দেশ বিদেশ
নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রে ভুয়া তথ্যে সয়লাব সামাজিক মাধ্যম
মানবজমিন ডেস্ক
৪ নভেম্বর ২০২৪, সোমবারযুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে বিতর্কিত করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভোটার জালিয়াতির ভুয়া অভিযোগে সয়লাব। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন অনাকাক্সিক্ষত কন্টেন্ট এত বেশি পরিমাণ যে, তাতে বিব্রতকর অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনের আগেই এমন বিভ্রান্তিকর তথ্যে পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে উঠতে পারে। ভোটে অনিয়মের শত শত ঘটনার তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে এসব পোস্টে। তা ছড়িয়ে দিচ্ছে বিভিন্ন ব্যক্তি। এর মধ্যে আছে স্বতন্ত্র ও রিপাবলিকান সংশ্লিষ্ট গ্রুপগুলো। খুব কম সংখ্যক এমন পোস্ট আসছে ডেমোক্রেটদের পক্ষ থেকে। এ জাতীয় বিভ্রান্তিকর তথ্য অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ার কারণে নির্বাচন কর্মকর্তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে। তারা গুজবকে উড়িয়ে দিয়ে ভোটারদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করছেন। তাদেরকে বোঝাচ্ছেন, নির্বাচনের দিন মঙ্গলবারের জন্য প্রশাসন প্রস্তুত। এরই মধ্যে অনাকাক্সিক্ষত কোনো ঘটনা এড়াতে ডেমোক্রেট এবং রিপাবলিকান শিবির প্রস্তুতি নিয়েছে। এ খবর দিয়ে অনলাইন বিবিসি বলছে, প্রতিটি ঘটনায়ই ট্রাম্পের প্রচারণা শিবির ভুয়া অভিযোগ তুলছে। তারা ট্রাম্পের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলছেন, ২০২০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন ডনাল্ড ট্রাম্প। আগামী ৫ই নভেম্বর তার বিজয় ছিনিয়ে নেয়া হতে পারে। এবারের নির্বাচনের ফল মেনে নেবেন কিনা সেপ্টেম্বরে প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কের সময় এমন প্রশ্নের জবাবে ডনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, যদি নির্বাচন সুষ্ঠু, আইনসম্মত ও ভালো হয় তাহলে তিনি মেনে নেবেন। সিএনএন/এসএসআরএসের সোমবারের জরিপে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ অর্থাৎ শতকরা ৭০ ভাগ মানুষ মনে করেন, ট্রাম্প হেরে গেলে ফল প্রত্যাখ্যান করবেন। এ সপ্তাহে ট্রাম্প নিজে দাবি করেছেন, একটি সুইং স্টেটে ব্যাপক জালিয়াতি হচ্ছে। নিজের ট্রুথ সোশ্যাল নেটওয়ার্কে ট্রাম্প এক পোস্টে বলেছেন, পেনসিলভ্যানিয়ায় জালিয়াতি হচ্ছে। এর আগে দেখা যায়নি এমন ভয়াবহ জালিয়াতি ধরা পড়েছে সেখানে। এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট করেছি। আইনপ্রয়োগকারীদেরকে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে। ওই রাজ্যের তিনটি কাউন্টির কর্মকর্তারা এই অভিযোগ নিয়ে কাজ করছেন। ভোটার নিবন্ধনে জালিয়াতি হয়েছে বলে যে অভিযোগ, তার তদন্ত করছে স্থানীয় আইনপ্রয়োগকারীরা। ট্রাম্প এবং তার মিত্ররা যখন এই সুযোগ নিয়েছেন তখন রাজ্যে রিপাবলিকানদের শীর্ষ নির্বাচনী কর্মকর্তা এআই শমিডট সতর্ক ও সাবধান থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। বলেছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অর্ধসত্য ও ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। বিবিসি অনলাইনে নির্বাচনে জালিয়াতি নিয়ে শত শত পোস্ট দেখতে পেয়েছে। একই অবস্থা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, মেসেজে এবং গ্রুপ চ্যাটিংয়ে। এর মধ্যে কিছু কিছু পোস্ট ভিউ হয়েছে মিলিয়ন মিলিয়ন বার। এতে ভোটিং মেশিন সম্পর্কে ভুয়া তথ্য তুলে ধরা হচ্ছে। ব্যালট গণনা প্রক্রিয়া নিয়ে অবিশ্বাসের বীজ বপন করা হচ্ছে। একটি ক্লিপে জর্জিয়ায় সম্প্রতি হাইতিয়ানদের ভোট দেয়া দেখানো হয়। বিবিসি এ নিয়ে অনুসন্ধানে দেখতে পেয়েছে ওই ভিডিও ভুয়া। এর ঠিকানা ভুয়া এবং যে ছবি ব্যবহার করা হয়েছে তা স্টকে জমা ছিল। এতে স্পষ্ট যে, ওই ভিডিও ভুয়া। শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বলেছেন, এসব ভিডিও তৈরি করেছে রাশিয়ার প্রভাবে প্রভাবিত মহল। এক্সে আরেকজন পোস্ট দিয়ে দাবি করেছেন তারা কানাডিয়ান। ব্যালট সহ ছবি পোস্ট করেছেন। এটাকেও ভুয়া হিসেবে দেখতে পেয়েছে বিবিসি। কিন্তু তিনি যে ব্যালট দেখিয়েছেন তা ফ্লোরিডার। ফ্লোরিডায় ভোট দিতে হলে ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হতে হয়। শনাক্তকরণ করতে হয়। কানাডা সীমান্ত থেকে প্রায় ২০ ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে আসতে লাগে। ওদিকে পেনসিলভ্যানিয়ার নর্দাম্পটন কাউন্টির একটি ভিডিও এক্সে পোস্ট করা হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে একজন ব্যক্তি একটি কোর্টহাউসে ব্যালটভর্তি একটি কন্টেইনার ফেলে যাচ্ছেন। এটাকে সন্দেহজনক কর্মকাণ্ড হিসেবে চালানো হয়। এতে দেখা গেছে তিনি একজন পোস্টাল কর্মী। তিনি মেইলে দেয়া ব্যালট ডেলিভারি দিচ্ছেন। এটাকে ওইভাবে চালিয়ে দেয়া হয়েছে। এই ভিডিওটি কমপক্ষে ৫০ লাখ বার দেখা হয়েছে। এমন অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা উদ্বিগ্ন। নির্বাচনের সামান্য আগে এসে এভাবে ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে দেয়ার কারণে মানুষের আস্থা নষ্ট হতে পারে। সহিংসতা ও হুমকির ঘটনা দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে অনেকে ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পরের ঘটনার কথা স্মরণ করছেন। এবারও ট্রাম্প হেরে গেলে তার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারেন বলে আশঙ্কা।