ঢাকা, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিঃ

প্রবাস

লন্ডনে গোলটেবিল বৈঠক

উপদেষ্টা পরিষদে অন্তত ১০ শতাংশ প্রবাসী বাংলাদেশি নেয়ার দাবি

আরিফ মাহফুজ, লন্ডন থেকে

(১ মাস আগে) ৮ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ১১:৩৫ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১২:২৭ অপরাহ্ন

mzamin

লন্ডনে ‘দেড় কোটি প্রবাসী বাংলাদেশি: জাতি গঠনে তারা কীভাবে ভূমিকা পালন করতে পারেন’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্থানীয় সময় বুধবার সন্ধ্যায় লন্ডন স্কুল অব কমার্স অ্যান্ড আইটি মিলনায়তনে বৃটিশ-বাংলাদেশি পেশাজীবীদের উদ্যোগে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে অন্তত ১০ শতাংশ প্রবাসী বাংলাদেশি নেয়ার দাবি জানানো হয়েছে।

বৈঠকে বক্তারা বলেন, বৈষম্য ও ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে প্রবাসীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। বিভিন্ন দেশে প্রবাসীরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে দূতাবাস ও হাইকমিশন ঘেরাও করেছেন, সভা-সমাবেশ করেছেন নিয়মিতভাবে দিনের পর দিন। মধ্যপ্রাচ্যে বিক্ষোভ করতে গিয়ে অর্ধশত প্রবাসী জেল খেটেছেন। সর্বশেষে প্রবাসীরা ৫ আগস্টের আগে মাসব্যাপী রেমিটেন্স পাঠানো বন্ধ করে সরকারের টনক নাড়িয়ে দিয়েছিলেন। সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর সম্প্রতি জানিয়েছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর প্রবাসীদের রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ার ফলে বৈদেশিক রিজার্ভে হাত না দিয়েই বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা হয়েছে। সুতরাং দেড় কোটির উপর প্রবাসীকে অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই। তাই দেশ পরিচালনায় উপদেষ্টা পরিষদে অন্তত ১০ শতাংশ প্রবাসী বাংলাদেশি নেয়া অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন আছে উল্লেখ করে বক্তারা আরও বলেন, ‘যেকোনো উপায়ে এই সরকারকে সফল হতেই হবে। সরকার ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ ব্যর্থ হবে। সফল গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ৫৩ বছর পর দেশ গড়ার এক সুবর্ণ সুযোগ এসেছে। এই সুযোগ থেকে মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ বাংলাদেশি যারা প্রবাসে থাকেন তাদের বঞ্চিত করলে বরং দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পৃথিবীর প্রায় ১৫টি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ আছে যাদের একেকটির মোট জনসংখ্যা দেড় কোটি হবে না। সুতরাং এত বিপুল সংখ্যক প্রবাসীদের অবহেলা করে রাষ্ট্রের টেকসই সংস্কার বা মেরামত করা সম্ভব নয়। দেড় কোটি প্রবাসীদের সন্তুষ্ট করুন ও তাদের ন্যায্য এবং যৌক্তিক দাবিসমূহ মানুন, তার বিনিময়ে দেখবেন প্রবাসীরা কোটি কোটি ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা করে দেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবেন।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সিনেটর নাসরুল্লাহ খান জুনায়েদের সভাপতিত্বে প্রতিথযশা আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার নাজির আহমদের সঞ্চালনায় সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ওলিউল্লাহ নোমান।

এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. হাসানাত হোসেন এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক আব্দুল কাদের সালেহ।

আলোচনায় অংশ নেন আইনজীবী ব্যারিস্টার ওমর ফারুক, ব্যারিস্টার ইকবাল হোসেন, ব্যারিস্টার হামিদুল হক আফিন্দী লিটন, সাবেক সেনা কর্মকর্তা আমিন চৌধুরী, ব্যারিস্টার আলিমুল হক লিটন, ব্যারিস্টার এম ফয়ছল, ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম এমাদ, ব্যারিস্টার আলী ইমাম, যুবনেতা নাসির উদ্দিন, গবেষক শরীফুল ইসলাম, মানবাধিকার কর্মী তানভীর হাসান, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে বিলেতের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ আহমদ, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট সাজেদুর রহমান, সমাজকর্মী আমিনুল ইসলাম প্রমুখ। দুই ঘণ্টাব্যাপী আলোচনা ও মতবিনিময়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা উঠে আসে।

