ঢাকা, ৭ জুন ২০২৫, শনিবার, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৯ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

অনলাইন

বাংলাদেশের পর্যটক না আসায় ধুঁকছে কলকাতার যেসব অঞ্চল

(৮ মাস আগে) ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, রবিবার, ৯:২৫ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৫:০৩ অপরাহ্ন

mzamin

মাস দুয়েক আগেও কলকাতার নিউ মার্কেট, মার্কুইজ স্ট্রিট গিজ গিজ করত বাংলাদেশের মানুষে। তবে জুলাই মাস থেকে সেদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন, ব্যাপক সহিংসতা, কারফিউ, শেষে শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে পলায়ন – সব মিলিয়ে কলকাতায় এখন বাংলাদেশি পর্যটক প্রায় নেই বললেই চলে।

এর একটা বড় কারণ ভারতীয় হাইকমিশন বাংলাদেশে ভিসা দেওয়ার ব্যবস্থা সম্পূর্ণ চালু করে নি। তাই আগে থেকে যারা ভিসা নিয়েছিলেন এবং জরুরি চিকিৎসা করাতে হলেই ভারতে আসার অনুমতি পাচ্ছেন বাংলাদেশিরা।

কলকাতার নিউ মার্কেট, মার্কুইস স্ট্রিট বা মুকুন্দপুর অঞ্চলের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেই মূলত বাংলাদেশি পর্যটকরা থাকেন, কেনাকাটা করেন। ওইসব এলাকায় বাংলাদেশি পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে বছরভর।

“বাংলাদেশ থেকে প্রায় কেউই আসছেন না মাসখানেকের বেশি সময় হয়ে গেল,” বলছিলেন ঐতিহ্যবাহী নিউমার্কেটের ‘শপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অশোক গুপ্তা।

“নিউ মার্কেটের জামাকাপড়ের দোকান বলুন বা অন্যান্য সামগ্রী – এসবের একটা বড় ক্রেতা বাংলাদেশের মানুষ। ভারতীয় ভিসা ব্যবস্থা এখনও পুরোপুরি চালু হয় নি তাই তারা প্রায় কেউই আসতে পারছেন না। আমাদের বিক্রি প্রায় ৬০ শতাংশ কমে গেছে গত এক মাসে,” বলছিলেন মি. গুপ্তা।

তবে নিউ মার্কেটের ব্যবসা কমে যাওয়ার আরও একটা কারণ আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা।

মি. গুপ্তার কথায়, “ওই ঘটনা মানুষকে এতটাই নাড়া দিয়েছে যে বহু মানুষেরই কেনাকাটা করার, উৎসবে মাতার মতো মন নেই। এছাড়া রোজই মিছিল প্রতিবাদ হচ্ছে। তাই মানুষ এখন এদিকে আসা কমিয়ে দিয়েছে।“

একই অবস্থা বাংলাদেশিরা মূলত যে এলাকার হোটেলগুলোতে থাকেন, সেই মার্কুইস স্ট্রিটেও।

হোটেল-খাবারের দোকান বা অন্যান্য পরিষেবা – এই রাস্তার সব কিছুই বাংলাদেশি পর্যটক-কেন্দ্রিক।

করোনার সময়ে যেমন বাংলাদেশি পর্যটক আসা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, গত একমাসে বাংলাদেশে অশান্তির জেরে আবারও প্রায় সেই অবস্থাতেই পৌছিয়েছে।

আবার বহু মানুষ বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসা করাতে আসেন কলকাতায়।

একটি বেসরকারি হাসপাতাল গোষ্ঠী জানাচ্ছে এক মাস আগের তুলনায় এখন বাংলাদেশি রোগীর সংখ্যা এক-তৃতীয়াংশ কমে গেছে।


হোটেলের ঘর প্রায় ফাঁকা
মার্কুইস স্ট্রিট এলাকাটি বহু বাংলাদেশি মানুষের কাছে অতি পরিচিত এলাকা। কলকাতার কেন্দ্রস্থলের এই এলাকায় বহু হোটেল রেস্তোরাঁ আছে, যারা মূলত বাংলাদেশি পর্যটকদের ওপরে নির্ভর করেই ব্যবসা করে থাকে।

