শরীর ও মন
ক্যান্সার চিকিৎসা
ডা. এম এ হক, পিএইচ. ডি
২৫ জুলাই ২০২২, সোমবারএকবিংশ শতাব্দীতে বিজ্ঞানের চরম উন্নতির যুগেও লক্ষ লক্ষ লোক আজ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুবরণ করছে। পৃথিবীতে প্রায় ২০০ প্রকারের ক্যান্সার রয়েছে, প্রতিটি ক্যান্সারেরই আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। দেখা যায় ক্যান্সার যেখানে গঠিত হয় সেই অঙ্গের নামেই বেশির ভাগ ক্যান্সারের নামকরণ করা হয়; যেমন প্রস্টেট ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার, জরায়ু ক্যান্সার, অগ্নাশয় ক্যান্সার, লিভার ক্যান্সার, ব্রেন ক্যান্সার, ব্লাড ক্যান্সার, ফুসফুস ক্যান্সার, স্কিন ক্যান্সার, মলদ্বার ক্যান্সার ইত্যাদি। বর্তমানে ক্যান্সার নিয়ে প্রচুর গবেষণা হচ্ছে এবং এ সম্পর্কে নতুন নতুন তথ্য জানা যাচ্ছে। তবে, আশার কথা প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার ধরা পড়লে সঠিক হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার মাধ্যমে এ রোগ থেকে মুক্তি সম্ভব এবং পরবর্তী অবস্থায় ধরা পড়লে উপশম সম্ভব। সাম্প্রতিক হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি ক্যান্সার আরোগ্য হওয়ায় জনসাধারণ আজ ক্যান্সার চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার দিকে ঝুঁকছে।
ক্যান্সার কি?
আমাদের শরীর অসংখ্য কোষের মাধ্যমে গঠিত। এই কোষসমূহ একটি নির্দিষ্ট সময় পর মারা যায় এবং এই পুরাতন কোষের স্থানে নতুন কোষ সৃষ্টি হয়। সাধারণভাবে কোষগুলো নিয়মতান্ত্রিকভাবে বিভাজিত হয়ে নতুন কোষের জন্ম দেয়। কোন কারণে এক গুচ্ছ কোষ যদি অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃদ্ধি পায় তখন তাকে আমরা টিউমার বলি। টিউমার বিনাইল বা ম্যালিগন্যান্ট হতে পারে।
ক্যান্সারের কারণ
প্রকৃতি বিরুদ্ধ কাজ অনিয়ন্ত্রিতভাবে চলতে থাকলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। ক্যান্সার সাধারণত জেনেটিক কারণে, অসংলগ্ন জীবনযাপনে, অধিক খাদ্য গ্রহণে, রাত্র জাগরণ, পরিবেশগত কারণ, পেশাগত কারণ, অনিয়ন্ত্রিত যৌন আচরণ, অধিক পরিমাণে ঔষধ সেবন, নেশা দ্রব্য গ্রহণ, সর্বোপরি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হলে ক্যান্সার হতে পারে। সাধারণত বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমতে থাকে। ফলে, ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়তে থাকে। অনেক রুগী অযথা টিউমার অপারেশনে আগ্রহী। চিকিৎসা ব্যবস্থায় সার্জারির প্রয়োজন নিশ্চয় আছে তবে, ভেবে দেখা উচিত টিউমার অপারেশনের পর রুগীর পরিণতি কি হবে। খ্যাতনামা চিকিৎসক ডা. স্টোকার তার সুচিন্তিত মন্তব্যে জানিয়েছেন যে, অপারেশনের পর শরীরের একাধিক স্থানে এমনকি সারা দেহে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ সকল ক্ষেত্রে বুঝা প্রয়োজন টিউমারের উপর অন্যায় আঘাত না করায় উত্তম; বরঞ্চ সুযোগ থাকলে সঠিক হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
ক্যান্সারের লক্ষণ
একেক ক্যান্সারের জন্য একেক ধরনের লক্ষণ থাকে। তবে, সাধারণত: অযৌক্তিক ক্লান্তি, দুর্বলতা, ক্ষুধা মন্দা, হজমে সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্য বা উদরাময়, অতৃপ্ত ঘুম, মানসিক অস্বস্তিভাব ইত্যাদি লক্ষণসমূহ দেখা দেয়।
ক্যান্সারের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা আধুনিক বিজ্ঞানের এক বিস্ময়কর অবদান। অপারেশনের টেবিল থেকে ফেরতকৃত একজন ব্রেন ক্যান্সারের রুগী (যাকে ৫ থেকে ৭ দিন বাঁচার কথা বলা হয়েছিল) আমার চিকিৎসায় প্রায় ২ বছর সুস্থ ছিলেন, এর পর আর যোগাযোগ রাখেনি। প্রতি মাসে ২ ব্যাগ করে ব্লাড গ্রহণকারী একজন থ্যালাসেমিয়ার রুগী আমার চিকিৎসা গ্রহণের পর প্রায় ১০ বছর যাবৎ আর কোনো ব্লাড দিতে হয়নি। ক্যান্সার চিকিৎসায় এরকম শত শত অভিজ্ঞতা রয়েছে। হোমিওপ্যাথিক ঔষধ ভাণ্ডারে ক্যান্সার চিকিৎসায় কার্সিনোসিন, টিউবারকুলিনাম, সোরিনাম, সিফিলিনাম, মেডোরিনাম, টিউবারকুলিনাম, কার্বো-এ্যানিমেলস, আর্সেনিক এ্যাল্বাম, আর্সেনিক আয়োড, এসিড নাইট্রিক, ন্যাট্রাম সালফ, বার্বারিসের মতো অসংখ্যা কার্যকরী ঔষধ রয়েছে যার পরশে প্রতিনিয়ত অসংখ্য ক্যান্সার রুগী আরোগ্য লাভ করছে। সাধারণ মানুষ আজ বুঝেছেন যে, ক্যান্সার চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথির সুশীতল ছায়া অধিকতর আরামদায়ক। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা সেবার মাধ্যমে ক্যান্সার রোগীদেরকে স্বল্পসময়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে। তাই আজ সচেতন নাগরিকগণ ক্যান্সার চিকিৎসায় হোমিও চিকিৎসার দিকে ঝুঁকছে। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা প্রদানের পাশাপাশি রুগীর দ্রুত উন্নতির জন্য কাউন্সেলিং, নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ঘুম, পরিমিত ব্যায়াম, মানসিক চাপমুক্ত জীবন ইত্যাদির দিকে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন।
লেখক: ডা. এম এ হক, পিএইচ. ডি (স্বাস্থ্য), এম. ফিল. (স্বাস্থ্য), ডি এইচ এম এস. পুরাতন ও জটিল রোগের অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক। চেম্বার-হক হোমিও ক্লিনিক, মোহাম্মদপুর (শিয়া মসজিদ সংলগ্ন র্যাব অফিসের বিপরীতে), ঢাকা।
প্রয়োজনে: ০১৭১২-৪৫০৩১০