ঢাকা, ২০ জুলাই ২০২৫, রবিবার, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৪ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

অনলাইন

সীসামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে অঙ্গীকারবদ্ধ যুব সমাজ

স্টাফ রিপোর্টার

(৮ মাস আগে) ৩১ অক্টোবর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ৪:৪১ অপরাহ্ন

mzamin

সীসা বিষক্রিয়া একটি নীরব ঘাতক, যা মস্তিষ্কের উন্নয়ন ও সামগ্রিক স্বাস্থ্যকে ক্ষতি করে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। আমাদের শিশুদের ভবিষ্যৎ সুন্দর করতে এই বিষাক্ত উপাদানটি আমাদের পরিবেশ থেকে দূর করার জন্য কঠোর নিয়মের প্রয়োজন।
বৃহস্পতিবার পরিবেশ অধিদপ্তরের অডিটোরিয়ামে “ইয়ুথ ভয়েস ফর এ লেড-ফ্রি ফিউচার: এম্পাওয়ারিং চেঞ্জ এন্ড রেইজিং এওয়ারনেস” শীর্ষক অনুষ্ঠানের বক্তারা এসব কথা বলেন ।
‘উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ শুরু হোক সীসা-মুক্ত ভাবে’ এই প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে, যুব সমাজকে সীসামুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য উৎসাহিত করা এবং সীসা বিষক্রিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শক্তিশালী পরিবর্তনকারী হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক সীসা বিষক্রিয়া প্রতিরোধ সপ্তাহ (আইএলপিপিডাব্লিও) ২০২৪-এর সমাপ্তি উপলক্ষ্যে এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন-এসডো, ইউনিসেফ বাংলাদেশ, ইউএসএইড, কেয়ার বাংলাদেশ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

আইএলপিপিডাব্লিও এর লক্ষ্য অনুযায়ী, অনুষ্ঠানটিতে সীসা বিষক্রিয়ার ফলে স্বাস্থ্য সংকটকে তুলে ধরা হয়েছে যা বিশ্বব্যাপী শিশুদের প্রভাবিত করছে। বাংলাদেশে ৩৫.৫ মিলিয়নেরও বেশি শিশুর রক্তে নিরাপদ সীমার উপরে সীসার উপস্থিতি আছে, যার কারণে বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে একটি।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ বলেন, আমাদের যুবসমাজ সীসা-মুক্ত বাংলাদেশ গঠনে নেতৃত্ব দেয়ার মাধ্যমে, সংশ্লিষ্ট নিয়মগুলো শক্তিশালী করা এবং সকলের জন্য একটি নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য উৎসাহিত করছে।
সাবেক সচিব এবং এসডোর চেয়ারপার্সন সৈয়দ মার্গুব মুরশেদ বলেন, তরুণদের মতামত এবং কাজগুলি আমাদের শিশুদের এবং দেশের মানুষকে সীসা বিষক্রিয়া থেকে রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে অপরিহার্য ভূমিকা রাখবে। 
ইউনিসেফের চিফ অফ হেলথ মায়া ভান্ডেনেন্ট বলেছেন, সীসা বিষক্রিয়া একটি নীরব ঘাতক, যা মস্তিষ্কের উন্নয়ন ও সামগ্রিক স্বাস্থ্যকে ক্ষতি করে। আমাদের শিশুদের ভবিষ্যৎ সুন্দর করতে এই বিষাক্ত উপাদানটি আমাদের পরিবেশ থেকে দূর করার জন্য কঠোর নিয়মের প্রয়োজন।