এছাড়াও ওই অঞ্চলে মানিএক্সচেঞ্জ, বাসের কাউন্টার সহ বাংলাদেশি পর্যটকদের প্রায় সব ধরনের পরিসেবাই পাওয়া যায়।

ওই এলাকায় গেলে মনেই হবে না যে এটা ঢাকার বাইরে অন্য কোনও শহরের রাস্তা।

তবে জুলাই মাস থেকে বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকে ভারতে বাংলাদেশিদের আসা কমে গিয়েছিল। আর অগাস্ট থেকে তা একরকম বন্ধই হয়ে গেছে।

“এখন শুধু মাত্র মেডিক্যাল ভিসা নিয়ে মানুষ আসতে পারছেন, অথবা আগে থেকে যাদের ভিসা নেওয়া ছিল, তারা আসছেন,” বলছিলেন মার্কুইস স্ট্রিটের হোটেল মালিকদের সংগঠনের নেতা মনোতোষ সরকার।

“কয়েক মাস আগেও আমাদের হোটেলগুলির ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ অকুপেন্সি রেট ছিল। এখন সেটা নেমে এসেছে মাত্র ৩০ শতাংশে,” জানাচ্ছিলেন মি. সরকার।

রুম অকুপেন্সি রেট হল হোটেল ব্যবসার একটি শব্দ, যা হোটেলের মোট ঘরের সংখ্যার কত শতাংশে মানুষ থাকছেন, তার হিসাব।

অর্থাৎ হোটেলগুলিতে ১০০টি ঘর থাকলে এখন মাত্র ৩০টি ঘরে পর্যটক থাকছেন।

মি. সরকার বলছিলেন, “মার্কুইস স্ট্রিটে তো শুধু হোটেল নয়, বাংলাদেশি পর্যটকদের আরও বহু পরিসেবা প্রদানকারী সংস্থা আছে। তাদেরও মূল ক্রেতা ওদেশের পর্যটকরাই। তারা এখন এতটাই কম সংখ্যায় আসছেন, যে সব ব্যবসায়ীরাই মার খাচ্ছে। বাস আসছে বাংলাদেশি পর্যটক নিয়ে, কিন্তু সেখানেও দেখা যাচ্ছে ওই ৩০ শতাংশ মতোই আসন ভর্তি হচ্ছে, বাকিটা ফাঁকা থাকছে।“

কতদিন এই অবস্থা চলবে, তা অনিশ্চিত। তাই অন্য কোনও অঞ্চলের ক্রেতাদের আকৃষ্ট করা যায় কী না, সে ব্যাপারে ভাবনা চিন্তা শুরু করছেন মার্কুইস স্ট্রিটের হোটেল ব্যবসায়ীরা।

 

 


নিউ মার্কেট
এসএস হগ মার্কেট, যা নিউ মার্কেট বলে পরিচিত, অথবা তার আশপাশের বিপণী বিতানগুলিতে সারা বছরই বাংলাদেশি পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে। বেড়াতে এসে হোক অথবা চিকিৎসা করানো জন্য, বেশিরভাগ বাংলাদেশি পর্যটকই কলকাতায় এলে নিউ মার্কেটে কেনা কাটা করতে গিয়ে থাকেন।

বিশেষত পোশাকের দোকানগুলিতে বাংলাদেশি ক্রেতাদেরই ভিড় দেখা যেত।

“কিন্তু এক মাস হয়ে গেল, তারা এখন আর ভারতে আসছেন না প্রায় কেউই। আমাদের দোকানগুলোর ৬০ শতাংশ বিক্রি কমে গেছে এই এক মাসে,” জানাচ্ছিলেন নিউ মার্কেটের দোকান মালিকদের সংগঠনের প্রধান অশোক গুপ্তা।

পোষাক, সাজগোজের জিনিষ অথবা জুতো সহ সব ব্যবসায়ীই ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন মি. গুপ্তা।

