অনলাইন
নতুন বাংলাদেশের স্থপতি হিসেবে ইতিহাসে নাম লেখাতে পারেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস
মনদীপ তিওয়ানা
(১ মাস আগে) ২ নভেম্বর ২০২৪, শনিবার, ১:৫৬ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১১:২২ পূর্বাহ্ন
ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: আলজাজিরা
গণ-বিক্ষোভের পর বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগস্টের শুরুতে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন। সেইসঙ্গে বাংলাদেশের সামনে আসে সত্যিকারের গণতন্ত্র স্থাপনের এক অনন্য সুযোগ। হাসিনার ১৫ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসন অবসানের পর বাংলাদেশে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। তার নেতৃত্বে রয়েছেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সুশীল সমাজের সদস্যরাও এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।
ইউনূস সুশীল সমাজের একজন প্রখ্যাত সদস্য। সত্যিকার গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের ভিত্তি স্থাপনের জন্য তিনি বদ্ধপরিকর। সামাজিক সংহতি রক্ষা এবং দেশের অত্যাচারিত অতীতের প্রয়োজনীয় হিসাব-নিকাশ চোকাতে বাংলাদেশি সুশীল সমাজের অভিজ্ঞতাগুলো কাজে লাগাতে চান ইউনূস। নাগরিক অধিকার রক্ষা ও এটিকে প্রসারিত করার অনেক উপায় রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, বলপূর্বক গুম ও নির্যাতনের জন্য দায়ী নিরাপত্তা ইউনিটগুলো তিনি ভেঙে দিতে পারেন। সুশীল সমাজকে সমর্থনকারী এনজিও অ্যাফেয়ার্স ব্যুরোকে সংস্কার করতে পারেন, যেগুলোকে একসময় অপরাধীর তালিকায় রাখা হয়েছিল। বিদেশি অনুদান আইন সংশোধন করে সেগুলোকে আন্তর্জাতিক তহবিল পাওয়ার পথ প্রশস্ত করতে পারেন। তবে ইউনূসকে দ্রুত কাজ করতে হবে। কারণ ইতিহাস বলে সুযোগ সবসময় ক্ষণস্থায়ী হয়। বিপ্লবের মাধ্যমে একটি কর্তৃত্ববাদী শাসনের অপসারণের পর গণতান্ত্রিক কাঠামো অভিজাতদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। পরবর্তীতে কী হবে তার পরিকল্পনার অভাবে গণতন্ত্রপন্থী উপাদানগুলো লাইনচ্যুত হতে পারে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে ক্ষমতার শূন্যতা পূরণ করতে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে মিলিত হয়ে জাতীয়তাবাদী ও কর্তৃত্ববাদী শক্তি মাথাচাড়া দিতে পারে। অনেক সময় সামরিক বাহিনী নিজেই দায়িত্ব নেয়। অন্যান্য ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক শক্তির প্রতিনিধি হিসাবে ক্ষমতায় আসা নেতারা সবকিছু বজায় রাখার চেষ্টা করতে গিয়ে নিজেরাই দমন-পীড়নের আশ্রয় নেন।
উদাহরণ স্বরূপ, ২০১৯ সালে সুদানে শক্তিশালী প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে উৎখাত করার পরে গণতান্ত্রিক উত্তরণের লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি ব্যর্থ প্রচেষ্টা হয় এবং অবশেষে ২০২১ সালে একটি সামরিক অভ্যুত্থান হয়। বহু বছর পরে নাগরিক অধিকার লঙ্ঘন এখনো অব্যাহত রয়েছে এবং বর্তমানে দেশটি সংঘাতে বিধ্বস্ত। অন্যদিকে স্থিতিশীল গণতন্ত্র স্থাপনের লক্ষ্যে ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানে একটি প্রাথমিক সামরিক অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। তার পরে কয়েক দশকের সামরিক শাসন এবং সুশীল সমাজের ওপর আক্রমণ নেমে আসে। ইথিওপিয়ায় যখন প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ ইরিত্রিয়ার সঙ্গে একটি শান্তি চুক্তির জন্য ২০১৯ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছিলেন, তখন আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য আশা ছিল উচ্চ। তারপর আবি আহমেদ একটি রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন, যেখানে ব্যাপক নৃশংসতা সংঘটিত হয়েছিল। সেদেশে এখনো অশান্তি বিদ্যমান। মানবাধিকার গোষ্ঠী কর্তৃপক্ষকে নাগরিক অধিকারের ওপর তাদের দমন-পীড়ন বন্ধ করার এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের অধিকারকে সম্মান করার আহ্বান জানিয়েছে।
