ঢাকা, ১৫ জুন ২০২৫, রবিবার, ১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৭ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

নিত্যপণ্যে নাভিশ্বাস দাম কমবে কবে?

মো. আল-আমিন
১১ অক্টোবর ২০২৪, শুক্রবার
mzamin

চাল, তেল, চিনি, ডিম, আলু, মাংস, সবজিসহ নিত্যপণ্যের বাড়তি দামে চাপে পড়েছেন স্বল্প ও মধ্য আয়ের মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে মানুষকে স্বস্তি দেয়ার উপায় হিসেবে কয়েকটি পণ্যের শুল্ক ছাড় দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। দায়িত্ব গ্রহণের প্রায় এক মাস পর গত ৫ই সেপ্টেম্বর প্রথমে আলু ও পিয়াজের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে পণ্য দু’টির শুল্ক ছাড় দেয় সরকার। আলু আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। এক্ষেত্রে প্রযোজ্য ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্কও সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়। একই সঙ্গে পিয়াজের ওপর প্রযোজ্য ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করা হয়। অথচ সেপ্টেম্বরে এসব পণ্যের দাম না কমে উল্টো আরও বেড়ে যায়। ৫ই সেপ্টেম্বরের আগে বাজারে প্রতি কেজি পিয়াজের দাম ছিল ১০৫ থেকে ১২০ টাকা। শুল্ক কমানোর পর পিয়াজের দাম হয় ১১০ থেকে ১২০ টাকা। অন্যদিকে শুল্ক ছাড়ের পর আলুর দামও কেজিতে ৩ টাকা বেড়ে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়। ফলে সরকার শুল্ক কমালেও তার সুফল ভোক্তার ভাগ্যে না জুটলেও ব্যবসায়ীরা তার সুফল তুলে নিয়েছে। 

এদিকে একের পর এক পণ্যের দাম বাড়ায় নাভিশ্বাস অবস্থা সাধারণ ক্রেতার। সম্প্রতি কাঁচা পণ্যের অস্বাভাবিক দাম বাড়ায় বাজারে মানুষের ভোগান্তি নতুন করে বাড়িয়েছে। বন্যা ও বৃষ্টির অজুহাতে শাক-সবজির দাম বেড়েছে অনেক। এ ছাড়া ডিমের বাজারেও চলছে তুঘলকি কারবার। এখন আমদানি করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমদানি শুল্ক কমানোরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। 

ওদিকে চিনির দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার লক্ষ্যে আমদানি পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক অর্ধেক কমিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বুধবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এনবিআর জানায়, অপরিশোধিত ও পরিশোধিত উভয় প্রকার চিনি আমদানির ওপর বিদ্যমান নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। তাই এবার প্রশ্ন উঠেছে, শুল্ক কমানোর সুফল ভোক্তার ভাগ্যে জুটবে কি-না। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার যদি শুল্ক কমিয়ে এবং দাম নির্ধারণ করেই হাত গুটিয়ে বসে থাকে তাহলে এর সুফল ভোক্তারা এবারো পাবেন না। এজন্য বাজার তদারকি করতে হবে এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এটা না করা গেলে এবারো ব্যবসায়ীরাই সুফল তুলে নেবে।  

এর আগেও শুল্ক কমার সুফল পায়নি ভোক্তারা: চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে চিনি, চাল, তেল ও খেজুরের শুল্ক কমিয়েছিল সরকার। কিন্তু তখন বাজারে এর কোনো প্রভাব দেখা যায়নি। উল্টো দফায় দফায় এসব পণ্যের দাম বাড়তে দেখা গেছে। শুল্ক কমানোর পর প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭০ থেকে ১৭৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। আর খোলা চিনির কেজি ১৪০ থেকে ১৪৫ এবং প্যাকেটজাত চিনি ১৪৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছিল। এ ছাড়া সাধারণ মানের খেজুর বিক্রি হচ্ছিল ২৫০ থেকে ৮৫০ টাকা। অন্যদিকে শুল্ক কমানোর আগে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম একই ছিল। তবে কম ছিল চিনির দাম। শুল্ক কমার আগে প্রতি কেজি চিনির দাম ছিল ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। আর প্রতি কেজি সাধারণ মানের খেজুরের দাম ছিল ২৫০ থেকে ৪৫০ টাকা। এদিকে গত বছরের অক্টোবরেও অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে শুল্ক ৩ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা করেছিল সরকার। আর পরিশোধিত চিনির শুল্ক ৬ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ৩ হাজার টাকা করেছিল। সরকার তখন প্রতি কেজি খোলা চিনির মূল্য নির্ধারণ করে দেয় ১৩০ টাকা, আর প্যাকেটজাত চিনি ১৩৫ টাকা। অথচ শুল্ক কমানোর পর তখন কেজি প্রতি চিনির দাম ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়ে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা হয়ে যায়। এর আগে সয়াবিন তেল ও পাম অয়েলেরও শুল্ক কমানো হয়। আগের বছর সয়াবিন ও পাম অয়েল স্থানীয় উৎপাদন পর্যায় এবং ব্যবসায়ী পর্যায়ে আরোপিত ২০ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করেছিল সরকার। এ ছাড়া আমদানি পর্যায়ে শুল্ক ১৫ থেকে ১০ শতাংশ কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়। সব মিলিয়ে ভোজ্য তেলে ৩০ শতাংশ শুল্ক কমানো হয়েছিল। ফলে ভোক্তার মনে আশা জেগেছিল ভোজ্য তেলের দাম লিটারে ৩০ টাকা পর্যন্ত কমবে। কিন্তু ৩০ শতাংশ শুল্ক কমানোর পরও লিটারে সয়াবিন তেলের দাম কমানো হয় মাত্র ৮ টাকা। ফলে শুল্ক কমানোর সুফল কখনোই পাচ্ছেন না ভোক্তারা।

