খেলা
বোনাসের একাংশ বন্যার্তদের দিলেন ক্রিকেটাররা
স্পোর্টস রিপোর্টার
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, রবিবারটেস্ট সিরিজ জিতলে ক্রিকেটারদের বোনাস দেয়ার ঘটনা নতুন কিছু নয়। তবে পাকিস্তানের মাটিতে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জেতায় এবার আনুষ্ঠানিকভাবে ক্রিকেটারদের বোনাস দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। গতকাল রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ক্রিকেটারদের ৩ কোটি ২০ লাখ টাকার বোনাস তুলে দেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। একই অনুষ্ঠানে বোনাসের একটি অংশ চলতি মাসে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের দেওয়ার ঘোষণা দেন জাতীয় দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত।
টেস্ট ক্রিকেটে গত ২৪ বছরে বাংলাদেশের সাফল্যের সংখ্যা খুব বেশি নয়। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে সিরিজ জয় আর ২০২২ সালে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট জয়। এর মধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় সারির দলের বিপক্ষে সিরিজ জেতা অনেকে বড় সাফল্য হিসেবে দেখতে চান না। তবে এবার পাকিস্তানের মাটিতে পূর্ণ শক্তির দলকেই ২-০ ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। আর তাই এবার ঘটা করেই ক্রিকেটারদের বোনাস দিয়েছে বিসিবি।
বিকাল সাড়ে ৪টায় শুরু হয় অনুষ্ঠান। এ সময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ক্রীড়া উপদেষ্টাকে উপস্থিত হওয়ায় ধন্যবাদ জানান অধিনায়ক শান্ত। এরপর পাকিস্তান সিরিজের স্কোয়াডে থাকা সব ক্রিকেটারের স্বাক্ষরিত একটি ব্যাট উপহার হিসেবে দেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদকে। এরপর তিনি জানান, বোনাসের টাকার একটা অংশ ক্রিকেটাররা দেবেন বন্যার্তদের সেবায়। শান্ত বলেন, ‘দলের পক্ষ থেকে আমরা সবাই সম্মতি দিয়েছি একটা অংশ তাদের সাহায্য করার জন্য আমরা দেওয়ার চেষ্টা করবো। আমি আশা করবো দেশের আরও অনেক মানুষ আছে, তাদের যে সক্ষমতা আছে ওই অনুযায়ী পাশে থাকার।’ শান্ত বলেন, ‘ধন্যবাদ জানাতে চাই আমাদের বোর্ড সভাপতি ফারুক ভাইকে। আমাদের যে বোনাসের কমিটমেন্টটা উনি করেছেন, যেটা একটু আগে উনি ম্যানশন করলেন এটা আমাদের চুক্তির একটা অংশ। এত বড় একটা সিরিজে যাওয়ার আগে এ ধরনের অনুষ্ঠান অবশ্যই প্রত্যেকটা খেলোয়াড়কে আমার মনে হয় অনুপ্রাণিত করবে।’
আর অনুষ্ঠান শেষে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ বলেন, ‘আমাদের প্লেয়ারদের কন্ট্রাক্টে উইনিং বোনাসের কথা বলা আছে। ওইটা আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সিরিজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। সব সময় এই পর্যায় থেকে মিট করা যায় তাহলে প্লেয়াররা উৎসাহ বোধ করে। বোনাস প্রবাবলি এটারই একটা পার্ট। সব মিলিয়ে এটাই আমাদের উদ্দেশ্য ছিল যেন প্লেয়াররা উজ্জীবিত হয়ে নেক্সট সিরিজটা খেলতে পারে। দুইটা টেস্ট ম্যাচ জিতেছে, তার সঙ্গে সিরিজ জিতেছে। সবগুলো আলাদা আলাদা আছে।’
পাকিস্তান থেকে দেশে ফেরার পর ক্রিকেটারদের নিজ বাসভবন যমুনায় সংবর্ধনা দেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তবে ক্রীড়া উপদেষ্টা নিজে থেকে আলাদা করে ক্রিকেটারদের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে ফারুক আহমেদ বলেন, ‘আপনারা সবাই জানেন, আজকে ক্রিকেট বোর্ডেরই একটা অনুষ্ঠান ছিল। আমরা ক্রীড়া উপদেষ্টা মহোদয়কে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। উনি যদিও পাকিস্তান সফরের ফলাফলের পর দেখা করেছেন। যেখানে প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় ছিলেন। আজকে তিনি বিশেষভাবে আলাদা করে দেখা করতে চেয়েছেন। আপনারা জানেন, কালকে দল ভারত সফরে চলে যাচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ সফর। এ জন্য মূলত আজ এ আয়োজন।’
স্বাভাবিকভাবেই টেস্ট জয়ে বোনাসের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। পাশাপাশি সিরিজ জিতলে যোগ হয় বাড়তি অঙ্ক। এবার পাকিস্তানের মাটিতে সাফল্যের পর বিসিবির সর্বশেষ বোর্ড সভায় বোনাসের অঙ্ক বাড়ানো হয়। ক্রিকেটারদের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, বর্তমানে র্যাঙ্কিংয়ের ১ থেকে ৬ নম্বর দলের বিপক্ষে টেস্ট জয়ের জন্য স্কোয়াডের প্রত্যেক ক্রিকেটার বোনাস পান ৪ লাখ টাকা। আর সিরিজ জয়ের জন্য বোনাস আরও ৬ লাখ টাকা করে। সেক্ষেত্রে পাকিস্তানের বিপক্ষে দুটি টেস্ট জেতায় শুধু টেস্ট ম্যাচ জয়ের জন্যই প্রত্যেক ক্রিকেটারের বোনাস পাওয়ার কথা ৮ লাখ টাকা। সঙ্গে সিরিজ জয়ের বোনাস যোগ হয়ে খেলোয়াড় প্রতি বোনাস হওয়ার কথা ১২ লাখ টাকা করে। তবে এই সিরিজের জন্য ম্যাচ জয়ের বোনাসের পরিমাণ দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্ত নেয় বিসিবি। আর সেক্ষেত্রে শুধু টেস্ট জয়ের বোনাসই এখন ৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ পাকিস্তান সিরিজের স্কোয়াডের একেকজন ক্রিকেটারের উইনিং বোনাস পেয়েছেন ১৬ লাখ টাকা করে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে সভাপতির বিশেষ ৮০ লাখ টাকার বোনাস। ফলে দলের প্রত্যেক ক্রিকেটারদের অ্যাকাউন্টে বোনাস হিসেবে যোগ হয়েছে ২০ লাখ টাকা। শুধু ক্রিকেটাররা নন, কোচিং স্টাফ ও সাপোর্ট স্টাফদেরও বোনাস দেওয়া হয়েছে। কোচরা যার যার চুক্তি অনুযায়ী এবং ম্যানেজরারসহ বাকিরা বিসিবির তরফ থেকে বিশেষ বোনাস পেয়েছেন।