দেশ বিদেশ
লবিস্টরা হয়তো ট্রাম্পকে প্রভাবিত করেছে: প্রেস সচিব
কূটনৈতিক রিপোর্টার
৩ নভেম্বর ২০২৪, রবিবারমার্কিন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্প লবিস্টদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর ‘বর্বর আক্রমণের’- অভিযোগ এনেছেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন- যুক্তরাষ্ট্রে ভোটের ফল যাই হোক, দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের বিদ্যমান সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে না। শনিবার রাজধানীর এফডিসিতে ‘মার্কিন নির্বাচনের প্রভাব’ বিষয়ে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ‘ছায়া সংসদে’- প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মনে করেন বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ডনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যটি সম্পূর্ণ ডমেস্টিক পলিটিক্যাল ইস্যু। লবিস্টরা হয়তো এ বিষয়ে প্রভাব বিস্তার করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ইউনিটি কাউন্সিল ৯ জন সংখ্যালঘু মারা যাওয়ার বিষয়ে যে রিপোর্ট দিয়েছে, তা বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, এখানে ধর্মীয় বিষয়ের চেয়ে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা বা অন্য কারণ ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন বাংলাদেশে হঠাৎ বাড়তি নজর কেড়েছে গত ৩১শে অক্টোবর রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্পের এক প্রতিক্রিয়ায়। সরকার পতনের পর বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের অভিযোগ করেন ডনাল্ড ট্রাম্প। সেদিন মাইক্রোব্লগিং সাইট এক্স-এ পোস্ট করে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতার অভিযোগ আনেন। লিখেন, আমি বাংলাদেশে হিন্দু, খ্রিষ্টান এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বর্বর সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি, যারা উচ্ছৃঙ্খল জনতা দ্বারা আক্রমণ ও লুটপাটের শিকার হয়েছেন। বাংলাদেশ এখন পুরোপুরি বিশৃঙ্খল। নিজে ক্ষমতায় থাকলে এমন ঘটনা ঘটতো না বলে দাবি করে ট্রাম্প বলেন, আমার চোখের সামনে কখনই এসব ঘটতো না। সারা বিশ্বে ও আমেরিকায় হিন্দুদের অবহেলা করেছেন কমালা ও জো বাইডেন। রাজনৈতিক কারণে ট্রাম্প এমন মন্তব্য কিংবা তার নির্বাচনে জয় বা পরাজয় যাই ঘটুক, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে টানাপড়েনের আশঙ্কা দেখছেন না প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব। তিনি খোলাসা করেই বলেন, প্রফেসর ইউনূসের (প্রধান উপদেষ্টা) সঙ্গে ডেমোক্রেট এবং রিপাবলিক দুই পার্টির সিনিয়র লিডারদের খুব ভালো সম্পর্ক। তার বন্ধু দু’টি দলের মধ্যেই আছেন। রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক অনেকখানি ‘ব্যক্তিগত অ্যাটাচমেন্টের’ ওপর নির্ভর করে মন্তব্য করে শফিকুল আলম বলেন, ড. ইউনূস একজন গ্লোবাল লিডার। তাই মার্কিন নির্বাচনে কমালা হ্যারিস বা ডনাল্ড ট্রাম্প যে-ই জয়ী হোক না কেন আমাদের সম্পর্কের কোনো চ্যালেঞ্জ হবে না। ভারতের সঙ্গেও সরকারের সম্পর্ক ‘ভালো’ দাবি করে শফিক বলেন, আমরা চাচ্ছি- তাদের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক বজায় থাকুক। বাংলাদেশে যে অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থান হয়েছে তাতে আমরা সারা বিশ্বের সাপোর্ট পেয়েছি। পতিত স্বৈরাচার সরকারের সঙ্গে ইন্ডিয়া থাকা সত্ত্বেও তা কোনো কাজে আসেনি। জনগণ জেগে উঠলে কোনো অপশক্তিই টেকে না। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন- ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। ছায়া সংসদে গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের বিতার্কিকদের হারিয়ে বিজয়ী হন স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের বিতার্কিকরা। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন, একেএম মাজহারুল ইসলাম, সাংবাদিক নুরুল ইসলাম হাসিব, আশিকুর রহমান অপু ও আতিকুর রহমান। অনুষ্ঠানের সভাপতি হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ডনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন নির্বাচনের আগ-মুহূর্তে এক টুইটারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করায় পতিত সরকার মনে করছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাদের ফিরে আসা সহজ হবে। কিন্তু না, গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত পতিত স্বৈরাচার। তাদেরকে এদেশের ছাত্র-জনতা রাজনীতিতে আর কোনো স্পেস দিতে চায় না। তারা আর যাই হোক স্বৈরাচারকে রাজনীতিতে গ্রহণ করবে না।
আমাদের কাজ হচ্ছে স্বচ্ছ ও জোরালোভাবে সত্য বলা: এদিকে মার্কিন নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনান্ড ট্রাম্প বাংলাদেশ নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় শুক্রবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দল থেকে পুনরায় প্রার্থী হওয়া ডনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশের ঘটনাবলি সম্পর্কে কী ভাবছেন তা 'স্পষ্টতই গুরুত্বপূর্ণ’। তবে সরকারে আমাদের কাজ সত্য বলা। তিনি (ট্রাম্প) শিগগিরই মুক্ত বিশ্বের নেতা হতে পারেন- এমন মন্তব্য করে প্রেস সচিব বলেন, আমাদের কাজ হচ্ছে সবচেয়ে স্বচ্ছ ও জোরালোভাবে সত্য বলা। মিস্টার আলম বলেন, শুরু থেকেই প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিদেশি সাংবাদিক, গবেষক ও বিশেষজ্ঞদের বাংলাদেশ সফরের উন্মুক্ত আমন্ত্রণ জানিয়ে আসছেন। তিনি বলেন, বিদেশিরা নিজেদের মতো করে বাংলাদেশকে এক্সপ্লোর বা আবিষ্কার করতে পারে। কারণ আমরা আমাদের সমাজ, আমাদের জনগণ, আমাদের দেশ সম্পর্কে আত্মবিশ্বাসী। প্রেস সচিব নেত্র নিউজকে বাংলাদেশের সম্মানিত অনুসন্ধানী সংবাদ মাধ্যম হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, তারা চমৎকার সাংবাদিকতা করছে। শফিকুল আলম তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে বলেন, এতে সংখ্যালঘু গোষ্ঠী বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের ব্যানারে প্রচারিত কিছু মিথ্যাচারকে পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। মিস্টার আলম বলেন, তারা জানেন যে, এই গোষ্ঠীর দাবি বিপ্লবের সবচেয়ে মিথ্যা আখ্যান তৈরিতে বড় ভূমিকা পালন করছে, বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে সহিংসতার বিষয়ে। প্রেস সচিব বলেন, আমরা অস্বীকার করছি না যে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ধর্মীয় সহিংসতা কিছু ঘটেনি। কিন্তু সেগুলো ছিল বিচ্ছিন্ন ঘটনা এবং অতিরঞ্জন। তিনি বলেন, মিথ্যা কোনো বিপ্লবের সূত্রপাত ঘটায় না। মিথ্যাকে নস্যাৎ করতে জনগণের সম্মিলিত বুদ্ধিমত্তাকে কৃতিত্ব দিতে হবে। প্রেস সচিব বলেন, ব্যক্তি ও মানুষ হিসেবে তাদের সম্মান করতে হবে। ক্ষণিকের মধ্যে সেই অনুপ্রাণিত গোষ্ঠীগুলো জয়ী হতে পারে। তবে শিগগিরই তারা বুঝতে পারবে যে, তাদের আখ্যানের কোনো ভিত্তি নেই। নিউ ইয়র্কের গণপরিবহন ও ভ্যান নিয়ে যতই সোশ্যাল মিডিয়ায় বুস্টিং করা বা ব্যানার থাকুক না কেন, তা তাদের কোনো কাজে লাগবে না। ধর্ম নির্বিশেষে যেখানেই থাকুক না কেন সংখ্যালঘুদের রক্ষার গুরুত্ব স্বীকার করায় ডনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানান সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় রাষ্ট্রদূত হিসেবে সদ্য নিয়োগ পাওয়া মুশফিকুল ফজল আনসারী। ট্রাম্পের এক্স হ্যান্ডেলে দেয়া মন্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাস্তব পরিস্থিতি বোঝার জন্য ফ্যাক্ট চেকিং অপরিহার্য। এ নিয়ে সুইডেনভিত্তিক সংবাদ সংস্থা নেত্র নিউজের সর্ব ‘ফ্যাক্ট-চেকিং’ প্রতিবেদনও শেয়ার করেন মুশফিক আনসারী। বলেন, নেত্র নিউজের রিপোর্টে বাংলাদেশ সম্পর্কে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর অপপ্রচারের বিষয়টি চমৎকারভাবে উঠে এসেছে।
ট্রাম্প একজন পাগল ব্যক্তি। ওর উচিৎ ফিলিস্তিনের মুসলমানদের উপর ইসরায়েলের আগ্রাসনের প্রতিবাদ করা।
ট্রাম্প কি বলল না বললো তাতে কিছুই আসে যায় না। এসব নিয়ে মুখ চাচালী বন্ধ করা দরকার।