অনলাইন
জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা
কারখানা খোলা রাখুন, শ্রমিকদের সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে
স্টাফ রিপোর্টার
(১ মাস আগে) ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বুধবার, ৭:৫৯ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৩:৩৫ অপরাহ্ন
শ্রমিক ও মালিক উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে শ্রমিকদের সমস্যার স্থায়ী সমাধান করা হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, মালিক-শ্রমিক উভয় পক্ষের সঙ্গে আলাপ করে এসব সমস্যার সমাধান আমরা অবশ্যই বের করব। আপনারা কারখানা খোলা রাখুন। অর্থনীতির চাকা সচল রাখুন। দেশের অর্থনীতিকে সোজা হয়ে দাঁড়াতে দিন। আমরা আপনাদের সমস্যার স্থায়ী সমাধান বের করার জন্য সর্বশক্তি প্রয়োগ করব।
বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের সরকারের প্রথম মাস কাটল। দ্বিতীয় মাস থেকে আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়ার ভিত্তি হিসেবে নতুন শ্রমিক-মালিক সম্পর্কের সূচনা করতে চাই। এটা দেশের সবার কাম্য। দেশের নতুন প্রজন্ম নির্ভয়ে যেন তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে এগিয়ে যেতে পারে আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করছি।
তৈরি পোশাক ও ওষুধ শিল্প এলাকায় শ্রমিকদের কাজ বন্ধ রাখার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এটা আমাদের অর্থনীতিতে যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে সেটা মোটেই কাম্য নয়। এমনিতেই ছাত্র-শ্রমিক জনতার বিপ্লবের পর যে অর্থনীতি আমরা পেয়েছি সেটা নিয়ম নীতিবিহীন দ্রুত ক্ষীয়মাণ একটা অর্থনীতি। প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো প্রায় ধ্বংস প্রাপ্ত। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানীতে গিয়ে ঠেকেছে। আমরা এই অর্থনীতিতে প্রাণ সঞ্চারের চেষ্টা করছি। আমাদের উদ্যোগে সাড়াও পাচ্ছি।
তিনি বলেন, ঠিক এই সময়ে আমাদের শিল্প কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে গেলে, অকার্যকর হয়ে গেলে দেশের অর্থনীতিতে বিরাট আঘাত পড়বে। সেটা কিছুতেই কারও কাম্য হতে পারে না।
মালিক পক্ষের প্রতিও আহ্বান জানিয়ে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, মালিক পক্ষের কাছে আমাদের আবেদন, আপনারা শ্রমিকদের সঙ্গে বোঝাপড়া করুন। কারখানা সচল রাখুন। অর্থনীতির দুর্বল স্বাস্থ্যকে সবল করে তুলুন। বক্তব্যের শুরুতে প্রধান উপদেষ্টা স্মরণ করেন জুলাই-আগস্ট মাসে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থানে নিহত শহিদের।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমি আগেও জানিয়েছি, আবারো জানাচ্ছি, গণ-অভ্যুথানে শহিদের পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে। আহত শিক্ষার্থী, শ্রমিক, জনতার চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয় সরকার বহন করবে। এই গণ-অভ্যুত্থানের শহিদদের স্মৃতি ধরে রাখতে সরকার তার যাত্রা লগ্নে “জুলাই গণহত্যা স্মৃতি ফাউন্ডেশন” নামে একটি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়। এখন সে ফাউন্ডেশন তৈরি হয়েছে। সকল শহিদ পরিবার এবং আহতদের সর্বোত্তম চিকিৎসা সহ তাদের পরিবারের সম্পূর্ণ দায়িত্ব এই ফাউন্ডেশন গ্রহণ করছে।
ফেনীসহ কয়েকটি জেলায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা নিয়ে তিনি বলেন, গত মাসে কুমিল্লা-নোয়াখালী সিলেট অঞ্চলে আকস্মিক বন্যা এসব এলাকার মানুষকে হতভম্ব করে দিয়েছে। এখানে বেশিরভাগ এলাকায় কোনো দিন বন্যা হয়নি। তারা বন্যা মোকাবিলা করায় অভ্যস্ত নন। দেশপ্রেমিক সশস্ত্রবাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে বন্যা আক্রান্ত সবাইকে রক্ষার জন্য এগিয়ে আসে। ফলে মানুষের দুর্ভোগ কম হয়েছে। এর পরপরই এনজিও এবং সাধারণ মানুষ দেশের সকল অঞ্চল থেকে দলে দলে এগিয়ে এসেছে। আমি বিশেষ করে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে আবারো ধন্যবাদ জানাচ্ছি। দেশের সকল দুর্যোগকালে তারা সবসময় আন্তরিকভাবে এগিয়ে এসেছে। বিশেষ করে বন্যা ও শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে তাদের সৈনিক এবং অফিসাররা দিনের পরদিন যেভাবে দায়িত্ব পালন করেছে তার কোনো তুলনা হয় না। জনজীবনে স্বস্তি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় তাদের ভূমিকা অনন্য।
বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সকল সদস্যকে আমি ধন্যবাদ জানাই তাদের সততা, ত্যাগ ও অসীম দেশপ্রেমের জন্য। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে বন্যা, খরা, ঝড়, বৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড় সহ সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগে আপনারা সকলের শেষ ভরসার স্থান। দেশের প্রতিটি ক্রান্তিলগ্নে আপনারা দেশের মানুষের পাশে থেকেছেন। দেশের স্বাধীনতার পক্ষে, সার্বভৌমত্বের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। দেশ গঠনেও আপনারা সবার আগে এগিয়ে এসেছেন। বিগত জুলাই হতে শুরু হওয়া গণ অভ্যুত্থান, বন্যা, নিরাপত্তা প্রদান, অস্ত্র উদ্ধার সহ সকল কার্যক্রমে আপনারা সফল ভাবে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে আসি আপনাদের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
বন্যা আমাদের জনজীবনে আরেকটি দিক উন্মোচন করলো। দেশের সকল জায়গায় মানুষের সক্রিয় সহানুভূতির জোয়ার উঠেছিল অবিশ্বাস্য মাত্রায়। ব্যবসায়ী, অর্থবান ব্যক্তিরা যেমন তাদের অর্থ নিয়ে স্বঃতস্ফুর্তভাবে এগিয়ে এসেছিল, তেমনি দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সাধারণ মানুষ, স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা জোয়ারের ঢলের মতো যার যার সামর্থ্য নিয়ে এগিয়ে এসেছে। অনেকেই ছুটে গেছে বন্যার্তদের সহযোগিতা করার জন্য। এনজিওরা বিভিন্ন জায়গা থেকে ছুটে গেছে তাদের সহায়তা নিয়ে। বন্যা এখন চলে গেছে। কিন্তু পুনর্বাসনের কঠিন কাজ আমাদের সামনে রয়ে গেছে। সকলের সহযেগিতায় আমরা পুনর্বাসনের কাজটি সফলভাবে সমাধান করতে চাই।
তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির জন্য আমরা দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছি। যেসমস্ত ভাই-বোনেরা তাদের গত ১৬ বছরের বেদনা জানিয়ে তার প্রতিকার পাওয়ার কর্মসূচি দিচ্ছেন আমি কথা দিচ্ছি আপনাদের ন্যায্য আবেদনের কথা ভুলে যাবো না। আমরা সকল অন্যায়ের প্রতিকারের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা আমাদের দায়িত্বকালে যথাসম্ভব সব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবো। আমি আবারও অনুরোধ করছি আপনার যাতায়াতে ব্যাঘাত সৃষ্টি থেকে বিরত থাকুন। জাতি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের দায়িত্ব অনেক। ন্যায়ভিত্তিক একটি সমাজ গড়ে তোলার জন্য একসাথে অনেকগুলো কাজে আমাদের হাত দিতে হবে। পহেলা জুলাই থেকে ৫ই আগস্ট পর্যন্ত ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনকে দমন করতে যেসব ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছিল এরমধ্যে হত্যা মামলা ছাড়া বাকী প্রায় সকল মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এসব মামলায় গ্রেফতারকৃত সকলে মুক্তি পেয়েছেন।
আজ সকাল বেলায় ছাত্রজনতার বিপ্লবের জানবাজি রাখা এক যুবকের প্রশ্ন ছিল অধ্যাপক ডঃ ইউনূস স্যার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দশ্যে কি আর বলবেন। স্যারের ভাষণটি শেষ হওয়া মাত্র তার অনুভূতি ছিল ,''আহা ! শেষ হয়ে গেল! অনেকক্ষন ধরে ভাষণটি চললে ভাল হতো।''তিনি যা করবেন তার সবিস্তার ফিরিস্তি দিলেন। সব চেয়ে বড় কথা যুগপৎভাবে স্বস্ব অবস্থান থেকে সকলেই সংস্কার কাজে অংশ নিয়ে রাষ্ট্রিয় সংস্কার কাজে সহযোগিতা চাইলেন। জনগণও বৈসম্যহীন একটা ন্যায় ভিক্তিক রাষ্ট্রের পূর্নজাগরণের অপেক্ষা রইলো। তিনি দীর্ঘজীবি হোন!