ঢাকা, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, বুধবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

৭ সুইং স্টেটে কমালা-ট্রাম্পের ভাগ্য নির্ধারণ

মানবজমিন ডেস্ক
৩ নভেম্বর ২০২৪, রবিবারmzamin

যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জনমত জরিপে ডনাল্ড ট্রাম্পকে পেছনে ফেলেছেন কমালা হ্যারিস। কঠোর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মঙ্গলবার সেখানে নির্বাচন। তার আগেই আগাম ভোট শুরু হয়েছে। সেই ভোট নিয়ে এবিসি নিউজ-ইপসোস, নিউ ইয়র্ক টাইমস-সিয়েনা কলেজ এবং সিএনএন’র জনমত জরিপে ট্রাম্পের চেয়ে ১৯ বা তারও বেশি পয়েন্টে এগিয়ে আছেন কমালা হ্যারিস। তবে এই এগিয়ে থাকা মানেই নির্বাচিত হওয়া নয়। ইতিহাস বলে ২০১৬ সালে ট্রাম্পের চেয়ে অনেক বেশি ভোট পেয়েছিলেন ডেমোক্রেট হিলারি ক্লিনটন। কিন্তু তিনি জয়ী হতে পারেননি। জিতেছেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে সার্বিক জনপ্রিয়তা বা বেশি ভোট পাওয়ার ওপর নির্ভর করে না প্রেসিডেন্ট কে হবেন। এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ৭টি সুইং স্টেট। তারা তাদের চূড়ান্ত রায় দিয়ে থাকেন নির্বাচনের দিন। এই রাজ্যগুলো প্রচলিত কোনো দলের ঘাঁটি নয়। তারা রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেট- উভয় দলের প্রার্থীকে বিবেচনা করে পছন্দ যাকে হয়, তাকে ভোট দেন।  মোট সাতটি সুইং স্টেটে ইলেকটোরাল ভোট আছে ৯৩টি। এর মধ্যে পেনসিলভ্যানিয়ায়-১৯টি, জর্জিয়ায়-১৬টি, নর্থ ক্যারোলাইনায়- ১৬টি, মিশিগানে-১৫টি, অ্যারিজোনায়-১১টি, উইসকনসিনে-১০টি এবং নেভাদায় আছে ৬টি ভোট। এখন পর্যন্ত ওয়াশিংটন ডিসি সহ ১৯টি রাজ্য থেকে কমালা হ্যারিস কমপক্ষে ২২৬টি ইলেকটোরাল ভোট পাবেন বলে প্রক্ষেপণে বলা হচ্ছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইলেকটোরাল ভোট পেতে পারেন ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ৫৪টি, নিউ ইয়র্ক থেকে ২৮টি এবং ইলিনয় থেকে ১৯টি। ফলে তাকে ২৭০ স্কোর করতে হলে আরও প্রয়োজন হবে ব্যাটলগ্রাউন্ডের মোট ৯৩টি ভোট থেকে কমপক্ষে ৪৪টি ইলেকটোরাল ভোট। এক্ষেত্রে তিনি যদি পেনসিলভ্যানিয়াতে ১৯টি, জর্জিয়াতে ১৬টি এবং নর্থ ক্যারোলাইনার ১৬টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট নিশ্চিত করতে পারেন তাহলে তার ঘাটতি থাকা ৫১টি ভোট পূরণ হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে তিনি ২৭০ ইলোকটোরাল কলেজ ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারেন। এছাড়া এসব রাজ্যে এবার নারীরা ব্যবধান গড়ে দিতে পারেন। যদি তারা কমালা হ্যারিসকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন তাহলে তিনি হবেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম প্রেসিডেন্ট। অন্যদিকে যদি ট্রাম্প নির্বাচিত হন তাহলে তিনি হবেন এ যাবতকালের মধ্যে ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত প্রেসিডেন্ট। গত রোববার থেকে যে আগাম ভোট শুরু হয়েছে তাতে নারী ভোটারের সংখ্যা বেশি। তার মধ্যে বেশির ভাগই ভোট দিয়েছেন কমালাকে এমনটা মনে করা হচ্ছে। এজন্য নির্বাচনের আগে যেটুকু সময় আছে, সে সময়ে নারীদের বিষয়কে প্রাধান্য দেয়ার চেষ্টা করছেন ট্রাম্প। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে ৫০টি রাজ্য আছে। তার প্রতিটিতে আছে নিজস্ব ভোট পদ্ধতি। এর মধ্যে আছে পোস্টে ভোট, কেন্দ্রে গিয়ে সশরীরে ভোট। নির্বাচনে বড় ইস্যুর মধ্যে নারীদের গর্ভপাতের ইস্যু। এর পক্ষে ডেমোক্রেট কমালা হ্যারিস। তিনি বলছেন, একজন নারী তার শরীরের, নারিত্বের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি তার শরীর বিষয়ে অন্যের চাপিয়ে দেয়া নিষেধাজ্ঞা মেনে নিতে পারেন না। অন্যদিকে ট্রাম্প গর্ভপাতের বিরোধী। এই ইস্যুটি এখন শেষের দিকে এসে জোরালো হয়ে উঠেছে। বলা হচ্ছে, এই ইস্যুটিই নির্বাচনের ফল নির্ধারণ করতে পারে। এর কারণ আছে। ‘কল হার ড্যাডি’ জনপ্রিয় পডকাস্টের অ্যালেক্স কুপার গত মাসে ডেমোক্রেট কমালা হ্যারিসের সঙ্গে একটি বিস্তৃত সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, তার অনুষ্ঠানে একই সঙ্গে কমালা হ্যারিসের রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী ডনাল্ড ট্রাম্পকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কুপার বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নারীদের অধিকারের বিষয়ে ট্রাম্প যদি অর্থপূর্ণ ও গভীর আলোচনা করতে পারেন তাহলে যেকোনো সময়ে তাকে কল হার ড্যাডিতে স্বাগতম। কুপারের শ্রোতাদের বেশির ভাগই নারী। তাদের উদ্দেশ্যে তিনি এই মন্তব্য করেন। অনলাইন সিএনএন লিখেছে, ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলোর মতে ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন ট্রাম্প। তবে তা এড়িয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পক্ষান্তরে ডানপন্থি, পুরুষ আধিপত্য আছে এমন অনলাইন শোতে তিনি মার্কিন তরুণদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি দ্বিমুখী নীতি গ্রহণ করেছেন। মঙ্গলবার তিনি পডকাস্ট, ইউটিউব চ্যানেল এবং টিভি শো এড়িয়ে চলবেন। এসব শো নারী দর্শক বা শ্রোতাদের উদ্দেশে পরিচালিত হয়। ট্রাম্পের উপদেষ্টা এবং মিত্ররা যুক্তি দিয়েছেন যে, গত গ্রীষ্মে এবং শরতের শুরুতে তিনি পুরুষদের প্রতি যেভাবে ভোট দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন, তাতে নারী ভোটারদের সমর্থনে ঘাটতি পড়বে। কিন্তু সম্প্রতি লিঙ্গগত যে ব্যবধান পাওয়া যাচ্ছে তা অনেক রিপাবলিকানকে উদ্বিগ্ন করে তুলছে। রিপাবলিকান দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বলেছেন, সব রিপাবলিকানের জন্য নারীদের একটি সমস্যা হিসেবে দেখছি। এটা শুরু হয়েছে শীর্ষ পর্যায় থেকে। নারীদের কাছে কীভাবে ভোটের আপিল করা হবে শেষদিন পর্যন্ত ট্রাম্পের জন্য তা অনিশ্চয়তায়। অনেক সময় তার উপদেষ্টারাও তাকে নারী ইস্যু দমিয়ে রাখার চেষ্টা করেছেন। বুধবার তিনি উইসকনসিনের গ্রিন বে’তে র‌্যালি করেন। সেখানে তিনি উপদেষ্টাদের পরামর্শের কথা স্মরণ করেন। বলেন, তিনি যে নারীদের রক্ষক এই প্রতিশ্রুতি যেন সেখানে বার বার না দেন। কারণ, তার এই প্রতিশ্রুতি নারীরা অসামঞ্জস্য হিসেবে দেখতে পারেন। ট্রাম্প বলেন, তাকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে, স্যার, দয়া করে এই ইস্যুতে কথা বলবেন না। কেন? আমি তাদের প্রেসিডেন্ট। আমি দেশে নারীদের অধিকার সুরক্ষিত রাখতে চাই। আমি সেটা করতে যাচ্ছি। তাতে নারীরা সেটা পছন্দ করুক বা না করুক। তাদেরকে সুরক্ষিত রাখবো আমি। 

