দেশ বিদেশ
সরকারকে মির্জা ফখরুল
দ্রুত নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করুন
স্টাফ রিপোর্টার
৪ নভেম্বর ২০২৪, সোমবারঅতিদ্রুত নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র উদ্যোগে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র সাদেক হোসেন খোকার পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এ আহ্বান জানান।
কারও নাম উল্লেখ না করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে একজন উপদেষ্টা একটা মন্তব্য করেছেন, যেটা আমরা তার কাছ থেকে আশা করিনি। তিনি বলেছেন, রাজনীতিবিদরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য উশখুশ করছে। এটা খুব দুর্ভাগ্যজনক কথা। আমরা আশা করি না, এই মাপের মানুষ এ ধরনের কথা বলবেন। তিনি এ ধরনের মন্তব্য করবেন। আমরা রাজনীতিবিদরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য উশখুশ করি না। আমরা বাংলাদেশকে হাসিনা (শেখ হাসিনা) মুক্ত করার জন্য কাজ করেছি, জীবন দিয়েছি, প্রাণ দিয়েছি- এখন গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করবার জন্য আমরা কাজ করছি।
তিনি বলেন, আবারো বলছি- অতিদ্রুত নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করুন। জঞ্জাল যা আছে তা সাফ করে ফেলুন। দায়িত্বটা আপনাদের ওপরে দেয়া হয়েছে। আমরা সহযোগিতা করছি, আপনারাও করুন। তিনি বলেন, আমরা তো ক্ষমতায় যেতেই চাই। সেজন্যই তো রাজনৈতিক দল করি। নির্বাচন করবো, ক্ষমতায় যাবো। এটার জন্য তো আমরা রাজনীতি করছি, তাই না। সেখানে এ ধরনের কথা বললে সঠিক হবে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে বিএনপি নয় শুধু, বাংলাদেশই সংকট অতিক্রম করতে পারেনি। হাসিনা গেছেন। হাসিনা যাওয়াতে বিদেশে সবচেয়ে বেশি আনন্দ হয়েছে। আমরা ভয়াবহ একটা দানবের হাত থেকে মুক্ত হয়েছি। কিন্তু এখনো কিন্তু স্বস্তি নেই। কোথায় যেনো আটকে আছি। আটকে আছি এখানেই যে, আমাদের জনগণের সরকার এখনো প্রতিষ্ঠা হয় নাই। আছে একটা সরকার (অন্তর্বর্তী সরকার) যাকে আমরা সমর্থন দিয়েছি।
ফখরুল বলেন, খুব পরিষ্কার কথা, আবারো চক্রান্ত করে বিএনপিকে বাদ দিয়ে কিছু করার চেষ্টা করবেন না। এটা বাংলাদেশের মানুষ কখনো মেনে নেবে না। একবার মাইনাস টু করার চেষ্টা করা হয়েছে। আবারো ওই রাস্তায় যাওয়ার কথা কেউ চিন্তা করবেন না।
দক্ষিণের আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনুর সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি’র স্থায়ী কমটির সদস্য মির্জা আব্বাস, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ও বিএনপি’র আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন প্রমুখ। এর আগে দুপুরে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের শপথ গ্রহণের পর তাকে নিয়ে শেরেবাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন বিএনপি মহাসচিব। শাহাদাত হোসেনের নেতৃত্বে কয়েকশ’ নেতাকর্মীকে নিয়ে জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন তিনি। প্রয়াত নেতার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাতে অংশ নেন তারা। মোনাজাত পরিচালনা করেন মেয়র শাহাদাত নিজেই। এর আগে সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা হাসান আরিফ ডা. শাহাদাত হোসেনকে মেয়র হিসেবে শপথবাক্য পাঠ করান। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের মির্জা ফখরুল বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে এই ফ্যাসিস্টদের দেশ থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। আগামী দিনগুলোতে যেন ফ্যাসিস্টরা ফিরে আসতে না পারে, জনগণের যে দুর্বার প্রতিরোধ, সেই প্রতিরোধ যেন ফ্যাসিবাদকে নির্মূল করে এবং আগামী দিনের নির্বাচনগুলো যেন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হয়- আমরা সেই প্রত্যাশা করছি। আমি দলের দলের পক্ষ থেকে, চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ডা. শাহাদাতকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ শুধু দেশটাকেই ধ্বংস করেনি, ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে প্রতিটি নির্বাচনকে তারা তাদের মতো করে সাজিয়ে ছিল। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জনপ্রিয় নেতা সাবেক মহানগর আহ্বায়ক তিনি প্রতিযোগিতা করে জিতেছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্টরা বল প্রয়োগভাবে জনগণের ফলাফল কেড়ে নিয়েছিল।
ফখরুল বলেন, আজকে আমি ধন্যবাদ জানাই, নির্বাচন কমিশন ট্রাইব্যুনালকে- তারা সেই ফলাফলকে স্বীকৃতি দিয়ে পূর্বের নির্বাচনকে বাতিল করে ডা. শাহাদাতকে নির্বাচিত ঘোষণা করেছেন। সেইসঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ধন্যবাদ জানাই, তারা আদালতের রায়কে মেনে নিয়ে তাকে (শাহাদাত হোসেন) চট্টগ্রামের মেয়র শপথ গ্রহণ করিয়েছেন।
শাহাদাত হোসেন বলেন, আজকে যে কথাটা আমি বলতে চাই, চট্টগ্রামকে বাঁচালে বাংলাদেশ বাঁচবে। আমাদের যে ইশতেহার দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের, সেই ইশতেহারে চট্টগ্রামকে গ্রীন সিটি, ক্লিন সিটি এবং হেলথদি সিটি করার যে চিন্তা-ভাবনা, তার জন্য আমি কাজ করে যাবো, ইনশাআল্লাহ। এ সময় বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, মাহবুবে রহমান শামীমসহ চট্টগ্রামের মহানগর নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।