“মাস খানেকের মধ্যেই দুর্গাপুজো। পুজো আর ঈদের আগে আমাদের ব্যবসার বড় সিজন। পুজোর সময়ে শুধু যে হিন্দুরা কেনাকাটা করেন না নয়। এই সময়ে অনেক নতুন ডিজাইনের পোষাক বাজারে আসে, তাই মুসলমান এবং অবশ্যই বাংলাদেশিরা এই সময়ে কেনাকাটা করতে আসতেন। আবার পাইকারি বাজার থেকে পোষাক কিনে বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য সেদেশ থেকে ব্যবসায়ীরাও আসতেন।

“তবে এ বছর কেউই প্রায় আসছেন না। বাংলাদেশের পরিস্থিতি তো একটা কারণ। আবার কলকাতায় এখন বহু মানুষ আরজি করের ঘটনা নিয়ে এতটাই মন খারাপ করে আছেন যে তারাও কেনাকাটা করতে উৎসাহ পাচ্ছেন না। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তা বোঝা যাচ্ছে না। তাই আগামী পাঁচ-ছয় দিন সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ,” বলছিলেন অশোক গুপ্তা।

তার কথায়, “এই সময়ের মধ্যে বাজারের পরিস্থিতি যদি কিছুটা উন্নতি হল তা হলে ভাল। না হলে এবারের কেনাকাটার মরসুমটা পুরোই লস আমাদের।“

নিউ মার্কেটের কাছাকাছি আরও যে কয়টি বড় শপিং মল বা বড় বড় দোকান আছে, সেখানেও একই পরিস্থিতি বলে জানা যাচ্ছে।

 

 

হাসপাতালেও রোগী কমেছে
বাংলাদেশ থেকে যারা ভারতে আসেন, তাদের একটা বড় অংশ স্বাস্থ্য পরিসেবার জন্য আসেন। কলকাতা হোক বা ভেলোর, চেন্নাই,বেঙ্গালুরু অথবা দিল্লি-মুম্বাই – বহু বেসরকারি হাসপাতালে বাংলাদেশের মানুষের ভিড় লেগে থাকে।

এই সব হাসপাতালগুলিতে বাংলা কথা বলা কর্মকর্তারা যেমন থাকেন, তেমনই বাংলাদেশিদের জন্য থাকে পৃথক পরিসেবা-ডেস্কও।

কলকাতার যেসব বেসরকারি হাসপাতালে বাংলাদেশি রোগীরা বেশী সংখ্যায় আসেন, ওই হাসপাতালগুলি বলছে গত একমাসে খুব কম রোগী সেদেশ থেকে এসেছেন।

যদিও ভারতের হাইকমিশনগুলি মেডিক্যাল ভিসা দিচ্ছে, তা সত্ত্বেও আগের তুলনায় কম সংখ্যক রোগীর দেখা পাওয়া যাচ্ছে কলকাতার হাসপাতালগুলিতে।

মনিপাল হসপিটালস্ গোষ্ঠী কলকাতার বেশ কয়েকটি হাসপাতাল অধিগ্রহণ করেছে কয়েক মাস আগে। তাদের অধীন হাসপাতালগুলিতে গড়ে ২১০০ জন বাংলাদেশি রোগী আসেন প্রতি মাসে। সেই সংখ্যাটা প্রায় এক তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে।

তবে মনিপাল হসপিটালস্ গোষ্ঠীর পূর্বাঞ্চলের জন্য আঞ্চলিক চিফ অপারেটিং অফিসার অয়নাভ দেবগুপ্ত বলছেন, “এই মুহূর্তে বাংলাদেশ থেকে মনিপাল হসপিটালসে আসা রোগীর সংখ্যা সামান্য হলেও বেড়েছে। কিন্তু দু মাস আগে যত রোগী আসতেন এই সংখ্যাটা তার থেকে অনেক কম। ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাস এখনও ভিসা ব্যবস্থাপনা পুরোপুরি স্বাভাবিক করে নি, তাই যখন যেমন ভিসা পাচ্ছেন রোগীরা, তখন আসছেন এখানে।“