ইউএসএইড, সিএনএইচএ কেয়ার বাংলাদেশের চিফ অফ পার্টি ড. ইখতিয়ার উদ্দিন খন্দকার বলেন, আমাদের যুব সমাজ একটি স্বাস্থ্যকর, সীসা-মুক্ত ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছে। তাদের প্রতিশ্রুতি আমাদেরকে সীসা বিষাক্ততা সংক্রান্ত নীতিমালাকে জোরদার করার কর্মসূচিকে চালিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করছে।
অনুষ্ঠানের সেশন চেয়ার, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির ফার্মেসি বিভাগের ছাত্রী জেসমিন কবির জেরিন বলেন, আমাদের এখনই সীসা দূষণের বিরুদ্ধে আইনগুলোকে শক্তিশালী করার জন্য কাজ করতে হবে। আগামী প্রজন্মকে সীসার সংস্পর্শ থেকে রক্ষা করতে পারলেই, একটি স্বাস্থ্যকর এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত হবে।
যুব প্রতিনিধি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এনভায়রনমেন্টাল সাইন্স অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টের ছাত্রী ফাতেমা বিনতে জাহিদ বলেন, সীসা বিষক্রিয়া শিশুদেরকে বেশি প্রভাবিত করে। এর সংস্পর্শ কমাতে এবং টেকসই পরিবেশগত অভ্যাস প্রচারের জন্য জনসচেতনতামূলক ক্যাম্পেইনের প্রয়োজন।

ডা. উম্মে সালমা জাহান মীনা, ফ্যামিলি হেলথ টিম লিড, পপুলেশন, হেলথ, এবং নিউট্রিশন অফিস, ইউএসএইড, সীসা দূষণের ব্যাপক প্রভাবের কথা তুলে ধরেন এবং শিশুদের উপর এর ক্ষতিকর প্রভাবের দিকে গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, সীসা দূষণ স্বাস্থ্য, সমাজ, পরিবেশ, এবং বিশেষভাবে শিশুদের উপর গভীর প্রভাব ফেলে। এই বিষয়টির উপর মনোযোগ দিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। মাটিতে, বাতাসে, শিশুদের খেলনা, খাবার, মসলা, পানি এবং রঙে থাকা সীসার কারণে মানব স্বাস্থ্য ও পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। যদিও বাংলাদেশ সরকার হলুদে সীসা মেশানো বন্ধ করেছে, তবুও সীসা দূষণ শিশুদের ক্ষতিকর করছে, যা তাদের মস্তিষ্কের বিকাশ, শারীরিক স্বাস্থ্য এবং মানসিক সুস্থতায় প্রভাব ফেলে।
এসডোর নির্বাহী পরিচালক সিদ্দীকা সুলতানা সীসা বিষাক্ততা নির্মূলের গুরুত্বপূর্ণ দিকটি তুলে ধরেন এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ হিসেবে শিশুদের সুরক্ষার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, সীসা বিষাক্ততা কোনও নিরাপদ মাত্রা নেই, এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ হিসেবে শিশুদের সুস্থতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সীসামুক্ত একটি প্রজন্ম গড়ে তুলতে, যুবসমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তারা পরিবর্তনের জন্য প্রচার চালাতে, সচেতনতা বৃদ্ধি করতে, শিল্প ও সংস্কৃতিকে কাজে লাগাতে, মানবাধিকারকে সমর্থন করতে এবং জনস্বাস্থ্য উদ্যোগগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

অনুষ্ঠানের মূল বক্তা হিসেবে ছিলেন, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির ফার্মেসি বিভাগের ছাত্র জুবায়ের হোসেন। এছাড়াও বাংলাদেশ গার্লস গাইড অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ স্কাউটস, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, লামাটিয়া হাউজিং সোসাইটি স্কুল ও কলেজ এবং ধানমন্ডি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের যুব প্রতিনিধিরা, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারক এবং বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানটিতে ছাত্রদের তৈরি করা ব্যানার, পোস্টার, ছবি প্রদর্শনী এবং আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। আলোচনায় শিশুদের স্বাস্থ্য ও উন্নয়নের ওপর সীসার নেতিবাচক প্রভাবগুলো তুলে ধরার পাশাপাশি এর মাত্রা কমানোর জন্য সম্ভাব্য সমাধানগুলোও তুলে ধরা হয়। প্রশ্ন-উত্তর সেশনে শিক্ষার্থীরা নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে একটি সংলাপ করেন যেখানে সীসা নিয়ে বিধিমালা শক্তিশালী করার জন্য সুপারিশ উপস্থাপন করা হয় এবং মানুষের মধ্যে সীসার ঝুঁকি কমানোর আহ্বান জানানো হয়।

 

অনলাইন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

অনলাইন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status