ঢাকা, ১১ জুলাই ২০২৫, শুক্রবার, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৫ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

বাংলারজমিন

পাকুন্দিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জনবল সংকটে ব্যাহত স্বাস্থ্যসেবা

সাখাওয়াত হোসেন হৃদয়, পাকুন্দিয়া (কিশোরগঞ্জ) থেকে
৪ অক্টোবর ২০২৪, শুক্রবার
mzamin

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এই সংকট থাকায় উপজেলাবাসী পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। উপজেলার প্রায় চার লাখ মানুষের জন্য ৫০ শয্যাবিশিষ্ট এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি চালু থাকলেও জনবল সংকটের কারণে চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি হচ্ছে না। এ ছাড়া ডায়াবেটিস,  প্রেসার ও অ্যাজমাসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন রোগের ওষুধের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এর ফলে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। 
জানা যায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে ৩১জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে মাত্র ১৫ জন রয়েছেন। এর মধ্যে তিনজন চিকিৎসক অন্যান্য হাসপাতালে সংযুক্ত থেকে বেতন-ভাতাদি নিচ্ছেন। একজন চিকিৎসক আড়াই বছর ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। এছাড়াও তিনজন নার্সের পদও খালি রয়েছে। সরজমিন দেখা গেছে, টিকেট কাউন্টার থেকে প্রতিটি দপ্তরেই রোগীদের উপচেপড়া ভিড়। বহির্বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসকদের সামনে দীর্ঘ সারি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে কাঙ্ক্ষিত সেবা নিচ্ছেন অনেকে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেও লাইনে দাঁড়িয়ে সেবা নিচ্ছেন রোগীরা। ওষুধ কাউন্টারে দীর্ঘ লাইন ধরে প্রয়োজনীয় ওষুধ না পেয়ে ফেরত যাচ্ছেন অনেকে। দায়িত্বরতরা বলছেন, অনেকদিন ধরেই ওষুধের সংকট রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ অনেক ওষুধের সরবরাহ নেই। বিশেষ করে ডায়াবেটিস, প্রেসার, অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যাজমা- এ ধরনের ওষুধের সংকট রয়েছে। যা বরাদ্দ আছে তা থেকে অল্প অল্প করে রোগীদের সন্তুষ্ট করা হচ্ছে। 
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বহির্বিভাগে গড়ে প্রতিদিন ৮-৯শ’ রোগী সেবা নিতে আসেন। গত এক মাসে ২৪ হাজার রোগী বহির্বিভাগে টিকেট কেটে সেবা নিয়েছেন। যা ঢাকা বিভাগে অবস্থিত হাসপাতালগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ সেবা নিতে আসা রোগীর তালিকায় অষ্টম। অথচ হাসপাতালটি মাত্র ৫০ শয্যা বিশিষ্ট। এছাড়া হাসপাতালটিতে রয়েছে ওষুধের সংকট। ডায়াবেটিস, প্রেসার, অ্যাজমাসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন রোগের ওষুধের সরবরাহ মাসের পর মাস বন্ধ থাকে। এক মাস ওষুধ ঠিকমতো দিতে পারলেও পরবর্তী কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হয়। প্রতিনিয়তই তুলনামূলকভাবে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ডাক্তারগণ  প্রেসক্রিপশনে এক সপ্তাহের ওষুধ লিখে দিলেও ওষুধ কাউন্টার থেকে তিনদিনের বেশি ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না। মাত্র দু’টি ভবনে হাসপাতালটির কার্যক্রম চলছে। একটি জরুরি বিভাগ অন্যটি ভর্তিকৃত রোগীদের জন্য। পুরাতন মূল ভবনটি সংস্কার ও মেরামতের অভাবে বেহাল দশা দেখা দিয়েছে। কেবিনসহ ওয়ার্ডগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক। টয়লেটগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী। ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, গত তিন বছর যাবত কোনো মেরামত হয়নি বিধায় এ অবস্থা। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়লকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানানো হয়েছে। এখানকার মানুষের চাহিদা অনুযায়ী হাসপাতালটিকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। 
চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রেহানা আক্তার নামের একজন জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে প্রেসার ও ডায়াবেটিস এ ভুগছেন। নিয়মিত এসব রোগের ওষুধ খেয়ে যেতে হয়। আর্থিক সংকটে হাসপাতাল থেকে ফ্রি ওষুধ নেন। কিন্তু প্রায় সময়ই এসে ওষুধ না পাওয়ার অভিযোগ করেন। তোরাব আলী বলেন, প্রায় সময় এসেই শুনি ডায়াবেটিসের ওধুধের সরবরাহ নেই। ফলে বাধ্য হয়ে বাইরের ফার্মেসি থেকে এসব ওষুধ কিনে খেতে হচ্ছে। টাকার অভাবে অনেক সময় কিনতে পারি না। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নূর-এ-আলম খান বলেন, জনবল সংকটের মধ্যে যারা রয়েছেন তাদেরকে নিয়েই রোগীদের প্রয়োজনীয় সেবা দানে কাজ করে যাচ্ছি। জনবলের অভাব পূরণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। আশা করছি খুব দ্রুতই সংকটের সমাধান হবে। এছাড়াও ডাক্তারদের অন্যত্র সংযুক্তি বাতিলের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের বরাবরে সুপারিশ করা হয়েছে।

 

 

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

দেনমোহর কমাতে অভিনব কৌশল/ তালাকের পর আবার বিয়ে, কিছুই জানে না গৃহবধূ

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status