ঢাকা, ১৬ জুন ২০২৫, সোমবার, ২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৮ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

অনলাইন

হাকালুকি হাওরে জল টর্নেডোর ভিডিও ভাইরাল

স্টাফ রিপোর্টার, মৌলভীবাজার থেকে

(২ বছর আগে) ২৪ জুলাই ২০২২, রবিবার, ১:৪১ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৫:২৩ অপরাহ্ন

mzamin

দেশের সর্ববৃহৎ হাওর হাকালুকি হাওরে হঠাৎ করে সৃষ্টি হওয়া ভয়ংকর জল টর্নেডোর ভিডিওটি এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল। স্থানীয় বাসিন্দাদের মুঠোফোনে ধারণকৃত ওই ভিডিও নিয়ে আলোচনা এখন জেলাজুড়ে সবার মুখে মুখে। সাগরে এমন দৃশ্য দেখা গেলেও তা হাওর এলাকায় দেখা মিলে কম। নিকট অতীতে এমন দৃশ্যের দেখা মিলেছে কিনা তা নিয়ে যেমন চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। তেমনি ওই দৃশ্যের বিজ্ঞান সমেত বক্তব্যও খোঁজছেন অনেকেই। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিতে মূলধারার গণমাধ্যম কর্মীদেরকে ফোন দিয়ে তা জানতে চাচ্ছেন। তবে দীর্ঘদিন থেকে ভয়াবহ বন্যায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতার দুর্ভোগে থাকা হাকালুকি হাওর তীরের বাসিন্দারা বলেছেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে এটা আল্লাহর কুদরত ও রহমত। টর্নেডোর পর ওই এলাকায় অনেক পানি কমেছে। জানা যায়, ২৩শে জুলাই শনিবার গোধুলীলগ্নে হঠাৎ করে হাকালুকি হাওরের চাতলাবিল ও বাইলাকান্দির মধ্যস্থলে জল টর্নেডো শুরু হয়। এমন দৃশ্য সরাসরি অবলোকন করেন ও নিজেদের মুঠোফোনে তা ধারণ করেন বড়লেখা, জুড়ী ও কুলাউড়া উপজেলার হাওর পাড়ের মানুষ। তারা বলেন, হঠাৎ হাওরের জল কুন্ডলির ন্যায় ঘূর্ণন গতিতে আকাশের দিকে উঠে কালো মেঘের ভেতর গিয়ে প্রবেশ করে।

 এ অবস্থার স্থায়ীত্বকাল ছিল প্রায় ১৫ মিনিট। ওই  সময় হাওরের কয়েক কিলোমিটার এলাকা থেকে ওই স্থানে ছুটে যাওয়া পানির স্রোত ছিলো প্রবল। হাওর পাড়ের মানুষ প্রথমবারের মতো সরাসরি টর্নেডো প্রত্যক্ষ করেন ও অনেকেই মুঠোফোনে তা ভিডিও ধারণ করেন। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ওই ভিডিও ভাইরাল হয়। প্রথম দিকে অনেকে ওই ভিডিও নিয়ে নানা সন্দেহ পোষণ করলেও পরে তা প্রমাণিত হয় ওই ভিডিওটি হাকালুকির। হাওর তীরের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার সন্ধ্যার কিছু আগে হঠাৎ দেখেন হাওরের ভেতর পানি ও আকাশ এর মধ্যে হাতির শুঁড়ের মতো কিছু একটা ঘূর্ণন খাচ্ছে। অনেকেই এমন দৃশ্য দেখে ভয় পান। ঘূর্ণন দুর্বল হয়ে আসার পরই শুরু হয় ঝড় ও বৃষ্টি। ফেসবুকে লাইভকারী অনেকেই লিখেন বাতাশের টর্নেডো দেখেছি জলের টনের্ডো দেখলাম এই প্রথম। বেশ কয়েক বছর আগে হাকালুকি হাওরে এধরনের দৃশ্য দেখা গিয়েছিল বলে অনেকেই বলেছেন।

 তবে এ প্রজন্মের সবাই এই প্রথম এমন দৃশ্য দেখে তা ভিডিও ধারন করেন। ওই টর্নেডোর কারণে কোথাও কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।  তবে অনেকেই টর্নেডোর বিজ্ঞান সমেত বক্তব্য তুলে ধরেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তারা সংজ্ঞা দিচ্ছেন  টর্নেডো এক ধরনের ঝড়, যা বায়ুস্তম্ভের আকারে সৃষ্ট প্রচ- বেগে ঘূর্ণায়মান ঝড় যা মেঘ (সাধারণত কিউমুলোনিম্বাস, ক্ষেত্রবিশেষে কিউমুলাস) এবং পৃথিবীপৃষ্ঠের সাথে সংযুক্ত থাকে। টর্নেডোর আকৃতি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এটি দৃশ্যমান ঘনীভূত ফানেল আকৃতির হয়। যার চিকন অংশটি ভূপৃষ্ঠকে স্পর্শ করে এবং এটি প্রায়শই বর্জ্যের মেঘ দ্বারা ঘিরে থাকে। আবহাওয়া বিজ্ঞানের শব্দকোষ (এষড়ংংধৎু ড়ভ গবঃবড়ৎড়ষড়মু) অনুযায়ী, টর্নেডো হল প্রচ-বেগে ঘূর্ণনরত একটি বায়ুস্তম্ভ, যা ভূপৃষ্ঠের সংস্পর্শে একটি কিউমুলিফর্ম মেঘ থেকে ঝুলন্ত বা এর নীচে থাকে, এবং প্রায়শই (কিন্তু সবসময় নয়) একটি ফানেলাকৃতির মেঘ হিসেবে দৃশ্যমান থাকে। টর্নেডো তৈরি হয় অনেকটা কালবৈশাখীর নিয়ম মেনে।

 সমুদ্র থেকে গরম জলীয় বাষ্প ভরা বাতাস সমতলে ঢুকে ক্রমশ উপরের দিকে উঠতে থাকে। এক সময়ে তা ঠান্ডা বাতাসের সংস্পর্শে চলে আসে। আর তার থেকেই তৈরি হয় উল্লম্ব মেঘ। উল্লম্ব মেঘ উচ্চতায় বাড়তে থাকে এবং এক সময় সেই মেঘ ভেঙে গিয়ে তৈরি হয় কালবৈশাখী। টর্নেডো তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়াটাও প্রায় একই রকম। তবে এ ক্ষেত্রে বায়ুপ্রবাহের জটিলতায় দীর্ঘকায় উল্লম্ব মেঘের ভিতরে ঘূর্ণি তৈরি হয়। সেই ঘূর্ণি একটি সরু ফানেলের আকারে (মনে হয় যেন হাতির শুঁড়) নেমে আসে মাটির কাছাকাছি। আর মাটি ছুঁয়েই সেই দৈত্যাকৃতি ঘূর্ণায়মান ফানেল তার কেন্দ্রের দিকে সব কিছু টেনে নেয়। ১৯৮৯ সালের ২৬ এপ্রিল মানিকগঞ্জ জেলায় শক্তিশালী টর্নেডোতে মারা গিয়েছিলেন ১৩শ’ মানুষ।

অনলাইন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

অনলাইন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status