ঢাকা, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, বুধবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

প্রাণিসম্পদের প্রশ্নবিদ্ধ প্রকল্প

মো. আল-আমিন
৫ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার

পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় প্রাণিজ আমিষের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা সমীক্ষাও করেছে সংস্থাটি। তবে প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কীভাবে পূরণ হবে সেই তথ্য নেই সমীক্ষা প্রতিবেদনে। এ ছাড়া চার বছর মেয়াদি এই প্রকল্প শেষে পঞ্চম বছর থেকে আরও বরাদ্দ বিনিয়োগ করা হবে, যার মাধ্যমে প্রায় দ্বিগুণ আয়ের কথা প্রকল্প প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু কোন খাত থেকে কী পরিমাণ আয় হবে তা স্পষ্ট করা হয়নি। অন্যদিকে দেশে মাংস ও ডিমের উৎপাদন বেশি হয় বলে সমীক্ষায় জানিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। সেক্ষেত্রে প্রকল্পের আওতায় প্রাণিজ আমিষের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য হাঁস, মুরগি, ছাগল, ভেড়া ও কবুতর বিতরণের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন।

সূত্র জানায়, দেশের তিন পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি প্রাণিজ আমিষের উৎপাদন বৃদ্ধি করা প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৬৫ কোটি ৮২ লাখ টাকা। প্রস্তাবটি নিয়ে সম্প্রতি প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সূত্র বলছে, প্রকল্প প্রস্তাবের সঙ্গে একটি ফিজিবিলিটি স্টাডি (সম্ভাব্যতা সমীক্ষা) প্রতিবেদন সংযুক্ত করা হয়েছে। এই প্রতিবেদনটি করেছে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান। স্টাডিটির আয় ও ব্যয় বিশ্লেষণ অধ্যায়ের টেবিলে যে তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে সেটি পূর্ণাঙ্গ নয়। এতে দেখা যায়, প্রকল্প শেষে অর্থাৎ ৪ বছর পর পঞ্চম বছর আরও অতিরিক্ত ৩৭৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ব্যয় করা হলে প্রকল্প থেকে আয় হবে ৬৩৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। একইভাবে পরবর্তী বছরগুলোতে অতিরিক্ত ৩২৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয় করা হলে প্রতি বছর ৬৭৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকা আয় হবে। কিন্তু এই আয় প্রকল্পের কোন কোন খাত থেকে কীভাবে হবে তার কোনো হিসাব প্রতিবেদনে দেয়া হয়নি। এ ছাড়া এই আয়ের জন্য প্রতি বছর অতিরিক্ত যে ৩২৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয় করতে হবে তার সংস্থান কীভাবে হবে তারও কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা সমীক্ষা প্রতিবেদনে নেই। 
কমিশন সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১১৬ কোটি টাকা এডিপি বরাদ্দের প্রয়োজন হবে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামোর তথ্যে থেকে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের ঘাটতি রয়েছে ১ হাজার ১২২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। এ ছাড়া আগামী অর্থবছরেও ঘাটতি থাকবে ৬২৬ কোটি ২১ লাখ টাকা। এমন প্রেক্ষাপটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বাজেট সিলিংয়ের মধ্যে থেকে এই প্রকল্পের অর্থায়ন কীভাবে করা হবে সে বিষয়ে ফিজিবিলিটি স্টাডি রিপোর্টে কিছু উল্লেখ নেই।
সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদনে প্রকল্পের ৩টি কম্পোনেন্ট প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রথম কম্পোনেন্টটি হলো- পার্বত্য এলাকার জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য ৭২ হাজার ২৭টি পরিবারকে অনুদান হিসাবে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বিভিন্ন ধরনের প্রাণী (গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি, ভেড়া ইত্যাদি) বিতরণ করা হবে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন তথা দারিদ্র্যবিমোচনের মূল ম্যান্ডেট হলো পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের। পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ সমবায়ের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ঋণ মডেলের আওতায় এই ধরনের কাজ করে থাকে। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে অনুদান হিসেবে উপকরণ সহায়তা দিয়ে টেকসই আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কতোখানি ফলপ্রসূ তার জন্য ক্ষুদ্রঋণ মডেলের সঙ্গে কোনো তুলনামূলক বিশ্লেষণ সমীক্ষায় উল্লেখ নেই।
প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, পার্বত্য জেলার প্রাণিজ আমিষের উৎপাদন বৃদ্ধি করা। কিন্তু সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদনে পার্বত্য জেলাগুলোর প্রাণিজ আমিষের চাহিদা বা ঘাটতি এবং সরবরাহের তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। স্টাডি রিপোর্টে সারা দেশের দুধ, মাংস এবং ডিমের চাহিদা, উৎপাদন ও প্রাপ্যতার একটি তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। যেখানে দেখা যায়, চাহিদার তুলনায় মাংস ও ডিমের উৎপাদন বেশি রয়েছে এবং দুধের উৎপাদনে কিছুটা ঘাটতি আছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় পার্বত্য এলাকার প্রাণিজ আমিষের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য হাঁস, মুরগি, ছাগল, ভেড়া, কবুতর ইত্যাদি বিতরণের যৌক্তিকতা প্রতীয়মান হয় না বলে মনে করে পরিকল্পনা কমিশন।
প্রকল্পের দ্বিতীয় কম্পোনেন্টটি হলো রাঙ্গামাটি জেলায় অবস্থিত পিগ ফার্ম আধুনিকীকরণ। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৮ কোটি ২৭ লাখ টাকা। রাঙ্গামাটি জেলায় অবস্থিত পিগ ফার্মটি রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের অধীন প্রতিষ্ঠান এবং রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা। তাই রাঙ্গামাটি জেলায় অবস্থিত পিগ ফার্মটি উন্নয়নে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের মাধ্যমে করতে হবে বলে জানিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।
প্রস্তাবিত প্রকল্পের তৃতীয় কম্পোনেন্টটি হলো বান্দরবান জেলায় একটি ইনস্টিটিউট অব লাইভস্টক সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (আইএলএসটি) স্থাপন করা। এই আইএলএসটি স্থাপনের বিষয়ে প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডিতে প্রস্তাব করা হলেও ফিজিবিলিটি স্টাডি রিপোর্টের ডিমান্ড অ্যানালাইসিস অংশে বাংলাদেশ লাইভ স্টক ডিপ্লোমা গ্র্যাজুয়েটদের কোন কোন ক্ষেত্রে কাজের সুযোগ রয়েছে সেটি নেই। এসব ক্ষেত্রে কি পরিমাণ ডিপ্লোমা গ্র্যাজুয়েটের চাহিদা রয়েছে, বর্তমানে প্রতি বছর কি পরিমাণ ডিপ্লোমা গ্র্যাজুয়েট বের হচ্ছে ইত্যাদি বিষয়ে তেমন কোনো তথ্য উল্লেখ নেই। ফলে অসম্পূর্ণ ফিজিবিলিটি স্টাডির ভিত্তিতে প্রকল্পটি তৈরি করা হয়েছে। 
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ডিপিপিতে নানা অসঙ্গতি রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সংস্থা তাদের মতো করে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। কমিশন থেকে বেশ কিছু সুপারিশ দেয়া হয়েছে। ডিপিপি সংশোধনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠানো হবে। 
 

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status