কলকাতার ইস্টার্ন বাইপাস সংলগ্ন এলাকার হাসপাতালগুলিতেই বাংলাদেশি রোগীদের ভিড় সবথেকে বেশি দেখা যায়।

ওখানে হাসপাতালগুলিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এক বিরাট পরিসেবা শিল্প। খাওয়ার বা থাকার হোটেল, ওষুধের দোকান – সব মিলিয়ে প্রায় লাখ খানেক মানুষের রোজগার চলে ওই হাসপাতালগুলিকে কেন্দ্র করে।

কলকাতার রোগীদের ভিড় সেখানে স্বাভাবিক থাকলেও এদের একটা বড় অংশ নির্ভর করে বাংলাদেশি রোগীদের ওপরে।

তাই বাংলাদেশ থেকে পর্যটক বা রোগী আসা যতক্ষণ না স্বাভাবিক হচ্ছে, ততদিন এই বিরাট সংখ্যক মানুষের অনিশ্চয়তা কাটছে না।

 

সূত্র- বিবিসি বাংলা

পাঠকের মতামত

নিজের দেশের স্বাস্থ্যসেবার বারটা বাজিয়েই দেশদ্রোহী আওয়ামীরা এটা করেছে। সময় এসেছে এখন আমাদের দেশের স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নের।

আশ্রাফ
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, রবিবার, ৮:২৮ অপরাহ্ন

Boycot India! Boycot India! Boycot India!

Hakim
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, রবিবার, ৮:২৪ অপরাহ্ন

বাংলাদেশকে নিজের মত পরিচালনা করার তথা দাদাগিরি ফলানোর খায়েশ আবেশে স্বপ্নে বিভোর ভারতের এর থেকে শেখার আছে অনেক কিছু। যদি তাদের সে বোধ বুদ্ধি থেকে থাকে কিছু।

মোহাম্মদ আলী রিফাই
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, রবিবার, ২:১৭ অপরাহ্ন

আলহামদুলিল্লাহ।

Rezwan
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, রবিবার, ১২:০৮ অপরাহ্ন

বয়কট ইন্ডিয়া। বয়কট ইসরাইল। দেশপ্রেমিক হ‌ই সকলে।

ইরফান
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, রবিবার, ১১:৪১ পূর্বাহ্ন

ভারতীয় হাই কমিশনকে বলছি, প্লিজ আমাদেরকে আর ভারত ভ্রমণ ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য কোন ভিসা দিবেন না। আমরা ছাত্র জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের সকল খাতের উন্নয়ন করতে চাই। আর আমরা ভারতীয়দের দেখিয়ে দিতে চাই যে আমরা ভারত না আসলেও আমাদের কিছু হবে না।

Towfiq uddin Ahmed
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, রবিবার, ১১:১৯ পূর্বাহ্ন

এটা যদি বাংলাদেশীদের দেশপ্রেম হয়, তবে তা অব্যাহত থাকুক। চিকিৎসার জন্য আমাদের হাসপাতালগুলোতে বিশ্বমানের চিকিৎসা সেবা চালু হোক। ভ্রমন পিপাসুদের অনুরোধ আপনারা ইন্ডিয়ার বিকল্প কোথাও ভ্রমন করেন। আমাদেরকে ভারত স্বাধীন দেশ মনে করতে চায় না। আসুন সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তুলি। আধিপত্যবাদের মোকাবেলা করি।

স্বাধীন বাংলাদেশী
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, রবিবার, ১০:৫৪ পূর্বাহ্ন

যেই বাংলাদেশীদের টাকা ওদের এতো দরকার হয় সেই বাংলাদেশীদের প্রতি ঘৃণা ছড়াতে তারা দ্বিধা করেনা যা অনলাইনের দুনিয়ায় ঢুকলেই প্রমাণ পাওয়া যায়। সেই বাংলাদেশীরা না গেলে খেতে না পাবার ভয়ে নাঁকি কান্না করে। এত ভণ্ডামী কেন?

Kaka
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, রবিবার, ১০:৩২ পূর্বাহ্ন

অনলাইন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

অনলাইন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status