প্রথম পাতা
আইন একটা, কার সাধ্য এখানে বিভেদ করে
স্টাফ রিপোর্টার
১৪ আগস্ট ২০২৪, বুধবাররাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান, বিভেদ সৃষ্টি করার কোনো সুযোগ নেই। গণতান্ত্রিক অধিকার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠাই তার সরকারের মূল লক্ষ্য।
মঙ্গলবার দুপুরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জাতীয় উপাসনালয় রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করেন প্রধান উপদেষ্টা। এ সময় তার সঙ্গে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ও ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
সবাইকে ধৈর্য ধরে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, বড় রকমের একটা বিভেদের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি, এমন বাংলাদেশ আমরা গড়তে চাচ্ছি, যেটা একটা পরিবার, এটাই হচ্ছে মূল জিনিস। এই পরিবারের মধ্যে কোনো পার্থক্য করা, বিভেদ করার প্রশ্নই আসে না। আমরা বাংলাদেশের মানুষ, বাংলাদেশি।
ন্যায়বিচার হলে সবাই বিচার পাবে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘ন্যায়বিচার হলে কে বিচার পাবে না, এটা আমাকে বলেন? এটা কি দেখার সুযোগ আছে? কে কোন ধর্মের, কোন জাতের, কোন সমপ্রদায়ের। এটা কি আইনে বলা আছে যে, এই ধর্মের, এই সমপ্রদায়গুলো এই আদালতে যাবে, ওই সমপ্রদায়গুলো অন্য আদালতে যাবে? আইন একটা, কার সাধ্য আছে এখানে বিভেদ করে?’
সবাইকে ধৈর্য ধরে সরকারকে সাহায্য করার আহ্বান জানিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আপনারা বলবেন যে “আমরা মানুষ, আমরা বাংলাদেশের মানুষ। আমার সাংবিধানিক অধিকার এই, এটা আমাকে দিতে হবে। সব সরকারের কাছে এটাই চাইবেন আর কিছুই চাইবেন না। আমরা এসেছি, আমরা এক মানুষ, এক অধিকার, এর মধ্যে কোনো পার্থক্য করা যাবে না।
এ সময় ৫৩ বছরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন ও বৈষম্যের বিচারে একটি কমিশন গঠনের দাবি জানান সমপ্রদায়ের জ্যেষ্ঠ নেতারা।
যমুনায় সংখ্যালঘু নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময়: ওদিকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বাংলাদেশের ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে গতকাল বিকালে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বৈষম্যহীন রাষ্ট্র ও সমাজ গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছেন, সংবিধানে যে অধিকার দেয়া আছে তা ধর্ম সমপ্রদায় নির্বিশেষে সব নাগরিকেরই প্রাপ্য।
আজকের প্রেক্ষিতে এমন বাংলাদেশ চাই যেখানে নাগরিকদের মধ্যে কোনো বিভেদ ও বৈষম্য থাকবে না। আমাদের সংবিধানে এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও বাস্তবিক অর্থে অতীতে কেউ-ই এর আলোকে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করে নি। বর্তমান নির্দলীয় সরকার এ ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণে বদ্ধপরিকর। প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, গণতান্ত্রিক সাংবিধানিক অধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হলেই ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্যপরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত তার বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন।
মতবিনিময় সভায় উপদেষ্টাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আদিলুর রহমান খান, এ.এফ. হাসান আরিফ, ড. আ.ফ.ম. খালিদ হোসেন, ফরিদা আখতার, মো. নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
সবই ঠিক আছে, তবে এই দাশগুপ্তদের মত ব্যক্তি এই দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পক্ষে সহায়ক নন। তিনি আজ পারলে আজকেই বাংলাদেশকে ভারতের একটি অংগরাজ্যে পরিনত করার পক্ষে অবস্থান নেবেন। বস্তুতঃ হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাই-বোনেরা এই ধরনের লোকদের খপ্পরে পড়ে নিজেদেরকে আরো দুর্বল ও আস্থাহীন করে ফেলছেন। হিন্দু ভাই-বোনদের প্রতি আহ্বান, আপনারা নিজেদেরকে হিন্দু না ভেবে বাংলাদেশী ভাবতে শিখুন। আপনারা দেখছেন তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ভাষ ভারতে কারনে অকারনে সামান্য অজুহাতে মুসলমানদেরকে কিভাবে নির্যাতন, নিপীড়ন এমনকি খুন-ধর্ষন করা হচ্ছে। মুসলিম ঐতিহাসিক ধর্মস্থান ও স্থাপনাগুলো ধ্বংস করা হচ্ছে ও হয়েছে। কিন্তু তার বিপরীতে এদেশে যা হবার কথা আপনারা ভাবতেন সেটা কি হয়েছে? আপনারা নিজেদেরকে কেন দুর্বল ভাবেন, কেন বিচ্ছিন্ন ভাবেন?
নিজেদের সংখ্যালঘু বলে নিজেরাই নিজেদের অপমান করছেন সনাতন ধর্মাবলম্বী ভাইয়েরা। এমনটা বলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করছেন আলাদাভাবে। এটা ঠিক নয়।বাংলাদেশের আইনে ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকার সবার আছে। এত সুন্দর কথা বলার কারণেই আমরা ড.ইউনুস স্যারকে এতটা সম্মান করি। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য আমাদের সবার উচিত ড.স্যারকে সহায়তা করা এবং উনার উপর বিশ্বাস রাখা।