প্রথম পাতা
ছয় দিনের রিমান্ডে আমু
স্টাফ রিপোর্টার
৮ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবারআওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমুর ৬ দিনের রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শাহিন রেজা তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে এই আদেশ দেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর নিউমার্কেট থানা এলাকায় ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় তাকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। রিমান্ড শুনানি চলাকালে মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকীর বক্তব্য রাজনৈতিক বলে মন্তব্য করায় আদালতের এজলাস থেকে আমির হোসেন আমুর আইনজীবী স্বপন রায় চৌধুরীকে মারধর করে বের করে দেয়া হয়। এ সময় আদালতে বিশৃঙ্খল তৈরি হলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পরিস্থিতি শান্ত করেন।
সকালে আমির হোসেন আমুকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আরিফ তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন। অন্যদিকে তার আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
শুনানি চলাকালে মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, আমু শেখ হাসিনার বাপকে বিপথে নিয়ে গেছেন। একইভাবে শেখ হাসিনাকে বিপথে নিয়ে গিয়েছেন। কোনো রাজনৈতিক দলের দরকার নেই, আপনি ক্ষমতায় থাকবেন। ফলে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা জীবন দিয়েছে। ১৪ দলের যারা শেখ হাসিনাকে ফ্যাসিস্ট বানিয়েছেন, তাদের সমন্বয়ক ছিলেন আমু। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিরুদ্ধে তারা সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন। সরাসরি ১৪ দলের বৈঠক থেকে ছাত্রদের প্রতিরোধের ঘোষণা দেন। তার পরিকল্পনা, ষড়যন্ত্র ও সরাসরি মদদে ব্যবসায়ী ওয়াদুুদকে হত্যা করা হয়েছে।
এরপর আমুর আইনজীবী স্বপন রায় চৌধুরী পিপি’র বক্তব্যটি ‘রাজনৈতিক’ বলে মন্তব্য করেন। তখন উত্তেজিত বিএনপিপন্থি কিছু আইনজীবী তাকে মারধর শুরু করেন। মারধরের একপর্যায়ে আদালতের দরজার সামনে পড়ে যান এই আইনজীবী। এ সময় তাকে লাথি মারা হয়। এরপর কয়েকজন আইনজীবী তাকে তুলে আদালত থেকে নিরাপদে বের করে দেন।
আইনজীবীদের হট্টগোলের পর আদালতের অনুমতি নিয়ে আমির হোসেন আমু বলেন, আমি ঢাকা বারের সদস্য, হাইকোর্ট বারের সদস্য। এখানকার পরিবেশ দেখে দুঃখিত। এই পরিবেশে কিছু বলা উচিত না। মামলা চলবে, ভবিষ্যতে আমি আমার বক্তব্য উপস্থাপন করবো। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অনেক কথা বলেছেন। আমি একজন রাজনীতিবিদ। রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে গেলে দুই ঘণ্টা লেগে যাবে। তিনি বলেন, আমরা একে অপরের ভাই। মিলেমিশে থাকা উচিত। আমরা একসঙ্গে থাকবো। কেন দ্বন্দ্বে জড়াবো? আশা করছি, এই পরিবেশ থাকবে না।
এ সময় বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা চিৎকার শুরু করে বলেন, তিনি ভয় দেখাচ্ছেন। এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী তাদের শান্ত করেন। পরে আমু বলেন, আমরা যার যার পক্ষ অবলম্বন করবো। নিজেরা নিজেরা কেন দ্বন্দ্বে জড়াবো। এরপর আইনজীবী ওমর ফারুক বলেন, যখন তিনি ক্ষমতায় ছিলেন তখন কি খবর নিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্ট, ঢাকা বারের? আইনজীবীরা তো ভালোই ছিল। কিন্তু নির্বাচনের সময় সিল মেরে ভোট নিয়ে গেছে, আইনজীবীদের মারধর করেছে। তখন তিনি কী ভূমিকা নিয়েছিলেন? তখন আমু বলেন, প্রথমবার যখন গোলমাল হয় আমি এর বিরোধিতা করি। ভোট দিতে আসিনি, বয়কট করেছি।
এদিকে ভুক্তভোগী আইনজীবী স্বপন রায় চৌধুরী এজলাস থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আদালত চলাকালে আমাকে মারধর করে আদালত থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু আদালত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এখানে কোনো ন্যায়বিচার নেই। আমি বিচার চাই।
মামলা সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গত ১৯শে জুলাই বিকালে নিউমার্কেট থানাধীন নীলক্ষেত এলাকায় পুলিশের গুলিতে ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদ মারা যান। এই ঘটনায় তার শ্যালক আব্দুর রব নিউমার্কেট থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ ১৩০ জনকে আসামি করা হয়। গত ৬ই নভেম্বর রাজধানীর ধানমণ্ডি এলাকা থেকে আমির হোসেন আমুকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। পরে তাকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।