খেলা
প্যারিস অলিম্পিকের ‘আলোচিত ১০’
স্পোর্টস ডেস্ক
১৩ আগস্ট ২০২৪, মঙ্গলবারসিমোন বাইলস ও রেবেকা আন্দ্রেদ - নীরাজ চোপড়া ও আরশাদ নাদিম
রোববার রাতে পর্দা নেমেছে প্যারিস অলিম্পিক গেমসের। এবারের অলিম্পিকসেও ক্রীড়াবিশ্ব দেখেছে স্মরণীয় কিছু মুহূর্ত। গেমসের সেরা ১০ ঘটনার দিকে ফিরে তাকিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি-
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান-বিতর্ক
এবারই প্রথম স্টেডিয়ামের বাইরে হয়েছে অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। সিন নদীকে ঘিরে ছিল এ আয়োজন। বৃষ্টি বাগড়া দিয়েছিল অ্যাথলেটদের প্যারেডে। তবে বড় বিতর্ক ছিল অনুষ্ঠানের একটি অংশ নিয়ে। ফ্রান্সের সমকামী ডিজে বারবারা বুচের পারফরম্যান্স দেখে অনেকেই মনে করেছেন, যিশুখ্রিষ্টের ‘লাস্ট সাপার’-এর প্যারোডি করেছেন। যাতে প্রতিক্রিয়া আসে চার্চ নেতাদের, রক্ষণশীল সমাজ, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকেও। যদিও শিল্পনির্দেশক টমাস জলি এমন উদ্দেশ্য অস্বীকার করেন। তবে অনলাইনে হেনস্তার স্বীকার হতে হয় তাদের, যেটি গড়ায় পুলিশি অভিযোগ পর্যন্ত।
জকোভিচের অর্জন এবং কান্না
৩৭ বছর বয়সে এসে প্রথম অলিম্পিক সোনা। ফাইনালে কার্লোস আলকারাজকে হারানোর পর রোঁলা গারোতে দেখা যায় ভিন্ন এক জকোভিচকে। মাত্র পঞ্চম টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে ‘গোল্ডেন স্লাম’ (চার গ্র্যান্ড স্লাম শিরোপা ও অলিম্পিক সোনা) জেতার পর খেলোয়াড়দের বক্সে স্ত্রী ইয়েলেনা ও দুই সন্তানকে জড়িয়ে হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন ইতিহাসের সফলতম টেনিস খেলোয়াড়। জকোভিচ বলেন, ‘নিজ দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারার চেয়ে বড় অনুপ্রেরণা হয় না।’
বাইলসের কুর্নিশ নতুন রানীকে
সিমোন বাইলসের গল্পটা অন্য রকম। জিমন্যাস্টিকের সবচেয়ে বড় তারকা ছিলেন এবার তিনিই। তবে ফ্লোর ফাইনালে ব্রাজিলের রেবেকা আন্দ্রেদ সোনা জেতার পর তাকে কুর্নিশ করেন বাইলস। যুক্তরাষ্ট্রের তারকা বলেন, ‘এটাকেই উপযুক্ত মনে হয়েছে। রেবেকা দুর্দান্ত, সে-ই রানী।’
১০০ মিটারে সূক্ষ্ম ফটো ফিনিশ
আধুনিক অলিম্পিক ইতিহাসে সবচেয়ে সূক্ষ্ম ব্যবধানে নির্ধারিত হয় এবারের ১০০ মিটার স্প্রিন্টের ফাইনালের বিজয়ী। জ্যামাইকার কিশান টম্পসনকে এক সেকেন্ডের পাঁচ হাজার ভাগের এক ভাগের ব্যবধানে হারান যুক্তরাষ্ট্রের নোয়াহ লাইলস। যেটি নির্ধারিত হয় ফটো ফিনিশে। লাইলস এসেছিলেন ট্রেবল জয়ের আশা নিয়ে। তবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২০০ মিটারে ব্রোঞ্জ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাকে। আর ৪ গুণিতক ১০০ মিটার রিলে দৌড়ে অংশই নিতে পারেননি।
ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথ
