ঢাকা, ৪ নভেম্বর ২০২৪, সোমবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

চোখে বুলেটবিদ্ধ আবেদের পরিবারকে কে দেখবে?

জাভেদ ইকবাল, রংপুর থেকে
৯ অক্টোবর ২০২৪, বুধবারmzamin

১৯শে জুলাই বৃহস্পতিবার। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল রংপুর। দফায় দফায় ছাত্র-জনতার সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছিল নগরীতে। সুপার মার্কেটে নিয়মিত মাস্ক বিক্রি করে সংসার চালানো আবেদ সেদিনও বেরিয়েছেন, তবে সেদিন শুধু মাস্ক বিক্রির উদ্দেশ্যে নয়, আবেদ বেরিয়েছেন ছাত্রদের পাশে দাঁড়াতেও। সেদিন ছাত্রদের বিক্ষোভ-স্লোগানের সঙ্গে মিশেছিল তারও প্রতিবাদী চিৎকার। হঠাৎ বিক্ষোভে পুলিশ রাবার বুলেট ছোড়ে। বেশ কয়েকটি রাবার বুলেট লাগে আবেদের শরীরে। তারই একটি আঘাত করে চোখে। তাকে নেয়া হয় হাসপাতালে। সেদিন থেকেই আবেদের চোখে পৃথিবীর একটিই রং, সেটি কালো।

রংপুর নগরীর জুম্মাপাড়া এলাকার আবেদুল ইসলাম আবেদ লুঙ্গি-গেঞ্জি ও কালো চশমা চোখে বসে আছেন তার জীর্ণ-শীর্ণ বাড়ির উঠানে। পাশে বসে স্ত্রী মৌসুমী বেগম। উঠানে খেলা করছে আবেদের দেড় বছরের শিশু। কিন্তু এর কিছুই দেখতে পারছেন না আবেদ।  বৃদ্ধ বাবা-মাসহ ৫ জনের সংসার আবেদের। আবেদ জানান, ১৯শে জুলাই নগরীর সুপার মার্কেটের সামনে মাস্ক বিক্রি করছিলেন তিনি। বিকালে ছাত্ররা শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে আসলে সিটি করপোরেশনের সামনে পুলিশ বাধা দেয় এবং ছাত্রদের ওপর গুলি ছোড়ে। শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা দেখে অন্যদের মতো আবেদও ছাত্রদের পাশে দাঁড়ান। এতে তার শরীরে ও চোখে রাবার বুলেট লাগে। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আবেদের শরীরের রাবার বুলেট অপসারণ করা হলেও চোখের আলো ফেরানো সম্ভব হয়নি। গত ২১শে জুলাই চিকিৎসকের পরামর্শে ঋণ করে পরিবারের সদস্যরা জাতীয় চক্ষু হাসপাতালে আবেদকে ভর্তি করে। দু’দিন চিকিৎসা করে দৃষ্টিশক্তি না ফেরায় ঢাকার ইস্পাহানী ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। সেখানে ২৪শে জুলাই পর্যন্ত তার চিকিৎসা চলে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন আবেদ চিরতরে অন্ধ হয়ে গেছে। তবে কর্নিয়া স্থাপন করা গেলে তার দৃষ্টিশক্তি ফিরে আসতে পারে। এতে প্রয়োজন বিপুল অঙ্কের টাকা। একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি দৃষ্টি হারানোয় আবেদের পরিবার দিশাহারা হয়ে পড়েন। তার ওপর ঋণ করে আবেদের চিকিৎসা করানোয় পাওনাদাররা টাকার জন্য প্রতিদিন চাপ দিচ্ছে। 

ভুক্তভোগী আবেদ বলেন, কতোদিন হলো আমার শিশু সন্তান, বৃদ্ধ বাবা-মা’র মুখ দেখি না। আর তাদের মুখ দেখতে পারবো কিনা, এটি ভেবে খুবই খারাপ লাগে। স্ত্রী মৌসুমী বেগম বলেন, আমার স্বামীর উপার্জন দিয়ে সংসার চলতো। এখন বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়ি, আমার সন্তান ও আমাকে কে দেখবে। বাবা নুরুল হক বলেন, ঢাকায় ডাক্তাররা বলছে কর্নিয়া যদি স্থাপন করা যায় তবে আবেদ চোখে দেখতে পারবে। সেজন্য অনেক টাকা লাগবে। আমি সেই টাকা কোথায় পাবো। গায়ে তো শক্তি নাই যে কাজ করে টাকা যোগাড় করবো। আমি সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি তারা যেন আমার ছেলের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে এই সংসারের ৫ জনকে ভালোভাবে বেঁচে থাকতে সহযোগিতা করে। মা রবেদুন নেছা বলেন, আমাদের বাড়ির ভিটা ছাড়া আর কোনো সম্পদ নাই। আবেদের চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা খরচ হয়েছে। সরকার আমাদের দিকে যেন দৃষ্টি দেয়।

 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status