের সঙ্গে ৯.৭১ টাকা রেটে ডিমান্ড নোটের ২ লক্ষাধিক টাকা চলতি মাসের মধ্যে পরিশোধের নিশ্চয়তা দিয়েছে। আমরা ১ সপ্তাহের মধ্যে সংযোগ দেয়া চেষ্টা করবো।
ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আল-আমিন বলেন, বোরো চাষের জন্য আগে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রয়োজন। তবে জিএম সাহেবকে কৃষকদের জন্য রেটের বিষয়টি বিবেচনা করতে অনুরোধ করেছি।

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status