অলিম্পিকে ক্রিকেট ফিরবে ২০২৮ সালের লস অ্যাঞ্জেলেস গেমসে। তবে ভারত-পাকিস্তানের প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজ দেখা গেছে এবারও। অলিম্পিকে পাকিস্তানের ব্যক্তিগত ইভেন্টে প্রথম কোনো সোনা এনে দিয়েছেন জ্যাভেলিন থ্রোয়ার আরশাদ নাদিম। অলিম্পিক রেকর্ড ৯২.৯৭ মিটার থ্রো করেন তিনি। টোকিওতে সোনা জেতা ভারতের নীরাজ চোপড়া পান রুপা। নাদিম পরে বলেন, ‘ক্রিকেট ম্যাচ বা অন্য খেলায় দুই দেশের দ্বৈরথ আছে। তবে আমাদের খেলা দেখা এবং আমাদের অনুসরণ করাটা তরুণদের জন্য ভালো। দুই দেশের জন্যই এটি ইতিবাচক।’
দুই কোরিয়ার সেলফি
উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে ‘ঐক্য’ ব্যাপারটা ঠিক নিয়মিত ঘটনা নয়। টেবিল টেনিসের মিশ্র ইভেন্টে পদক বিতরণীর মঞ্চে দুই দলের খেলোয়াড়দের সেলফিতে প্রকাশ পায় সেটিই। সোনা জেতা চীনের পেছনে থেকে রুপা জেতে উত্তর কোরিয়া, ব্রোঞ্জ জেতে দক্ষিণ কোরিয়া। গ্রুপ সেলফি তোলেন দক্ষিণ কোরিয়ার লিম জং-হুন। দক্ষিণ কোরিয়ার বহুল পঠিত দৈনিক পত্রিকা জংঅ্যাং ইলবো লেখে, ‘দুই কোরিয়ার পতাকা আর স্যামসাং ফোন নিয়ে একটি সেলফি।’
ট্রিউয়ের স্বপ্নযাত্রা
১৪ বছর বয়সেই সোনা জেতেন অস্ট্রেলিয়ার স্কেটবোর্ডিংয়ের নতুন তারকা অ্যারিসা ট্রিউ। দেশটির সর্বকনিষ্ঠ সোনাজয়ী এখন তিনিই। সে ইভেন্টে ছিলেন চীনের ১১ বছর বয়সী ঝেং হাওহাও-ও। যিনি অলিম্পিকে অংশ নেওয়া দেশটির সর্বকনিষ্ঠ প্রতিযোগী। ট্রিউ বলেন, ‘অলিম্পিকে স্কেটবোর্ডিং করা আর বাড়ির আশপাশে স্কেটবোর্ডিং করার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। এখানে শুধু দর্শক বেশি।’
লিঙ্গ বিতর্ক এবং খেলিফের স্বর্ণ
‘আমার অংশ নেওয়ার পুরো যোগ্যতা আছে, আমি অন্য যেকোনো নারীর মতোই। আমার জন্ম নারী হিসেবে, বেড়ে উঠেছি নারী হিসেবে, অংশও নিয়েছি নারী হিসেবে’- কথাগুলো আলজেরিয়ার বক্সার ইমানে খেলিফের। সোনা জেতার পর সমালোচকদের ‘আক্রমণের’ জবাব দিতে এসব কথা বলেন তিনি। লিঙ্গ পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েছেন বলে তাইওয়ানের লিন ইউ-টিংয়ের মতো খেলিফকে গত বছরের ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। এবার অংশ নেন দুজনই।
লোপেজের ‘হাই ফাইভ’
একই ইভেন্টে টানা পাঁচটি সোনা- এর আগে অলিম্পিক এমন কিছু দেখেনি। এবার সে কীর্তিই গড়লেন কিউবার কুস্তিগির মিহাইন লোপেজ। তিনি ছাড়িয়ে যান কার্ল লুইস ও মাইকেল ফেলপসের মতো কিংবদন্তিকে। শিগগির ৪২ পূর্ণ করবেন লোপেজ। টানা পঞ্চম সোনা জয়ের পর ম্যাটের মধ্যে নিজের জুতাজোড়া রেখে ইঙ্গিত দেন, এটাই শেষ! এরপর বলেন, ‘কুস্তিই আমার জীবনের ভালোবাসা। এক জীবনের ভালোবাসা।’
‘দ্য নেম ইজ ইউসুফ দিকেচ’
রাতারাতি সামাজিক মাধ্যমে ঝড় তুলেছিলেন তুরস্কের শুটার ইউসুফ দিকেচ। শুটিংয়ের সময় চোখে সাধারণ চশমা, পরনে টি-শার্ট আর বাঁ হাত পকেটে গোঁজা-৫১ বছর বয়সী দিকেচের এ স্টাইল ছড়িয়ে পড়ে দ্রুতই। পিস্তলটি ছাড়া অন্যান্য শুটারদের মতো সে অর্থে বিশেষায়িত কোনো সরঞ্জামই ছিল না তার। জেমস বন্ডের অনুসরণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একজন দিকেচকে নিয়ে পোস্ট করেন, ‘দ্য নেম ইজ দিকেচ। ইউসুফ দিকেচ।’