সঙ্গে সঙ্গে তার এই মন্তব্যকে লুফে নেয় কমালা হ্যারিসের প্রচারণা শিবির। ট্রাম্পের গর্ভপাত বিরোধী বক্তব্যের সঙ্গে এটাকে যুক্ত করে দিয়ে একটি ভিডিও ছাড়া হয় এক্সে। তা কমপক্ষে ২৪ লাখ মানুষ দেখেছেন। এরপর নেভাদার রেনোতে এক র‌্যালি ও সংবাদ সম্মেলনে কমালা বলেন, নারীদের স্বাধীনতা, নিজেদের জীবন সম্পর্কে নিজেদের সিদ্ধান্ত নেয়ায় নারীদের বুদ্ধিমত্তায় সম্মান দেখান না ট্রাম্প। এর আগে বৃহস্পতিবার ট্রাম্প বলেছেন, তিনি নির্বাচিত হলে প্রেসিডেন্ট পদে সাবেক প্রার্থী রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র তার প্রশাসনে নারীদের স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করবেন। ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করেছে কমালা হ্যারিসের শিবির। বুধবার নর্থ ক্যারোলাইনাতে নারীদের সাড়া কেমন তার একটি পরীক্ষা নেন ট্রাম্প। তিনি একরকম জরিপ চালান। তার ফলে তিনি খুশি হন। কিন্তু র‌্যালির বাইরের চিত্র ভিন্ন। নারীরা চান না তাদের পাশে এসে দাঁড়ান ট্রাম্প। এবিসি নিউজ-ইপসোসের চালানো সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, নারী ভোটারদের মধ্যে কমালার চেয়ে জনপ্রিয়তায় ১৪ পয়েন্টে পিছিয়ে আছেন ট্রাম্প। অন্যদিকে পুরুষদের মধ্যে ট্রাম্প এগিয়ে আছেন ৬ পয়েন্টে। ফলে গড় হিসাব করলে জনপ্রিয়তায় এগিয়ে কমালা হ্যারিস। ডেমোক্রেটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ডাটা বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ক্যাটালিস্টের তথ্যমতে, ব্যাটলগ্রাউন্ড বা সুইং স্টেট হিসেবে পরিচিত ৭ রাজ্যে এখন পর্যন্ত শতকরা ৫৫ ভাগ নারী আগাম ভোট দিয়েছেন। অন্যদিকে শতকরা ৪৫ ভাগ পুরুষ ভোট দিয়েছেন। এই ব্যবধান ট্রাম্প শিবিরকে ভাবিয়ে তুলেছে। ট্রাম্পের পক্ষাবলম্বনকারী টার্নিং পয়েন্ট অ্যাকশনের প্রেসিডেন্ট চার্লি কির্কের মতে, আগাম ভোটে অনভিপ্রেতভাবে নারীরা বেশি ভোট দিয়েছেন। তিনি এতে হতাশা প্রকাশ করেন। বলেন, যদি এভাবে পুরুষরা ঘরে বসে থাকেন তাহলে কমালা হ্যারিস প্রেসিডেন্ট। 
 

পাঠকের মতামত

ইলেকশন কাহাকে বলে কত প্রকার ও কি কি। ৫ তারিখের পর এসব রেজাল্ট বের হবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট কে হবেন কামালা হারিস নাকি ডোনাল্ড ট্রাম্প। অপেক্ষায় থাকাই ভালো। শুভকামনা।

Anwarul Azam
৩ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ৪:৫১ পূর্বাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status