শেষের পাতা
সিলেট সেটেলমেন্ট
ঘুষ না দেয়ায় রেকর্ড পাননি ভূমির মালিকরা
ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
৩ নভেম্বর ২০২৪, রবিবারচুনারুঘাটের রানীরকোট মৌজার প্রায় ৩ বিঘা জমির মালিক স্কুল মাস্টার রতিশ চন্দ্র দেব। মাঠ জরিপের সময় ভুলে তার জমি অন্যের নামে রেকর্ড হয়। কয়েক শতক ভূমি কারও নামে রেকর্ড হয়নি। অথচ এই ভূমি তার দখলে। দলিলও রয়েছে। পরে সকল প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে তার নামে ভূমির রেকর্ড নিতে আবেদন করেন। কিন্তু কোনো আবেদনই সংশ্লিষ্টরা গ্রহণ করেননি। পরে তিনি নিজের নামে ভূমি রেকর্ড করতে জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার ওবায়দুর রহমানের কাছে আবেদন করেন। এ সময় সেটেলমেন্ট অফিসার তার কাছে মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ দাবি করেন। কিন্তু নিজের নামে দলিল থাকায় রতিশ চন্দ্র দেব ন্যায়বিচার চান। কিন্তু তাতে কর্ণপাত করেননি জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার। সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করে তার দলিলমূলে থাকা ভূমি অন্যের নামে চূড়ান্ত করে প্রিন্ট পর্চা এবং পরে গেজেটও সম্পন্ন করেন। শুধু রতিশ চন্দ্র দেবই নয়, এভাবে সিলেটের কয়েকশ’ ভূমির মালিকের জমি অন্যের নামে রেকর্ড দেয়ার অহরহ নজির রয়েছে। আর এসব কাজ হয়েছে ২০২১ সাল থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে। তখন জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার ছিলেন ওবায়দুর রহমান। তিনি বর্তমানে পাট অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক। যারা ঘুষ দিয়েছেন তারাই কেবল রেকর্ড পেয়েছেন। যারা টাকা দেননি তারা ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর পর্যন্ত আবেদন করে কোনো ফল পাননি। কুলাউড়ার রাধানগর, বারইগাঁও, বালিয়া, ইছলাছড়া ও মাইজগাঁও মৌজায় ভূমি রয়েছে সুজিত দে’র। তিনিও একইভাবে আবেদন করেছিলেন। তখন সংশোধনের সুযোগ ছিল। কিন্তু ঘুষ না দেয়ায় তার ভূমির রেকর্ড সংশোধন করা হয়নি। সুজিত দে মানবজমিনকে জানিয়েছেন- প্রিন্ট পর্চার আগে ও পরে নির্ধারিত আইনেই আমরা সেটেলমেন্ট কর্মকর্তার কাছে আবেদন করি। তখন আমার কাছে ঘুষ চাওয়া হয়। কিন্তু ঘুষ না দেয়ার কারণে রেকর্ড পাইনি। সুজিত জানান- শুধু তিনিই নয়, সিলেটে কয়েকশ’ ভূমির মালিককে বিএস খতিয়ান থেকে বঞ্চিত করেছেন সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা। তার সঙ্গে ছিল একটি সিন্ডিকেট। তারা টাকার বিনিময়ে এসব ভূমি অন্যের নামে দিয়ে যান। ভূমির মালিকরা সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত অভিযোগ দিলেও কোনো কাজ হয়নি। শেষে হাইকোর্টে রিট করলে আবেদন নিষ্পত্তির নির্দেশনা দেয়া হলেও ভূমি কর্মকর্তারা উচ্চ আদালতের আদেশ মানেননি। ভুক্তভোগী ভূমির মালিকরা জানিয়েছেন- জরিপের সময় সিলেট সেটেলমেন্টকে দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছিলেন জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার ওবায়দুর রহমান। তার সঙ্গে ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার হুমায়ূন কবির, রহিমউল্লাহ, উপ-সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার গোলাম মোস্তফা লিটন ও মো. নুরুজ্জামান, ভারপ্রাপ্ত প্রধান সহকারী আব্দুল মান্নান, সাবেক ভারপ্রাপ্ত রেকর্ড কিপার আবুল খায়ের। মূলত তাদের নিয়ে ওই সময় রেকর্ড পরিবর্তনের সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার নবীনগর, রাধানগর, বারইগাঁও, জালালাবাদ, হিংগাজিয়া, পূর্বভাগ, বালিয়া, ইছলাছড়া ও মাইজগাঁও মৌজা এবং সুনামগঞ্জ জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বাগমারা, মুক্তিখোলা, কাচিরগাতি, ধরেরপাড়, উমরপুর, সিমচা, কুটিপাড়া মৌজা ও হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার রানীরকোট মৌজার রেকর্ড সংশোধনের আবেদন করা হয়েছিল। ২০১৮ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দাখিল করা এসব আবেদনের মালিকরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে ঘুষ চাওয়া হয়। কিন্তু ঘুষ না দেয়ায় জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার দাখিলকৃত আবেদনের ওপর শুনানি গ্রহণ না করেই সংশ্লিষ্ট মৌজার গেজেট প্রকাশনার জন্য অধিদপ্তরে পত্র প্রেরণ করেন। পরে ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক গেজেট অনুমোদন করায় সংশ্লিষ্ট মৌজার রেকর্ডপত্র জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে হস্তান্তর করা হয়েছে। এদিকে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বারবার আবেদন করেও কোনো ফলাফল না পাওয়ায় ২০২১ সালে সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভর উপজেলার ভূমির মালিক সুলেমান ফারুক হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন মামলা করেন। পরে একই বিষয়ে ২০২৩ সালে সিলেটের ভূমির মালিক সুজিত দে, শামসুল হোসেন, মাহতাব আহমদ ও রতিশ চন্দ্র দেব হাইকোর্টে রিট করেন। রিট দায়েরকারীরা জানিয়েছেন- উচ্চ আদালতের নির্দেশ ছিল আবেদন নিষ্পত্তি করার। কিন্তু সেটি নিষ্পত্তি না করে মৌজার প্রিন্ট পর্চা ও গেজেট প্রকাশ করেছেন। এতে আদালত অবমাননা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। এ ব্যাপারে তারা ফের আদালতের শরণাপন্ন হবেন জানান। এদিকে ওবায়দুর রহমানের সময়ের এসব ঘটনার মন্তব্য করতে নারাজ বর্তমানে দায়িত্বে থাকা সেটেলমেন্ট কর্মকর্তারা। তারা জানিয়েছেন- যেহেতু বিষয়টি পূর্বের সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা করে গেছেন এবং পরবর্তীতে সেটি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। এখন সেটি আদালত ও ভূমি রেকর্ড জরিপ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা দেখবেন।
মানবজমিনের কাছে আমার একটি প্রশ্ন থাকবে।বর্তমানে বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলায় ভুমিজরিপ কার্জক্রম চলছ।এখানকার উপজেলার মানুষ গুলো ভুমিজরিপ কর্মকর্তাদের কাছে জিম্মি। ঘুষ আর ঘুষ। যেন লাল ফিতার দৌরাত্ব।আমরা এ থেকে পরিত্রাণ চাই। মানবজমিন একটি অনুসন্ধান করে এর বিরুদ্ধে একটি রিপোর্ট করুক।
Ami o viktovugi ... ai shuorera shudu pech lagay .. tk kamanur dhanday
আমারও একই অবস্থা
উপযুক্ত প্রমান সাপেক্ষে এসব দুর্নিতিবাজ কর্মকর্তা কর্মচারীদের দ্রুত চাকরিচ্যুত করার দাবি জানাই।
আমারও চেইম অবস্থা