বাংলারজমিন
ইউনূস স্যার না থাকলে হয়তো আর দেশে আসা হতো না
স্টাফ রিপোর্টার, কুমিল্লা থেকে
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, শনিবারদিন যতই গড়াচ্ছিল, স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের চিন্তায় ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছিল। বিদেশের কারাগার জীবনের বিভীষিকাময় দিনগুলোর স্মৃতি এখনো তাড়া করছে আমায়। ভেবেছিলাম, জীবনে আর দেশে ফিরতে পারবো না, পরিবারের সঙ্গে কখনো দেখা হবে না। মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে ইউনূস স্যারের (ড. মুহাম্মদ ইউনুস) প্রচেষ্টায় আমরা জেল মুক্ত হয়ে বর্তমানে দেশে আছি। তিনি না থাকলে হয়তো কোনোদিন দেশে আসা হতো না, স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞতা।
সাংবাদিকদের কথাগুলো বলছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে দেশে আসা ১৪ বাংলাদেশির একজন ফরিদ আহমদ শাহিন। তিনি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার চৌদ্দগ্রাম পৌর সদরের লক্ষ্মীপুর গ্রামের আলী আহমেদের ছেলে। গত ৭ই সেপ্টেম্বর প্রথম ধাপে মুক্তিপ্রাপ্ত ৫৭ প্রবাসী দেশে ফেরত আসেন। তাদের মধ্যে ফরিদ আহমেদ শাহীন একজন।
গত জুলাই মাসে সরকারি চাকরির কোটা সংস্কারের দাবিতে বাংলাদেশ যখন বিক্ষোভে উত্তাল, সে সময় তাতে সংহতি জানিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাস্তায় বিক্ষোভে নেমেছিলেন বাংলাদেশিরা। ২০শে জুলাই সন্ধ্যায় দুবাই, শারজাহ ও আজমানের বিভিন্ন এলাকার সড়কে বিক্ষোভের সময় ৫৭ বাংলাদেশিকে আটক করে আমিরাতের পুলিশ। দু-দিন পর দাঙ্গা, যোগাযোগে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি এবং সম্পদহানির মতো অভিযোগে তাদের তিনজনকে যাবজ্জীবন, একজনকে ১১ বছর এবং বাকি ৫৩ জনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেয় স্থানীয় আদালত। এরপর বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা সুবিধা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করার ঘোষণা দেয় আমিরাত সরকার।
ফরিদ আহমদ শাহিন বলেন, আমরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ওই মিছিলে অংশ নিয়েছিলাম। আমরা চেয়েছিলাম স্বৈরাচার হাসিনা আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের বুকে আর একটাও যেন গুলি না চালায়। আমরা জানতাম প্রতিবাদ করলে রাজতন্ত্র আইনে আমাদের শাস্তি পেতে হবে। সেই শাস্তিকে উপেক্ষা করেই আমরা আন্দোলনে নেমেছিলাম।
পরদিন ওই দেশের পুলিশ আন্দোলনরত বাঙালিদের গ্রেপ্তার করে দ্রুত সময়ের মধ্যে যাবজ্জীবনসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করে। আমরা খুব হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার পর কোনো উপায় দেখছিলাম না। সারাক্ষণ পরিবারের দুশ্চিন্তায় সময় কেটেছে। অবিরত চোখের পানি ঝরিয়েছি। আল্লাহর কাছে একটাই চাওয়া ছিল, আল্লাহ আমাদের এই অন্ধকার কুঠুরি থেকে মুক্ত করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিক।
তিনি বলেন, ৪৫টা দিন আমার কাছে কয়েকশ বছরের মতো লেগেছিল। সময় যেন ফুরাচ্ছিল না। জেলে বন্দি থাকা অবস্থায় হঠাৎ একদিন শুনলাম আমাদের মুক্তির বিষয়ে বাংলাদেশের সরকার আমিরাতের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। বিশ্বাস করুন, সঙ্গে সঙ্গে সিজদায় পড়ে গেছি। তার কয়েকদিন পর শুনলাম আমিরাতের রাষ্ট্রপতি আমাদের সাধারণ ক্ষমা করে মুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। জীবনের সবচেয়ে আনন্দের খবর আমার কাছে সেটিই ছিল। তাই ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে শেষ করা যাবে না।
তিনি আরও বলেন, ৫৭ জনকে সাজার খবর প্রকাশিত হলেও সাজাপ্রাপ্তদের প্রকৃত সংখ্যাটা ১১৪। আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করবো ৫৭ জনের বাইরেও আরও ৫৭ জনকে সাজার খবর প্রকাশ হয়নি। বিক্ষোভ করতে গিয়ে
যেসব বাঙালি প্রবাসের জেলে বন্দি আছেন সবাইকে যেন মুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়।