অধ্যাপক ইউনূসের সরকার যদি সুশীল সমাজকে সিদ্ধান্ত গ্রহণে অন্তর্ভুক্ত এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিতে ব্যর্থ হয় তাহলে হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশও একই সমস্যায় পড়তে পারে। তবে এগুলো অবশ্যই একমাত্র সম্ভাব্য পরিস্থিতি নয়। একটি বিপ্লবের পরে গণতন্ত্রপন্থী শক্তিগুলো আরোও দৃঢ় অবস্থানে থাকতে পারে এবং আরও ইতিবাচক ও বাস্তব উত্থানকে সক্ষম করতে পারে। শ্রীলঙ্কা, যেখানে ব্যাপক বিক্ষোভের কারণে দুই বছর আগে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য করা হয়েছিল, এটি তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। গত মাসে অনুরা কুমারা দিসানায়েকে আরও ভালো শাসন ও স্থিতিশীলতার প্রতিশ্রুতি দিয়ে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন।
অভিজাতদের চাপের মুখেও গণতান্ত্রিক শক্তি কীভাবে অটল থাকতে পারে তার আরেকটি উদাহরণ চিলি। অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে ২০১৯-২০২২ সালে চিলিতে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। যেটি শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও পেনশনসহ একাধিক সংস্কারের দিকে পরিচালিত করেছিল। গুয়াতেমালা, যেখানে পুরানো শাসনের দ্বারা ক্ষমতা হস্তান্তর রোধের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়েছিল। সেখান থেকেও বাংলাদেশের নতুন সরকার দরকারি পাঠ নিতে পারে। উভয় ক্ষেত্রেই সুশীল সমাজ মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। যদিও বিপ্লব ও জনগণের অভ্যুত্থান এই দেশগুলোর কোনওটিতেই নাগরিক অধিকার এবং নিখুঁত গণতন্ত্র ফেরাতে সক্ষম হয়নি।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত এই উদাহরণগুলোর দিকে মনোযোগ দেওয়া, যেখানে নাগরিক সমাজ কঠিন ও জটিল পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ বিজয় অর্জন করেছে। এমন ঘটনাগুলো থেকেও শিক্ষা নেয়া উচিত, যেখানে গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের পতনে সাহায্য করেছিল।
কোনো নতুন সরকার রাতারাতি সবক্ষেত্রে সন্তোষজনক সংস্কার এবং একটি নিখুঁত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। বিশেষ করে কয়েক দশকের কর্তৃত্ববাদী শাসনের পরে সেই আশা করাও অবাস্তব। কিন্তু বিশ্বজুড়ে অগণিত উদাহরণ দেখায় যে, দীর্ঘমেয়াদী কর্তৃত্ববাদী নেতাদের রেখে যাওয়া ধ্বংসাবশেষের ওপর একটি উন্নত ভবিষ্যত গড়ে তোলা তখনি সম্ভব, যতক্ষণ না নতুন নেতৃত্ব গণতন্ত্র স্থাপনের লক্ষ্যে দৃঢ় সংকল্পের সঙ্গে কাজ করে এবং সুশীল সমাজের সাথে সংলাপ চালিয়ে যায়।
ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি একই ভুল করে, অর্থাৎ নাগরিক সমাজ ও বিক্ষোভ দমনের মাধ্যমে যদি গণতান্ত্রিক ভিন্নমতকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা শুরু করে, তাহলে অন্য দেশের পরিবর্তনের সময় যে ভুলগুলো তুলে ধরা হলো তা বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও পুনরাবৃত্তি হতে পারে। কিন্তু প্রফেসর ইউনূস যদি অন্যান্য দেশের সফলতার কথা মাথায় রেখে বাংলাদেশে একটি শক্তিশালী গণতন্ত্রের ভিত্তি স্থাপন করেন, তাহলে তিনি ম্যান্ডেলার মতো অনুপ্রেরণাদায়ক ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠতে পারেন। দক্ষিণ এশিয়ার যেসব দেশে নাগরিক স্বাধীনতা ব্যাপকভাবে অবদমিত, সেখানে ইউনূসের বিপ্লব পরবর্তী সফল উত্তোরণ সেসব দেশগুলোর সামনে উদাহরণ হয়ে উঠতে পারে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনেকেই তাকে সমর্থন করতে প্রস্তুত।
