শেষের পাতা
সাফজয়ী নারী ফুটবলারদের কষ্টকথা শুনলেন প্রধান উপদেষ্টা
স্পোর্টস রিপোর্টার
৩ নভেম্বর ২০২৪, রবিবারবুধবার নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে টানা দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জেতে বাংলাদেশ। পরদিন বৃহস্পতিবার চ্যাম্পিয়নরা দেশে ফিরলে তাদের ছাদখোলা বাসে সংবর্ধনা দেয় বাফুফে। সন্ধ্যায় বাফুফে ভবনে ফুটবলারদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। সেখানে ক্রীড়া উপদেষ্টা চ্যাম্পিয়নদের হাতে তার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক কোটি টাকার চেক তুলে দেন। গতকাল সকালে সাফজয়ী নারী ফুটবল দলকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সংবর্ধনা দেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে প্রধান উপদেষ্টার কাছে নিজেদের নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেন নারী ফুটবলাররা। ফুটবলারদের সকল সমস্যার কথা শুনে প্রধান উপদেষ্টা তা লিখিতভাবে জমা দিতে বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা স্বাগত বক্তব্যে খেলোয়াড়দের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘এই সাফল্যের জন্য আমি গোটা জাতির পক্ষ থেকে আপনাদের অভিনন্দন জানাই। জাতি আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আমাদের দেশের মানুষ সাফল্য চায়। আপনারা আমাদের সাফল্য এনে দিয়েছেন।’ এমন একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য অধিনায়ক সাবিনা খাতুন প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান এবং বলেন এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পেরে তারা সম্মানিত বোধ করছেন। সাবিনা বলেন, ‘অনেক বাধা অতিক্রম করে আমরা এই পর্যায়ে এসেছি। এটা শুধু নারী ফুটবল দলই নয়, বাংলাদেশের নারীরা অনেক সংগ্রামের মুখোমুখি হয়।’ একইসঙ্গে সাবিনা বাংলাদেশের নারী ফুটবলে তার আগের প্রজন্মের অবদানের কথা স্মরণ করেন, যারা ফুটবলকে তাদের আবেগ হিসেবে নেয়ার সাহস দেখিয়েছেন। সাবিনা বলেন, তাদের মধ্যে অনেকেই প্রত্যন্ত এলাকা থেকে উঠে এসেছেন এবং তাদের পরিবারকে সমর্থন করা দরকার। সাবিনা তার কয়েকজন সতীর্থের উঠে আসার সংগ্রামের কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। যেমন মিডফিল্ডার মারিয়া মান্দা, যিনি উঠে এসেছেন ময়মনসিংহের কলসিন্দুর থেকে। মারিয়া তার বাবাকে হারিয়েছেন ছোটবেলায়। মা তাকে লালন-পালন করেছেন। কলসিন্দুর থেকে সাফজয়ী দলে ৬ জন খেলোয়াড় আছেন। কৃষ্ণা রানী সরকার ঢাকায় তাদের আবাসন সমস্যার বিষয়টি তুলে ধরেন উপদেষ্টার সামনে। মিডফিল্ডার মনিকা চাকমা খাগড়াছড়ির প্রত্যন্ত উপজেলা লক্ষ্মীছড়ি থেকে কীভাবে সংগ্রাম করে উঠে এসেছেন, তা তুলে ধরেন। মিডফিল্ডার স্বপ্না রানী তার উঠে আসার স্থান দিনাজপুর জেলার রাণীশংকৈল গ্রামের দুর্বল অবকাঠামোর বর্ণনা দিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা প্রতিটি খেলোয়াড়কে তাদের ব্যক্তিগত আশা-আকাঙ্ক্ষা, সংগ্রাম এবং দাবিগুলো আলাদা কাগজে লিখে তার অফিসে পাঠাতে বলেছেন। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আপনারা যা মন চায়, লিখতে পারেন, দ্বিধা করবেন না। যদি এখন কিছু বলতে চান, সেটাও বলতে পারেন। আমরা আপনাদের দাবি পূরণ করার চেষ্টা করবো। এখন যদি কিছু সুরাহা করা যায়, তবে আমরা এখনই তা করবো।’ অনুষ্ঠান শেষে ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে নারী ফুটবলারদের আলোচনার বিস্তারিত সাংবাদিকদের জানান। তিনি বলেন, ‘স্যার খুব ধৈর্য সহকারে নারী ফুটবল দলের প্রত্যেকের কথা শুনেছেন। তাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা শুনেছেন, সেগুলোর বিষয়ে বিস্তারিত লিখিত দেয়ার জন্য বলেছেন। নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড়রা প্রত্যেকে সাইন করা জার্সি ও ফুটবল উপহার দিয়েছেন। তাদের সমস্যার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সেগুলো সমাধানের জন্য স্যার ব্যক্তিগতভাবে ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।’ নারী ফুটবলারদের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার বার্তা কী ছিল, এমন প্রশ্নে ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা সবকিছু লিখিত আকারে চেয়েছেন। সবাই ব্যক্তিগতভাবে সেটা দেবেন। তিনি খেলোয়াড়দের উৎসাহিত করেছেন, যেন বিজয়ের এই ধারা অব্যাহত থাকে।’ খেলোয়াড় ও প্রধান কোচ মিলিয়ে প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন ২৫ জন। সেখানে সহকারী কোচ ও গোলরক্ষক কোচ ছিলেন না। এই প্রসঙ্গে ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, ‘বাফুফের প্রেসিডেন্ট দেশে ছিলেন না। যে কারণে নেই। আমার কাছে যে ২৫ জনের তালিকা এসেছে, আমরা তাদের এখানে আনার ব্যবস্থা করেছি। সহকারী কোচ ও গোলরক্ষক কোচের নাম ছিল না।’ খেলোয়াড়দের ফ্ল্যাট দেয়ার বিষয়ে ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, ‘ফ্ল্যাটের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। স্যারকেও উনারা কিছু জানাননি। লিখিতভাবে দেয়ার সময় সেখানে কিছু থাকলে দেখবো। আমাদের দেশের সামর্থ্য অনুযায়ী আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। বাইরে থেকে দেখা যায়, ক্রিকেট দলের অনেক পিআর আছে, তারপরও তাদের কিন্তু অনেক ছোট ছোট সমস্যা আছে। খেলাধুলার স্টেকহোল্ডার হচ্ছে খেলোয়াড়রা, তারাই গুরুত্ব পাবে। এতদিন পর্যন্ত গুরুত্ব পেতেন কমিটির সদস্যরা, সেটা আর হবে না, এটা অন্তত আমার সময়ে আমি নিশ্চিত করবো।’ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের কোচ পিটার বাটলার ও ম্যানেজার মাহমুদা আক্তার।
সাফ জয়ী প্রত্যেকটি খেলোয়াড়ের একাউন্টে একটা মোটা অংকের টাকা এফডিআর করা হোক। সেখান থেকে তারা প্রতি মাসে ভালো একটা অংক পেতে পারে। বিশেষ করে জমি ফ্ল্যাট দেওয়া এখন ঝামেলার ব্যাপার। কেউ যদি দেয় ভালো কথা। ক্রিকেটে যখন এই অবস্থা ফুটবলে তো মেয়েরা তাদের সম্মান বজায় রেখেছে। সবচেয়ে বড় কথা ১৭ কোটি মানুষের সম্মান।এর চেয়ে বেশি কি আশা করতে পারেন। প্রত্যেকটি প্লেয়ারকে রইল অনেক অনেক দোয়া ও অভিনন্দন।