ঢাকা, ২০ জুলাই ২০২৫, রবিবার, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৪ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

বাংলারজমিন

যেভাবে কোটিপতি চবি’র পিয়ন কায়ছার

মো. আবু শাহেদ, হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) থেকে
৫ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার
mzamin

কায়ছার হামিদ। চাকরি করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এএফ রহমান হলের অর্ডালী পিয়ন হিসেবে। পিয়ন থেকে পদোন্নতির মতো বদলে নিয়েছেন নিজের ভাগ্য। এই পদে চাকরি করে জ্যামিতিক হারে বাড়িয়েছেন সম্পদ। রয়েছে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে ২০০৮ সালে চাকরিতে যোগদানের পর গত ১৬ বছরেই তিনি কোটিপতি বনে যান। মাত্র ২৪শ’ টাকা বেতনে পিয়ন পদে যোগদান করেই নিজেকে কখনো হল সুপার, সেকশন অফিসার ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার পরিচয়ে নিয়োগ বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন। হাতিয়ে নেয় বিপুল অর্থ। গড়েছেন আলিশান ডুপ্লেক্স ভবন। এটির নাম রেখেছেন ‘নবাব বাড়ি’। অসৎ উপার্জনে বানিয়েছে নামে- বেনামে সম্পদের পাহাড়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) রেজিস্ট্রার অফিস নথি সূত্রে জানা গেছে, গত ২০০৮ সালের ৩১শে মে তারিখে অনুষ্ঠিত ৪৫৫তম সিন্ডিকেট সভার ৫৫ (খ) নং সিদ্ধান্তের আলোকে চট্টগ্রাম হাটহাজারী উপজেলার চারিয়া গ্রামের মো. নবাবুল হকের পুত্র মো. কায়ছার হামিদকে চবি এএফ রহমান হলে ২৪শ টাকা বেসিক বেতন স্কেলে ‘ অর্ডালী পিয়ন’ পদে নিয়োগ দেয়া হয়। পরে ২২ সালের ১৪শে অক্টোবর সিন্ডিকেট সভায় ‘নিম্নমান সহকারী’ তৃতীয় শ্রেণীতে পদোন্নতি পান। বর্তমানে তার বেসিক বেতন স্কেল ২০ হাজার ৩৯০ টাকা। এদিকে মির্জাপুর ইউপি কার্যালয় নথিতে দেখা যায়, তাঁর নামে হোল্ডিং ট্যাক্স বই রয়েছে। গত ২১-২২ অর্থবছরে সেমিপাকা ঘর দেখিয়ে ২শ’ টাকা এবং ২৩-২৪ অর্থবছরে ২য় তলা ভবন উল্লেখ করে ৫শ’ টাকা হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করেন। ইউনিয়ন পরিষদেও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অনিয়ম দুর্নীতির লিখিত অভিযোগ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের জন্য চবিতে নিয়োগ বাণিজ্য ও নানা অনিয়ম দুর্নীতিতে লিপ্ত ছিলেন কায়ছার হামিদ। আওয়ামী লীগ সরকারের ছত্রছায়ায় তার নিজের এলাকায় মসজিদের সভাপতি ও মাদ্রাসার সেক্রেটারি পদ বাগিয়ে নেন। এমনকি মহল্লার সর্দার পদেও ভাগ বসান। পরবর্তী টার্গেট ছিল- চারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি পদ! সরকার পতনের পর ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি পদ বাগিয়ে নিতে গত ২১শে আগস্ট তার উস্কানিতে শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন করে। সেখানে ব্যর্থ হন তিনি। পরবর্তীতে ওই প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে যোগদান করলে কায়ছার হামিদ নিজেকে চবি হল সুপার পরিচয়ে প্রধান শিক্ষককে ফুল দিয়ে বরণ করেন বলে প্রধান শিক্ষক শফিউল আলম জানান।
শুধু তাই নয়, হাটহাজারী মডেল থানার সামনে কায়ছার হামিদ তাঁর ছোট বোন রেশমীর জামাই মো. নুর হোসেনের নামে নিয়েছেন জমি। ওই জমির উপর গড়েছেন সাড়ে পাঁচ তলা আবাসিক বাণিজ্যিক ভবন। এটি হোসেন ভিলা হিসেবে পরিচিত। এর নিচতলায় রয়েছে তাঁর নিজস্ব কার্যালয়। গত ২২শে সালে চারিয়া মৌজার ১৯৮৮ খতিয়ানে দরবেশ আলীর ওয়ারিশ সোলাইমান ও কোরবান আলী গংয়ের থেকে ৫ কানি (২শ শতক) জমি ক্রয় করে কায়ছার হামিদ। ওই জমি গুলোর বর্তমান বাজার মূল্য ২ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। সত্যতা জানান জমি বিক্রয়কারী সোলাইমান। অঢেল সম্পদের মালিক হয়েও কায়ছার হামিদ পরিশোধ করে না আয়কর। নীতিমালা অনুযায়ী গণকর্মচারীর বেতন ভাতায় মাসিক ১৬ হাজার টাকার বেশি বতনে বাৎসরিক রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক। কিন্তু এই নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছেন তিনি।
চট্টগ্রাম কর অঞ্চল-৩ সহকারী কর-কমিশনার মোঃ জালিছ মাহমুদ বলেন, কায়ছার হামিদ গত ১৯ সালে ইনকাম ট্যাক্স সার্টিফিকেট নিয়েছেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত তিনি কোন রিটার্নং জমা দেননি। রিটার্ন ফাইলে সম্পদের বিবরণ উল্লেখ না করে তথ্য গোপন করে থাকলে আমরা তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিব। এছাড়া ১৯ সালের পর থেকে রিটার্ন দাখিল না করায় তাঁর বিরুদ্ধে দ্রুত চিঠি ইস্যু করা হবে। এদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিপ্রার্থী মিমি বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সেকশন অফিসার পদে চাকরি দেয়ার নামে আমার কাছ থেকে কায়ছার হামিদ ২২ সালের ২৭শে ডিসেম্বর ইসলামী ব্যাংকে তার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে ১০ লাখ এবং নগদ নিয়েছেন ২ লাখ টাকা। তিনি নিজেকে এএফ রহমান হলের ডেপুটি রেজিস্ট্রার পরিচয় দিয়েছিলেন। চাকরি দেয়ার নামে গড়িমসি করে দুটি বছর পার হলেও এখনো পর্যন্ত চাকরির আশ্বাস মেলেনি। চাকরি দেয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগে টাকা আত্মসাৎকারীর বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত কায়ছার হামিদ বলেন, এগুলো আমার পৈতৃক সম্পত্তি। দুর্নীতির অভিযোগ মিথ্যা। তবে আলিশান বাড়িটা নিজের নামে বলে সত্যতা স্বীকার করেন তিনি।
 

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

দেনমোহর কমাতে অভিনব কৌশল/ তালাকের পর আবার বিয়ে, কিছুই জানে না গৃহবধূ

প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে বিএনপি নেতার পরকীয়া/ রাতভর গাছে বেঁধে রাখার পর বিয়ের সিদ্ধান্ত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status