এবার কী বাজারে শুল্ক ছাড়ের প্রভাব পড়বে: এবারো শুল্ক ছাড়ের সুবিধা ভোক্তারা পাবেন না বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, সরকার পরিবর্তন হলেও আমলারা তাদের জায়গায় ঠিকই বসে আছেন। তারা আগের সরকারের আমলেও নানাভাবে ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিয়েছেন এবং নিজেরাও সুবিধা নিয়েছেন। ভোক্তাদের কথা তারা কখনোই চিন্তা করে না। ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতে গত মাসে ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম বেশি করে নির্ধারণ করা হয় বলেও জানান বিশ্লেষকরা। এ বিষয়ে কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)’র ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন মানবজমিনকে বলেন, সরকার যদি শুল্ক কমিয়ে এবং দাম নির্ধারণ করেই বসে থাকে তাহলে এর সুফল ভোক্তারা এবারো পাবে না। প্রতিবারের মতো ব্যবসায়ীরাই লাভবান হবে। ২৯টি পণ্যের আমদানি শুল্ক কমানো হলেও তার প্রভাব বাজারে দেখতে পারছি না। তিনি বলেন, শুল্ক কমার সুফল ভোক্তারা তখনই পাবেন, যখন সরকার মনে করবে তাদের দায়িত্ব শুধু শুল্ক কমানো আর দাম নির্ধারণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না। তাদের দায়িত্ব নিয়মিত বাজার তদারকি করা এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করা। এস এম নাজের হোসাইন বলেন, সরকার পরিবর্তন হলেও আগে থেকে ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিয়ে আসা আমলারা এখনো রয়ে গেছে। তারাও ব্যবসায়ীদের থেকে অনেক সুবিধা নিয়ে আসছে। সেহেতু আমলারা আগের জায়গা থেকে সরে আসতে পারছে না। বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলো তাদের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করছে না জানিয়ে তিনি বলেন, ট্যারিফ কমিশন ব্যবসায়ীদের পক্ষে কাজ করে জিনিসের দাম বাড়িয়ে থাকে। প্রতিযোগিতা কমিশন নামে থাকলেও কাজে নেই। এ ছাড়া ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরও ঠিকঠাক কাজ করতে পারছে না। এজন্য আগের মতোই নিয়ন্ত্রণহীন বাজার। 
 

পাঠকের মতামত

সেনাবাহিনী দিয়ে দেশের বাজার নিয়ন্ত্রন করা হোক না হলে গরীব অসহায় মানুষ মারা যাবে

মিলন খান
১২ অক্টোবর ২০২৪, শনিবার, ১২:৩৯ অপরাহ্ন

সরকার বদল হয়েছে , মধ্য়সত্বা ভোগীরা রয়ে গিয়েছে ব্যবসায়ী নামের আড়ালে। প্রয়োজনে প্রতিটি সেক্টরে সরকারী উৎপাদন, এবং বিক্রি কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে হলেও জিনিস পত্রের দাম কমাতে হবে। যদিও সরষে ক্ষেতের ভূত না ধরতে পারলে সেটাও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।

মেঘকুন্ড দাস
১১ অক্টোবর ২০২৪, শুক্রবার, ১২:০৫ অপরাহ্ন

, সিন্ডিকেট কারী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে

MD saiful islam
১১ অক্টোবর ২০২৪, শুক্রবার, ১০:২৫ পূর্বাহ্ন

বেশি উদার সরকার। একটু কঠিন না হলে গরীব জনগণের নাভিশ্বাস হবে ।

masum
১১ অক্টোবর ২০২৪, শুক্রবার, ৯:৪৩ পূর্বাহ্ন

মুনাফাখোর হারামি ব্যবসায়ীরা সিণ্ডিকেট করে দাম বেশি রেখেছে । এখন ঘাটে ঘাটে চাঁদা ও দিতে হয় না । এদের কঠোর ভাবে দমন করার প্রয়োজন। বেশি উদার সরকার। একটু কঠিন না হলে গরীব জনগণের নাভিশ্বাস হবে ।

Kazi
১১ অক্টোবর ২০২৪, শুক্রবার, ৭:৩৫ পূর্বাহ্ন

এখন বাজার দরের কি অবস্থা তা উল্লেখ না করে পূর্বের অবস্থার বর্ণনা মানুষ শুনতে চায় না ।

Zahurul Islam
১১ অক্টোবর ২০২৪, শুক্রবার, ২:২৯ পূর্বাহ্ন

আমরা আম জনতা সেই ষ্টুপিডই রয়ে গেলাম।

Mohsin
১১ অক্টোবর ২০২৪, শুক্রবার, ১:১৪ পূর্বাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status