অর্থ-বাণিজ্য
১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুবিধা বাতিল
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
(১ মাস আগে) ২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, সোমবার, ৭:৩৫ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:০৬ পূর্বাহ্ন
১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুবিধা বাতিল করেছে সরকার। সোমবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন (এসআরও) জারি করেছে। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এনবিআরের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ১৫ শতাংশ হারে আয়কর পরিশোধ করে অপ্রদর্শিত পরিসম্পদ প্রদর্শন করার বিধান অর্থ আইন ২০২৪-এর মাধ্যমে সংযোজন করা হয়েছিল। একজন নিয়মিত করদাতাকে তার আয়ের উপর সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত আয়কর প্রদান করতে হয় এবং একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে প্রদেয় করের উপর আরও সর্বোচ্চ ৩৫ শতাংশ হারে সারচার্জ প্রদান করতে হয় বিধায় মাত্র ১৫ শতাংশ হারে কর প্রদান করে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ করে দেয়া একটি ন্যায়নিষ্ঠ সমতাভিত্তিক কর ব্যবস্থার জন্য বৈষম্যমূলক।
এমতাবস্থায়, একটি ন্যায়নিষ্ঠ সমতাভিত্তিক রাজস্ব ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এনবিআর কর্তৃক ১৫ শতাংশ আয়কর পরিশোধ করে নগদ অর্থসহ অপ্রদর্শিত সমজাতীয় পরিসম্পদ প্রদর্শনের বিশেষ ব্যবস্থা সংক্রান্ত বিধান বিলুপ্ত করা হলো। এনবিআর একটি সত্যিকারের বৈষম্যমুক্ত, ন্যায়ানুগ ও প্রগতিশীল কর ব্যবস্থা গড়ে তুলতে অঙ্গীকারবদ্ধ বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ্য করা হয়।
সূত্র জানায়, এ আদেশের ফলে শেয়ার মার্কেট, নগদ, ব্যাংকে থাকা অর্থ, ফাইন্যান্সিয়াল স্কিম এন্ড ইন্সট্রুমেন্ট সহ সব ধরনের আমানতের ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা বৈধ করার সুবিধা বাতিল হলো। এসব ক্ষেত্রে কালো টাকা সাদা করতে হলে এখন প্রযোজ্য কর, যা সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ, সেটি দিতে হবে এবং ঐ প্রদেয় করের ওপর ১০ শতাংশ জরিমানা দিতে হবে। এছাড়া ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুবিধা বাতিল হলেও ফ্ল্যাট, বাড়ি ও জমির কেনার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পরিমাণ কর দিয়ে টাকা সাদা করার বিদ্যমান সুবিধা বাতিল হয়নি।
প্রসঙ্গত, জুলাই মাসে অনুমোদিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সম্প্রতি ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা বৈধ করার নিয়ম রাখে। তৎকালীন সরকারের এ সিদ্ধান্ত তখন তীব্র সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছিল। কারণ বৈধ করদাতাদেরকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত আয়করের পাশাপাশি অতিরিক্ত সারচার্জ দিতে হয়। সমালোচকেরা বলেছিলেন, ১৫ শতাংশ করের মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করার অনুমতি আর্থিক খাতের অনিয়মকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্যও তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ১০ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা বৈধকরণের সুযোগ দিয়েছিল।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট ১১ হাজার ৮৩৯ জন প্রায় ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বৈধ করেছিলেন, যা এক বছরে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এনবিআর ওইসব বিনিয়োগ থেকে ২ হাজার ৬৪ কোটি টাকা রাজস্ব পেয়েছিল।
দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে কালো টাকা সাদা করার বিতর্কিত পদ্ধতিটি বাদ দেয়ার উপায় খুঁজছিল অন্তর্বর্তী সরকার। নতুন সরকার গঠনের পর গত ২৮শে আগস্ট রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় কালো টাকা সাদা করার বিধান বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়।
এর আগে ২৭শে আগস্ট রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআর সদরদপ্তরে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বৈঠকে এনবিআর কর্মকর্তারা কালো টাকা সাদা করার সুবিধা বাতিলের সুপারিশ করেন।