বিশ্বজমিন
বেইজিং-ওয়াশিংটন সম্পর্ক, উন্নয়নের আশা দেখছে না চীনা জনগণ
মানবজমিন ডেস্ক
(১ মাস আগে) ১ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ১০:৫২ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:০৮ পূর্বাহ্ন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন শুধু আমেরিকানদের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, এর প্রভার রয়েছে সারা বিশ্বে। যিনিই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, বিশ্বের দুই অর্থনীতি এবং প্রতিদ্বদ্বী শক্তির বৈরি সম্পর্কের ওপর যে ব্যাপক প্রভাব ফেলত পারে সে বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা একমত। যদিও চীন তার নিজ দেশে মার্কিন মুল্লুকের নির্বাচনের খবর ফিল্টার না করে প্রচার করে না, কেননা কে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হচ্ছেন তার চেয়ে দুই দেশের সম্পর্কের দিকেই বেশি মনোযোগী বেইজিং।
সিএনএন’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বেইজিংয়ের বাসিন্দা লি শু বলেছেন, মার্কিন নির্বাচনে যেই প্রেসিডেন্ট হন, তা প্রার্থী ‘এ’ বা প্রার্থী ‘বি’- চীনা সাধারণ জনগণের কাছে সবাই একই।
মার্কিন নির্বাচন নিয়ে চীনাদের এমন মনোভাবের কারণ হতে পারে যে, বেইজিংয়ের নীতিনির্ধারক ও নাগরিকদের মার্কিন প্রশাসনের হাতে প্রাণ হারানো। বেইজিংয়ের আরেকটি বিশ্বাস হচ্ছে নির্বাচনে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিস বা সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প, যার দলই জয় পাক- তারাই বিশ্ব মঞ্চে চীনের উত্থানকে সীমিত করতে কাজ করবে।
প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন চীনা পণ্যের ওপর কয়েকশ গুন বেশি শুল্ক আরোপ করেছিল ট্রাম্প প্রশাসন। চীনের বৃহৎ প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণাও চালিয়েছে তারা। এছাড়া কোভিড মহামারির ভাইরাস চীন থেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়েছে বলেও বর্ণবাদী ভাষা ব্যবহার করেছিলেন ট্রাম্প। বেইজিংয়ের প্রতি এখনও আগের মনোভাবই পোষণ করছেন তিনি ও তার দল।
গত ২৭ অক্টোবর নিউইয়র্কে এক সমাবেশে ট্রাম্প দুবার চীনের কথা উল্লেখ করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন যদি যুদ্ধে জড়ায় তাহলে যুক্তরাষ্ট্র তাদের ‘পরাজিত করবে’ এবং ট্রাম্প পারস্পরিক বাণিজ্য আইন পাসের কথা বলেছেন, যার মাধ্যমে চীন বা অন্য কোনো দেশ যদি যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ১০০ বা ২০০ শতাংশ কর বা শুল্ক আদায় করে তাহলে যুক্তরাষ্ট্রও তাদের কাছ থেকে সমপরিমাণ শুল্ক বা কর আদায় করবে।
তবে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে চীনের সঙ্গে যোগাযোগ স্বাভাবিক করার প্রচেষ্টা দেখা গেছে। কিন্তু তার জাতীয় নিরাপত্তার জন্য চীনের হুমকির বিষয়ে মার্কিন উদ্বেগ আরও গভীর হয়েছে। চীনা প্রযুক্তি শিল্পে বিনিয়োগ এবং রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি শুল্ক বৃদ্ধির দিকেও নজর রেখেছে বাইডেন প্রশাসন। এছাড়া বাণিজ্য খাতে চীনের বিপরীতে বাইডেন কীভাবে তাইওয়ানকে সমর্থন জানিয়েছেন সেটাও বিবেচনার বিষয়। কেননা এটা বেইজিং সম্পর্কের ‘লাল দাগ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
চীনের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি কোভিডের পর থেকেই বেশ একটা ভালো পর্যায়ে নেই। অন্যান্য সমস্যার সাথে অর্থনৈতিক মন্দাভাব পুঁজি বাজারকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। যা থেকে পরিত্রাণ পেতে চীনকে প্রতিনিয়ত লড়াই করতে হচ্ছে।
উদ্ভূত এই পরিস্থিতির মধ্যে মার্কিন নির্বাচন নিয়ে যে চীনাদের আগ্রহ কম তা বেশ স্পষ্ট। এছাড়া দেশটির সংবাদপত্র বা টিভি চ্যানেলে উপস্থাপিত মার্কিন নির্বাচনের খবরের প্রেক্ষিতেও এ বিষয়টি বোঝা যাচ্ছে যে, অতীতের মার্কিন নির্বাচনের তুলনায় এবারের নির্বাচন চীনাদের তেমন আগ্রহী করে তুলতে পারেনি। কে নির্বাচিত হবেন তা নিয়েও মাথা ব্যাথা নেই, কেননা তারা জানেন ওয়াশিংটনের সঙ্গে বেইজিংয়ের সম্পর্ক বৈরিতার পথেই হাঁটবে ।