শরীর ও মন
কানের পাশে তীব্র ব্যথা (ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়া)
ডা. মো. রকিবুল ইসলাম (রকিব)
১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বুধবাররোগটি কি?
শরীরে ট্রাইজেমিনাল নার্ভ নামের একটি স্নায়ু আছে যা মুখ থেকে মস্তিষ্কে অনুভূতি সরবরাহ করে। যদি এই নার্ভে কোনো সমস্যা হয় বা চাপ লাগে তাহলে হঠাৎ করে মুখের একদিকে কানের পাশে বৈদ্যুতিক শকের মতো তীব্র ব্যথা হয়, যা চোয়াল ও মাড়িতে অনুভূত হয় আবার চলেও যায়। এটিই হলো ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়া। ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়ার ব্যথা নিয়ে থাকা খুব কঠিন হতে পারে। এ ছাড়া এটি একজন ব্যক্তির জীবনমানের ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে, যার ফলে ওজন হ্রাস, একাকী থাকা, এমন কী বিষন্নতার মতো সমস্যা দেখা দেয়। সাধারণত পুরুষদের তুলনায় নারীরা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়।
কারণ: মস্তিষ্কের নিচের অংশে শিরা বা ধমনীর সঙ্গে লেগে ট্রাইজেমিনাল নার্ভের অস্বাভাবিক চাপ প্রয়োগ হলে এই ব্যথা হয়। এ ছাড়া বার্ধক্য, মাল্টিপল স্কেলেরোসিস, মস্তিষ্কে টিউমার বা নার্ভের পাশে থাকা টিউমারের চাপ প্রয়োগ ও অন্য কোনো সমস্যার কারণেও এই ব্যথা হতে পারে। লক্ষণ বৈদ্যুতিক শকের মতো তীব্র ব্যথা। দিনে, সপ্তাহে ও মাস জুড়ে এ ব্যথা হতে পারে। ব্যথা কোনো কারণ ছাড়াই উঠতে পারে।
তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে শেভ করার সময়, মুখে হাত বুলালে, দাঁত ব্রাশ করার সময়, খাবার খাওয়া, মেকআপ নেয়ার সময় ব্যথা বেড়ে যেতে পারে।
ব্যথা কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী হয়, সাধারণত দুই মিনিটের কম। কোনো সময় প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হয়। এই ব্যথা বার বার হতে পারে। ব্যথা কয়েকদিন থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত থাকতে পারে। ট্রাইজেমিনাল নার্ভ যেসব জায়গায় অনুভূতি/ব্যথা সরবরাহ করে যেমন- গাল, চিবুক, মাড়ি, দাঁত, ঠোঁট এবং মাঝেমধ্যে চোখ ও কপালে। ব্যথা মুখের যেকোনো একদিকে হয় (যেদিকের নার্ভ আক্রান্ত হয় সেদিকে)। দিনে দিনে ব্যথার তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। রোগ নির্ণয় সাধারণত ব্রেইনের এমআরআই করে রোগ নির্ণয় করা হয়ে থাকে। তবে ব্যথার ধরন, কোথায় ব্যথা হয় এসব বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় আরও কিছু পরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় করা হয়।
চিকিৎসা ও ওষুধ: সাধারণত ব্যথানাশক ওষুুধের পাশাপাশি অ্যান্টিকনভালস্যান্ট ড্রাগ সেবনে ব্যথা কিছুদিন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
অপারেশন: মাইক্রোভাসকুলার ডিকমপ্রেশান নামক অত্যাধুনিক অপারেশনের মাধ্যমে নার্ভকে রক্ত নালির চাপমুক্ত রাখা হয় এবং সম্পূর্ণ ব্যথা কমে যায়। টিউমারের কারণে হলে টিউমারের সফল অপারেশনের পর ব্যথা কমে যায়।
লেখক: ব্রেইন, স্পাইন ও স্ট্রোক সার্জন, সহকারী অধ্যাপক, নিউরো সার্জারি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।