ঢাকা, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, বুধবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিঃ

খেলা

মহানায়ক সালাউদ্দিনের খলনায়ক হিসেবে বিদায়

স্পোর্টস রিপোর্টার
২৭ অক্টোবর ২০২৪, রবিবারmzamin

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি হিসেবে কাজী সালাউদ্দিনের ১৬ বছরের রাজত্বের অবসান ঘটেছে। গতকাল আনুষ্ঠানিক নির্বাচনের মাধ্যমে তার জায়গায় বাফুফে সভাপতির মসনদে বসেছেন তাবিথ আউয়াল। এই নির্বাচনের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের ফুটবলের মহানায়ক, কিন্তু বাফুফে সভাপতি হিসেবে খলনায়কে পরিণত হয়ে বিদায় নিলেন। যাওয়ার সময় বাফুফের ঘাড়ে প্রায় দশ কোটি টাকার দেনার বোঝা রেখে গেলেন সালাউদ্দিন। শেষ কংগ্রেসে মাহফুজা আক্তার কিরণকে পাশে বসিয়ে নিয়ম ভাঙেন। 

২০০৮ সালের ২৮শে এপ্রিল সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ভোট যুদ্ধে নেমেছিলেন কিংবদন্তী কাজী সালাউদ্দিন। মেজর জেনারেল (অব.) আমিন আহমেদ চৌধুরীকে হারিয়ে বাফুফে সভাপতি নির্বাচিত হন দেশের ফুটবলের প্রথম সুপারস্টার। দায়িত্ব নিয়েই ধুঁকতে থাকা ফুটবলকে সচল করেন।  তার আমলে নিয়মিত হয় পেশাদার ফুটবল। কোটি টাকার সুপার কাপ আয়োজন করে হৈ-চৈ ফেলেদিয়ে ছিলেন সালাউদ্দিন। মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থনে ২০১২ সালেও নির্বাচিত হন সভাপতি পদে। এরপর অবশ্য মোহভঙ্গ ঘটতে সময় লাগেনি। এরপরই সালাউদ্দিন বদলে ফেলেন নিজেকে। অগ্রাধিকারে এরপর আর ফুটবলের সত্যিকারের উন্নয়ন থাকেনি। বরং নিজের এবং ছায়াসঙ্গীদের চাওয়া-পাওয়া বড় হয়ে ওঠে তার কাছে। ফুটবলকে সঠিক পথে রাখতে যা যা করা প্রয়োজন ছিল, তার বেশিরভাগই করতে পারেননি কিংবা করতে চাননি। জাতীয় দল আর প্রিমিয়ার লীগ নিয়েই পড়ে থেকেছেন। আর ভীষণ জোর দিয়েছিলেন নারী ফুটবল উন্নয়নে। ফুটবলার উঠে আসার জমিনে পানি-সার কিছুই দেননি। ফলে ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে থাকে গ্রাম-গঞ্জের ফুটবল। জেলাগুলো লম্বা ঘুমে চলে যায়। তাদের জাগানোর দায়িত্ব নিয়েও জাগাননি এক রহস্যময় কারণে। অথচ ফি নির্বাচনে জিততে কারি কারি টাকা ঢেলেছেন, কিনেছেন ভোট। আবার টাকায় যেটা সমাধান হয়নি, সেটা করতে ব্যবহার করেছেন সরকারের বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে। 

