প্রথম পাতা
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের সংস্কার
চার ঠিকাদার লাপাত্তা
সামন হোসেন
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, শুক্রবার২০১৭ সালে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজের জন্য ৮০ কোটি টাকার বাজেট ডিপিপি (ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল) তৈরি করেছিল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)। তখন কাজ শেষের সময়সীমা ছিল ২০১৯ সালের ডিসেম্বর। ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ স্টেডিয়াম সংস্কার পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনলে বাজেট বেড়ে দাঁড়ায় ৯৮ কোটি টাকা এবং কাজ শেষের মেয়াদ ছিল ২০২২ সালের জুন। পরে কাজ শেষ করার সময় আরও ৬ মাস বাড়িয়ে করা হয় ওই বছর ৩১শে ডিসেম্বর। শুরুর পর কাজ আবার থেমে গেলে বাজেট ও প্রকল্পের সময় আরও বাড়ে। ৬০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা বাজেট বেড়ে ১৫৮ কোটি ৪৫ লাখ টাকা হওয়ার পর প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় বৃদ্ধি পেয়ে চলে যায় এ বছরের ৩১শে ডিসেম্বর। তবে এই সময়েও শেষ হচ্ছে না বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজ। ৬টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সংস্কার হচ্ছে স্টেডিয়াম। এরমধ্যে গ্যালারিতে চেয়ার বসানোর কাজ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ডেলকো বিজনেস এসোসিয়েট, সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি লিয়াকত শিকদারের প্রতিষ্ঠান কম্পিউটার ওয়ার্ল্ড বিডি, মিডিয়া সেন্টার ও ইলেক্ট্রনিক্সের কাজ পায় গোপালগঞ্জের দুই প্রতিষ্ঠান মনির কনস্ট্রাকশন ও শরিফ এসোসিয়েটস। বাজেটের আশি শতাংশের বেশি টাকা উত্তোলন করে নেয়া এই চার প্রতিষ্ঠানের খোঁজ নেই। তবে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের দাবি সকল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা নিখোঁজ থাকলেও কাজ চলছে।
বর্ধিত বাজেটের মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রকল্পের অনুকূলে ৬০ কোটি ৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বরাদ্দ পাওয়ার পর বাকি কাজের দরপত্র শেষে দুই মাস হাতে রেখে ওয়ার্ক অর্ডার দিয়েছিল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। তখন লক্ষ্য ছিল অক্টোবরের মধ্যে কাজ শেষ করার। তবে জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতন, অন্তর্বর্তী সরকার গঠন এবং দেশে পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বেশ কিছুদিন কাজ বন্ধ থাকার পর আবার শুরু হয়েছে। তবে কাজে গতি নেই। গ্যালারির শেড স্থাপনের জন্য প্রথম দরপত্র ছিল ২৯ কোটি টাকার কিছু বেশি। দ্বিতীয় দরপত্রে যোগ হয়েছে আরও ১০ কোটি টাকা। স্টেডিয়ামের পুরো গ্যালারিতে শেড স্থাপনের জন্য ব্যয় হবে ৪০ কোটি টাকার মতো। এই কাজটি করছে বিনিময় কনস্ট্রাকশন। তাদের লোকজন কাজ করলেও গতি খুব মন্থর। তারা যে পর্যায়ে কাজ করছে তাতে স্টেডিয়ামের শেডের কাজ শেষ করতে ডিসেম্বর পেরিয়ে যাবে। আর এই শেডের কাজ শেষ না হলে স্টেডিয়ামে জায়ান্ট স্ক্রিন, ডিজিটাল বিজ্ঞাপন বোর্ড, ইলেক্ট্রনিক্স স্কোর বোর্ড বসানো সম্ভব নয়। যদিও এই কাজ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কম্পিউটার ওয়ার্ল্ডের মালিক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা লিয়াকত শিকদার ও তার স্ত্রী মাহমুদা আলী শিকদারের খোঁজ নেই। মামলার কারণে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টও জব্দ করা হয়েছে। অফিসও খুলছে না। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের উন্নয়ন ও পরিকল্পনা বিভাগসূত্রে জানা গেছে, বর্ধিত বাজেটের বরাদ্দ পাওয়া ৬০ কোটি ৮ লাখ টাকার মধ্যে সবচেয়ে বড় কাজ ফ্লাডলাইট। আধুনিক ফ্লাডলাইট স্থাপনের বাজেট ৩৮ কোটি টাকা। এই কাজটি পেয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের দুই পরিচালক মাহাবুবুল আনাম ও আকরামের খানের প্রতিষ্ঠান এ্যারোনেস ইন্টারন্যাশনাল। দেশের সরকার পরিবর্তনের পর তারা দেশে থাকলেও এখনো ফ্লাডলাইটের কাজ শুরু করেনি তাদের প্রতিষ্ঠান। বর্ধিত বাজেটের মধ্যে প্রায় ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে গ্যালারিতে চেয়ার বসানোর কাজটি বাগিয়ে নিয়েছিলেন সাবেক খনিজ ও জ্বালানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু ও তার ভাই ইনতেখাবুল হামিদ অপুর হামিদ গ্রুপের ডেলকো বিজনেস এসোসিয়েট। হাসিনা সরকারের পতনের পরই দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন দুই ভাই। যে কারণে চেয়ার আনা হলেও কবে তা স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে বসানো হবে তা বলতে পারছে না কেউ। একই অবস্থা মিডিয়া সেন্টার ও স্টেডিয়ামের ইলেক্ট্রনিক্স কাজের। এই কাজ দু’টি পেয়েছে গোপালগঞ্জের দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মনির কনস্ট্রাকশন ও শরিফ এসোসিয়েটস। সরকারের পটপরিবর্তনের পর তারা গা ঢাকা দিয়েছেন। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদও তাদের নাগাল পাচ্ছে না। এই অবস্থায় ডিসেম্বরের মধ্যে স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজ শেষ করা নিয়ে সংশয়ে আছে। এসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের হদিস না পেলে নতুন করে দরপত্র আহ্বান করলে আরও খরচ বাড়বে সংস্কারের। তবে অজুহাত দেখিয়ে প্রকল্পের সময় যাতে না বাড়ে সে বিষয়ে কঠোর নজরদারি আছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প সমূহের কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে ক্রীড়া উপদেষ্টা কয়েকদিন আগে সভা করেছেন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে। সেখানেই তিনি বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজ আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে এ বছরের মধ্যে অর্থাৎ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন। ওই সভায় প্রকল্প পরিচালক চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিটি কাজ আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে মিল রেখে শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ক্রীড়া উপদেষ্টাকে।