বৈঠক নিম্নোক্ত প্রস্তাবনা ও দাবি সর্বসম্মতিতে গৃহীত হয়-

১। প্রবাসীদের ন্যায়সঙ্গত বিভিন্ন দাবি-দাওয়া ও অভিযোগ আছে। এসব ন্যায়সঙ্গত দাবি-দাওয়া ও অভিযোগ অতীতে সরকারের কাছে পাঠালেও যথাযথ বা সন্তোষজনক জবাব পাওয়া যায়নি। অথচ প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স হচ্ছে দেশের অর্থনীতির বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের দ্বিতীয় বৃহত্তম খাত। এই খাতকে মোটেই অবহেলা করা ঠিক নয়। অন্তর্বর্তী সরকার ইতিমধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ১০টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। অনুরূপভাবে প্রবাসীদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার, বিভিন্ন দাবি-দাওয়া, সেবার মান ও অভিযোগ-এসব বিষয়ে সংস্কারের জন্য উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সংস্কার কমিশন গঠনের দাবি জানাচ্ছি।

২। দেড় কোটির উপরে প্রবাসী অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০% বাংলাদেশের বাইরে বসবাস করছেন। তারা বাংলাদেশের নাগরিক। চার লাখ চাকমাদের জন্য প্রতিটি সরকারে তাদের প্রতিনিধিত্ব থাকে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারেও আছে। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, দেড় কোটি প্রবাসীদের জন্য কোনো সরকারেই প্রবাসী প্রতিনিধি রাখা হয়নি। তাই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দেড় কোটি উপরে প্রবাসীদের মধ্য থেকে অন্তত: দুইজন উপদেষ্টা রাখার দাবি জানাচ্ছি।

৩। বৃটেন, ইউরোপ, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করেন অনেক বাংলাদেশি দ্বৈত-নাগরিক। অনেকে বাস্তব ও প্রায়োগিক সুবিধার্থে দ্বৈত-নাগরিকত্ব নিলেও তারা জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক এবং সর্বোচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী জন্মসূত্রে প্রাপ্ত নাগরিকত্ব কেউ কেড়ে নিতে পারে না। বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬(২)(গ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দ্বৈত নাগরিকরা সংসদ সদস্য হতে পারবেন না। দ্বৈত নাগরিকরা বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, এমনকি প্রধান বিচারপতি হতে পারলেও এমপি হওয়ার পথে সাংবিধানিক বাধা ও বৈষম্য রাখার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। উল্লেখ্য, গণতন্ত্রের সূতিকাগার বৃটেনে দ্বৈত নাগরিকরা বৃটিশ পার্লামেন্টের মেম্বার হতে পারেন। শুধু তাই নয়, বৃটেনে এমপি হওয়ার জন্য বৃটিশ নাগরিক হওয়ারও বাধ্যবাধকতা নেই। বাংলাদেশি নাগরিকত্ব ও বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়েও বৃটেনে সেটেল্ড যে কেউ বৃটিশ এমপি হতে পারবেন। সুতরাং জন্মসূত্রে বাংলাদেশি নাগরিক যারা দ্বৈত-নাগরিকত্ব নিয়েছেন তাদের জন্য সংবিধানের বৈষম্যমূলক ৬৬(২)(গ) অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করার দাবি জানাচ্ছি।