এভাবেই দেখতে দেখতে চারবার সভাপতি পদ দখলে রেখেছেন। তারকাখ্যাতি ব্যবহার করে তিনি পারতেন দেশের ফুটবলে সোনা ফলাতে। শুরুর দিকে অনেক কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছিল ফুটবলের সহায়তায়। কারি কারি টাকা দিয়েছে। তবে তাদের বিদায়গুলো হয়েছে হতাশায়। ফিফা-এএফসির কাছ থেকে আসা বিপুল অর্থ ব্যবহারে কোন স্বচ্ছ্বতা ছিল না সালাউদ্দিনের ফুটবল প্রশাসনের। তার নাকের ডগায় দুর্নীতি, জালিয়াতি ও অনিয়মের রাজত্ব কায়েম করেন ফিফার নিষেধাজ্ঞা পাওয়া সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ। এসবে আমল না দিয়ে তিনি ব্যস্ত হয়ে পড়েন কিরণকে ফিফা এফসিতে পৌঁছে দিতে। গতকাল ছিল সভাপতি হিসেবে সালাউদ্দিনের শেষ বার্ষিক কংগ্রেস। এখানে তার বাজেট পাশ করেনি ডেলিগেটরা। বিদায় বেলায় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে বাফুফের পাওনা প্রায় দশ কোটি টাকা। যার মধ্যে নতুন সভাপতি তাবিথ আউয়াল পাবেন প্রায় দুই কোটি টাকা। কংগ্রেসে নিয়ম অনুযায়ী সভাপতির দুই পাশের আসনগুলো বরাদ্দ থাকে সিনিয়র সহ-সভাপতি ও চার সহ-সভাপতির জন্য। আর পেছনের সারিতে ক্রম অনুযায়ী বসেন নির্বাহী সদস্যরা। তবে কিরণের ক্ষেত্রে এই নিয়ম বারবার ভেঙেছেন সালাউদ্দিন। অতীতে সহ-সভাপতিদের কাতারে বসানো হয়েছে তাকে।

 এবারের কংগ্রেসে সিনিয়র সহ-সভাপতি ও তিন সহ-সভাপতি উপস্থিত না থাকায় কিরণকে নিজের পাশে বসান সালাউদ্দিন। এ নিয়ে কংগ্রেসে একেবারে শুরুতে প্রশ্ন তোলেন শরিয়তপুর জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের ডেলিগেট মোজাম্মেল হক চঞ্চল। সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষারকে ডেকে আপত্তি জানান তিনি। এ সময় সাধারণ সম্পাদককে ডেকে হট্টগোলের কারণ জানতে চান সালাউদ্দিন। কিরণকে বসানো নিয়ে আপত্তির কথা শুনে মেজাজ হারান সালাউদ্দিনও। নিজের আসনে বসেই সেই ডেলিগেটের সঙ্গে তর্ক শুরু করেন বাফুফের বিদায়ী সভাপতি। বিষয়টি ভীষণ দৃষ্টিকটু হয়ে পড়ে কংগ্রেসের কক্ষে। বিদায়ী কমিটির একমাত্র উপস্থিত সহ-সভাপতি ও নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত সিনিয়র সহ-সভাপতি ইমরুল হাসান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘কংগ্রেসে সব কিছুই ঠিক ছিল। তবে শুরুর আগে কিরণ ম্যাডামের আসন নিয়ে একজন ডেলিগেট আপত্তি তুলেছিলেন। সভাপতি তাকে তার পাশেই বসিয়েছিলেন।’ ২০২০ নির্বাচনে নির্বাহী সদস্য পদে খুব বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হননি কিরণ। ১১তম প্রার্থী হিসেবে ৭০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন তিনি। সে হিসেবে তার আসন কোনোভাবেই সভাপতির ধারে কাছে থাকার কথা নয়। সিনিয়র সহ-সভাপতি ও তিন সহ-সভাপতি না থাকায় সালাউদ্দিনের এক পাশে ইমরুল হাসান এবং অপর পাশে ২০২০ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে সদস্য নির্বাচিত হওয়া জাকির হোসেন চৌধুরীর বসার কথা ছিল। অথচ জাকিরের জায়গা নিয়ে নেন কিরণ। এরকম ঘটনা অবশ্য বাফুফেতে নিয়মিতই ঘটেছে। নিয়মের তোয়াক্কা না করে সালাউদ্দিনের ছায়া সঙ্গী হয়েই ছিলেন কিরণ। বিদায় বেলাতেও এই কিরণকে নিয়ে বির্তকে জড়ালেন। মহানয়ক হিসেবে ফুটবলে ঢুকে খলনায়ক হিসেবে বিদায় নিলেন।  

খেলা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

খেলা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status