সবশেষে বলতে হয় বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে দাঁড়িয়ে। ইউনূস ও তার উপদেষ্টারা কীভাবে মানবাধিকার ও নাগরিক স্বাধীনতাকে সম্মান করে রাজনৈতিক গতিশীলতাকে নেভিগেট করছেন, তার ওপর নির্ভর করবে দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ। সূত্র: আলজাজিরা
বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো ভাল নাই।তারা নিজের জন্য রাজনৈতিক করে। জনগন কিংবা দেশের জন্য করে না।আওয়ামী লীগ ১৫ বছর ক্ষমতা ছিল কেউ কথায় বলতে পারে নাই।ছাত্র রা হাসিনাকে পালাইতে বাধ্য করেছে।এখন তিন মাস হয় নাই এখন বিএনপি ছাই হাসিনাকে নিয়ে সংবিধান টিক করত।
শ্রদ্ধার সাথে অর্ন্তবর্তী সরকার প্রধানকে বলতে চাই স্যার দয়া করে দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রণ করুন। পরে আপনি সংস্কার করুন। মানুষ সংস্কার বুঝে না। বাজারে গেলে ঠিক মতো বাজার করতে পারছেন। ফলে মানুষের মধ্যে হতাশায় দিন কাটাতে হয়। আজ প্রায় তিন মাস এখনও বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন। দয়া করে আগে বাজার নিয়ন্ত্রণ করুন। পরে আপনি আমাদেরকে সুন্দর একটা নির্বাচন দিন যাতে আমরা ভোট দিতে পারি ভালো মানুষ নির্বাচন করতে পারি। আল্লাহ আপনার প্রতি সহায় হউক। আমিন।
উনি অসাংবিধানিক উপায়ে ক্ষমতা দখলের ইতিহাস তৈরির জন্যে ঘৃণিত হবেন যেভাবে মীর জাফর আজ ও মানুষের কাছে ঘৃণিত।
যেই লাইনে কাজ করে ইউনুস সাহেব নোবেল পেয়েছেন, একই লাইন ধরে দেশ পরিচালনা দূরুহ। হ্যান্ডস পশ্চাদপদ শক্তি, যেমনটি ভূতের পা পিছনের দিকে! এগোবে কিভাবে?
পারবে যদি আইনশৃঙ্খলা, দুর্নিতী আর ভোগ্যপন্যের দাম কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রন করতে পারে।
Good advice for dr. Yunus govt.
Government should be neutral, need follow Of the people, by people and for the people. We must respect such type of Government.
রাজনীতি না করে দেশ চালাতে পেরেছে কেউ! !!
বাংলাদেশে এখন মানুষের জীবনের কোন নিরপত্যা নেই, মানুষ খেতে পারছেনা, মানুষের কথা বলার অধিকার নেই।
সাধারণ মানুষ ভালো কিছুর প্রত্যাশায়,,,,, জাতি হিসেবে আমরা আর পিছিয়ে থাকতে চাই না....
বর্তমানে বাংলাদেশ বিশৃঙ্খল অবস্থায় আছে।
প্রতিহিংসার মন মানসিকতা পরিত্যাগ করে একটি সুসংহত ও একীভূত রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করে নির্বাচন প্রদান করার মাধ্যমে গণতন্ত্র সুসংহত হতে পারে।
হাসিনার ১৫ বছরের কতৃত্তবাদী শাসনের অতিমাত্রার জন্জালগুলো ব্যাপকভিত্তিক সংস্কারের মাধ্যমে সঠিক গনতন্ত্রের পথে আনতে ডঃ ইউনুসই এই মুহুর্তে একমাত্র ব্যাক্তি কারণ তাকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনেকেই সহোযোগিতা করতে প্রস্তুত আছে।
Not a good suggestion.
ডক্টর মুহম্মদ ইউনূস তো বিশ্বের একজন স্থপতি। যাঁরা বিশ্বের কোন কিছুতে নোবেল রেখেছেন এবং পুরস্কার হিসাবে পৃথিবীর মানচিত্রে নোবেল পেয়েছেন তাঁরাই তো শ্রেষ্ঠ বীর বা স্থপতি। আর যারা আভ্যন্তরীণ বিষয় কিছু করেছেন তাদেরকেও স্থপতি বলা হয় তবে সেটা লোকাল এবং লোকাল বিতর্কিত হিসাবে, আজ আছে কাল নেই। তবে ইউনূস সাহেব যদি গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনে জনগণকে দিতে পারেন তাহলে তাঁকে বাংলাদেশের স্বাধীন গনতন্ত্রের জনক উপাধি দেওয়া যেতে পারে।
এর চেয়ে লজ্জা আর কলংক জাতির জন্য আর কি হতে পারে।
ata apnar bektigoto chawa, heading ei buja jai deshe aaro oshanti laguk, ata apni chan, manobik Bangladesh gothoner jonno likha uchit...
Very important narrative.Need attention to this article.
good