৪। প্রায় দেড় কোটি প্রবাসী বাংলাদেশের বাইরে বসবাস করছেন। সবাইকে একভাবে দেখা উচিৎ নয়। বৃটেনে বৃটিশ-বাংলাদেশিরা সুপ্রতিষ্ঠিত। এখানে শত শত দক্ষ প্রফেশনাল আছেন, যারা স্ব স্ব ক্ষেত্রে যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে চলছেন। হাজার হাজার অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ ও লন্ডন গ্র্যাজুয়েট আছেন যারা বাংলাদেশ পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। আধুনিক মালয়েশিয়া নির্মাণে মালয়েশিয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মুহাম্মদ বৃটেনে এসে বৃটিশ-মালয়েশিয়ানদের মধ্যে ট্যালেন্ট হান্ট করতেন। এমনটি করা জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি। সুপ্রতিষ্ঠিত বৃটিশ বাংলাদেশিদের বাংলাদেশকে দেয়ার মতো অনেক কিছু আছে।

৫। বৃটেন থেকে পাওয়ার অব  অ্যাটর্নি দিতে ভ্যালিড বাংলাদেশি পাসপোর্ট থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে গত ২-৩ বছর আগে। পাওয়ার অব অ্যাটর্নির সঙ্গে ভ্যালিড বাংলাদেশি পাসপোর্টের সম্পর্ক কী তা বোধগম্য নয়। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে এমন আজগুবি নিয়ম নেই। এই নিয়ম চালু করার কারণে বৃটেনে লাখ লাখ বসবাসকারী প্রবাসীরা মারাত্মক ঝামেলায় পড়েছেন। অন্য দেশের প্রবাসীরাও বিড়ম্বনায় পড়েছেন। এমতাবস্থায়, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদনে আইডি হিসেবে বাংলাদেশি পাসপোর্ট অথবা বৃটিশ পাসপোর্ট অথবা এনআইডি কার্ড গ্রহণযোগ্য বলে অতি দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারির জোর দাবি জানাচ্ছি।

৬। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হোন। অথচ, যাদের ভোটে এমপি নির্বাচিত হোন তাদের সঙ্গে সুযোগ-সুবিধায় বিরাট বৈষম্য রয়েছে। যেমন, এমপি হলেই ট্যাক্স ফ্রি গাড়ি, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঢাকায় সরকারি জমি বরাদ্দসহ নানা উন্নয়ন বরাদ্দ দেয়া হয়। রাষ্ট্রের মালিক তথা ভোটারদের বাসস্থান ও অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত না হলেও এমপিদের জন্য বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়। এটা রাষ্ট্রের নাগরিকদের সঙ্গে বিরাট বৈষম্য তৈরি করে। অথচ সংবিধানে বলা আছে, আইনের চোখে সকলেই সমান। অবিলম্বে এসব বৈষম্যমূলক সুযোগ-সুবিধা ও বরাদ্দ বাতিল করতে হবে। পৃথিবীর উন্নত  গণতান্ত্রিক দেশে এমপিদের এ ধরনের বৈষম্যমূলক সুযোগ-সুবিধা ও বরাদ্দ দেয়া হয় না । সেখানে স্থানীয় উন্নয়ন বরাদ্দ দেয়া হয় গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের মাধ্যমে।

পাঠকের মতামত

Good step by diaspora reps. We welcome and hope a formal representation by the likes of Dr Hasnat Hussain be made from the Capital of global NRB , Bangla Town ,Brick Lane. An office can be set up there and time is most appropriate.

London Eye
৮ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ১০:৪৩ অপরাহ্ন

যৌক্তিক দাবী। দ্বিধাহীন ভাবে প্রবাসী পেশাজীবিরা যোগ্যতর।

M Salim Ullah Enayet
৮ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ৭:৩১ অপরাহ্ন

প্রবাস থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

প্রবাস সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ-মালয়েশিয়ার বন্ধুত্বের নিদর্শন/ আবারো খুলছে মালয়েশিয়ার কলিং ভিসা

কারী লাইফ অ্যাওয়ার্ডস ও গালা ডিনার/ যুক্তরাজ্যের সেরা শেফ ও রেস্টুরেটার্সদের সম্মাননা

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status